আলুর উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভাতের বিকল্প হিসেবে আলুর কথা এ সময় খুব ভাবা হতো। বলা হতো 'ভাতের পরিবর্তে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান।' খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে আলুর কদর অনেক বেশি। আলুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেড রয়েছে। আলুর সাহায্যে নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। তরকারিতে আলু একটি অপরিহার্য দ্রব্য। অথচ প্রতিবছরই আলু নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দেশের কৃষকদের। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চলতি বছর দেশে ৪ দশমিক ৭১ লাখ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। যা আলুর উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ লাখ ৭১ হেক্টর জমিতে ৯২ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন করা হয়েছিল। হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে স্বাধীনতার পরে আলু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ গুণ। এ ছাড়া আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে সপ্তম। এ সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের কাতারে। স্বীকৃতিটি দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এ ধরনের সংবাদ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে আলু উৎপাদন বাড়লেও কৃষক ন্যায্য দাম পায় না। দেশে আলু সংরক্ষণের পর্যাপ্ত হিমাগার নেই। এর আগে কৃষকরা দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। দেশে আলুর বাম্পার ফলন হলেও একদিকে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাচ্ছে না অন্যদিকে ক্রেতারাও কম দামে আলু কিনতে পারছে না। এর সুফল ভোগ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এটা উৎপাদন ও বিক্রিকেন্দ্রিক চিরাচরিত চিত্র। এই চিত্র বদলাতে হবে। মনে রাখতে হবে উৎপাদনে বিস্ময়কর সাফল্যই কেবল নয়, আলু এখন দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসলও। অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও। করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে 'দিন আনি দিন খাই' মানুষকে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তার সঙ্গে ১০ কেজি করে আলু যোগ করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কৃষিমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ত্রাণের সঙ্গে আলু যোগ করার কথা বলেন। এখন দেশের অনেক স্থানেই ত্রাণ বিতরণকালে চাল, ডাল, তেলের সঙ্গে আলু দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কৃষিতে নিয়োজিত জনশক্তির সংখ্যা ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তবুও কৃষিতে শ্রমশক্তির সংখ্যা কমেনি। এটা আমাদের বিরাট সাফল্য। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী ৪৬ দশমিক ৬১ শতাংশ খানা (পরিবার) কৃষিনির্ভর। এ থেকে বোঝা যায় দেশের অর্থনীতিতে কৃষি বিরাট অবদান রাখছে। প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। দেশে বর্তমানে নানা ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এগুলো হলো- আউশ, আমন, বোরো, আলু, গম ও পাট। কৃষি ক্ষেত্রে দেশ আরও এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশাই করছি। কৃষকরা যাতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। পাশাপাশি আলু যেহেতু পচনশীল পণ্য তাই পর্যাপ্ত হিমাগার তৈরি করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।