সাধারণ রোগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা

চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সারাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ১২ জনের মৃতু্য এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১১৭ জন হলেও ভীতসন্ত্রস্ত চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ বেশ আগেই সাধারণ চিকিৎসাসেবা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, এতে করে বিনা চিকিৎসায় অন্য রোগীর মৃতু্য বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে- যা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য মতে, বেশির ভাগ চিকিৎসক তাদের ব্যক্তিগত চেম্বার সপ্তাহ দেড়েক আগেই বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের কর্মস্থলে চিকিৎসকদের উপস্থিতিও বেশ সীমিত। তারা নিজেদের মধ্যে শর্টটাইম শিডিউল করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে কিডনি-হৃদরোগসহ অন্যান্য অসুখে গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ অবস্থায় করোনার চেয়ে সাধারণ রোগে আক্রান্ত অনেক বেশি মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারে বলে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। আমরা মনে করি, এমন আশঙ্কার বিষয় অমূলক নয়। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। সারা বিশ্বই কার্যত থমকে গেছে। সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা। এমতাবস্থায় একদিকে করোনার কারণে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন, আবার যদি সাধারণ চিকিৎসাবাধাগ্রস্ত হয় তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। উলেস্নখ্য যে, সারাদেশে সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার এই নাজুক চিত্রে খোদ সরকারের নীতিনির্ধারক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেননা, এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে গোটা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বলা দরকার, খোদ প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেন। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও চিকিৎসকদের একাধিকবার এ আহ্বান জানান। তবে তার এ অনুরোধে কোনো কাজ না হওয়ায় এবার তিনি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রীতিমতো ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি যেকোনো মূল্যে সাধারণ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পার্সোনাল প্রটেকশন ইকু্যইপমেন্ট (পিপিই) না থাকার অজুহাতে চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ সাধারণ চিকিৎসাসেবা প্রদানের দায়িত্ব থেকে সরে গেলেও এখন এ সরঞ্জামাদির সরবরাহ বাড়ার পর তারা নানা তালবাহানা শুরু করেছে। এমনকি অনেকে নিজের অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালের রুটিন দায়িত্ব পালনেও ফাঁকি দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত পরিতাপের। কারণ এ অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী এবং এতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়লে সারাদেশে সাধারণ চিকিৎসাসেবা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে- যা আমলে নেওয়া অপরিহার্য। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। একদিকে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা উঠে আসছে, অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকের দাবি, করোনা আতঙ্কে ছোটখাটো রোগ নিয়ে মানুষ সাধারণত হাসপাতালে আসছে না। যদিও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর ফিরে যাওয়ার অভিযোগসহ চিকিৎসাসেবার নানা নাজুক অবস্থার কথা খোদ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে।