ঢাকামুখী মানুষের ঢল অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত কাম্য নয়

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মুখেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ মানুষ ঢাকামুখী। রোববার থেকে দেশের সব গার্মেন্ট-কারখানা খোলা, এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে শনিবার ঢাকামুখী মানুষের এই ঢল নামে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে লকডাউন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাধারণ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দিন-রাত সচেতন করে চলেছে। অপরদিকে সরকারি ছুটির পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহণ চলাচল। এ পরিস্থিতিতে করোনা আতঙ্ক মাথায় নিয়েই সবাই ছুটেছেন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এমনটি ঘটার নেপথ্যে রয়েছে, পূর্বঘোষিত সরকারি ছুটি ৯ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হলেও গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কারখানার শ্রমিকের জন্য ছুটি না বাড়ানো। বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মুখে সংশ্লিষ্টদের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। . গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে ঘরে অবস্থানের নির্দেশনার মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নারী-পুরুষের হাঁটা মিছিল এবং ফেরিতে শত শত মানুষের গাদাগাদি করে পদ্মা পার হওয়ার ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ভুক্তভোগীরা জানান, কারখানার মালিক ফোন করে কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন ৫ তারিখ কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না। ফলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঢাকামুখী হতে হয় মানুষকে। বিশ্লেষকদের মতে, মালিকদের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। বিবেচনাহীন এমন সিদ্ধান্তে লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছেন। ঢাকামুখী এই লাখ জনতার দায়িত্ব এখন কে নেবেন- এমন প্রশ্নও উঠেছে। এর ফলে সরকার ঘোষিত 'সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত' বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ সার্বিক সচেতনতা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। সরকার যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পোশাক খাতে আগেই ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে গার্মেন্ট মালিকদের এই সিদ্ধান্ত ন্যক্কারজনক বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। জানা গেছে, শনিবার রাতে জরুরি সেবার সঙ্গে নিয়োজিতরা ছাড়া রাজধানীকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের আগমন-বহির্গমন বন্ধে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। পরে ১১ এপ্রিল সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি পর্যন্ত গার্মেন্ট কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অপরদিকে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যে প্রকাশিত গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণ ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত দুদিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ছুটি বাড়ানোর দাবি উঠেছিল বিভিন্ন ফোরামে। সরকার অবশেষে সেই পথেই হাঁটল। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, সরকারি নির্দেশে অনেক কারখানা খোলা আছে এখনো। কর্মস্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সেখানে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থানের কথা বলা হয়েছিল। বেতন নির্দিষ্ট সময়ে তারা পেয়ে যাবেন এমন কথাও বলা হয়েছে। যারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন পান তাদের তো বেতন নিতে আসার প্রয়োজন নেই। যথাসময়ে তাদের বেতন অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। কিন্তু শনিবারের পরিস্থিতি অনুযায়ী সার্বিকভাবে এটা স্পষ্ট যে, গাদাগাদি করে ঢাকায় ফেরার ঘটনা সাংঘাতিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে সবাইকে- যা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। সর্বোপরি, প্রায় প্রতিদিনই যেখানে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষের মৃতু্য ঘটছে, কোনো কোনো এলাকা কিংবা বাড়ি লকডাউন করা হচ্ছে, সেখানে শিল্প-কারখানা, প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ প্রত্যেকেরই কর্তব্য হওয়া দরকার সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ঘরে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, খাদ্য সহায়তা, শিল্প খাতে প্রণোদনা, ছুটি বাড়ানোসহ সরকার তথা দেশের নীতিনির্ধারণী মহল যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সময়োপযোগী। এ সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করা গেলে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তা ইতিবাচক হবে এমনটি আশা করা যায়। মনে রাখা উচিত, এই দুর্বিপাকে যেকোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।