সরকারি সহায়তা নাগরিকদের মাঝে সুষ্ঠু বণ্টন জরুরি

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

জুবায়ের আহমেদ
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভয়ংকর থাবায় অসহায় মানুষ। চীন থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাস চীন, ইতালি, স্পেন, আমেরিকাসহ বহু দেশে তান্ডব লীলা চালানোর মধ্যেই বাংলাদেশেও গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। দুই হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে। সারা বিশ্বব্যাপী এক লাখ ষাট হাজারেরও বেশি মানুষের মৃতু্য ঘটেছে। ইতালি, স্পেন আমেরিকায় চরম মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ না পেয়েও বহু মানুষের মৃতু্য হচ্ছে। স্বয়ং চিকিৎসকরাও হার মানছেন মরণঘাতী করোনার কাছে। করোনাভাইরাসের জন্য এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। প্রতিরোধই একমাত্র উপায় হিসেবে আক্রান্ত দেশগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা শুরু থেকেই নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানালেও সময় থাকতে সতর্ক না হওয়ার কারণেই বহু দেশে লাশের মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশে ১৮ কোটি কিংবা তারও বেশি নাগরিকদের বসবাস। সেই সঙ্গে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই দরিদ্র শ্রেণির, যারা দিন এনে দিন খায় কিংবা স্বল্প বেতনের চাকরি করে। অধিক জনসংখ্যা হওয়ার কারণে বিভাগীয় শহরগুলো ছাড়াও প্রায় জেলা শহরে কলোনি-বস্তিসহ ঘনবসতি বিদ্যমান। অধিকাংশ মানুষই বাংলাদেশে অসচেতন, যাদের মাথার ওপর বাজ পড়ার আগ মুহূর্তেও বিশ্বাস করতে চায় না যে কিছু একটা আঘাত করছে তার মাথায়। সর্বস্তরের শিক্ষার সুপ্রভাব না পড়া এবং ধর্মান্ধতাসহ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য ছোঁয়াছে প্রকৃতির করোনাভাইরাস সাক্ষাৎ যমদূতের মতো, সেদিকে তাদের ভাবনা নেই। যদিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানেই মৃতু্য নয়, আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হচ্ছেন, তবে অসচেতনতার কারণে রোগটি শরীরে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার ফলে চিকিৎসার অভাবেই মৃতু্যকে আলিঙ্গন করার ভয়টাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। করোনা সংকটকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করেছে। সচেতন নাগরিকরা সরকারি নির্দেশনা মতে গৃহে অবস্থান করা শুরু করলেও অসচেতন এবং দরিদ্র শ্রেণির নাগরিকরা জীবিকার তাগিদে কিংবা স্বভাবজাত কারণেই হোক পূর্বের মতোই রাস্তাঘাটে অবস্থান করছে। মানুষের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাবারের কষ্টের কথা ভেবে ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের ব্যানারে দরিদ্র মানুষের জন্য সাধ্যমত সহায়তা করছেন। সরকারও সব জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা সামাজিক সংগঠনগুলো যে সহায়তা করছে তা অসামর্থ্যবান মানুষের হাতে পৌঁছালেও সরকারি উদ্যোগে মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি চালসহ যেসব সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেখানে হানা দিচ্ছে দায়িত্ববান কিছু অসাধু ব্যক্তি। ইতোমধ্যে সারাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় সরকারি সহায়তা ব্যক্তিগতভাবে কুক্ষিগত করার অভিযোগে দোষীদের কাছে থেকে সরকারি ত্রাণ উদ্ধারসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি, খোলা চোখে দেখা যায় না, এমন একটি ভাইরাসের প্রভাবে অসহায় মানব জাতি। মানুষের ক্ষমতা তুচ্ছ, তা আরো একবার প্রমাণ হয়েছে। রাজা-বাদশা-প্রজা সবাই প্রাণ ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। সারা বিশ্বব্যাপী সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছে মানুষ। সাধ্যমত একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে দায়িত্ববান কিছু ব্যক্তি গরিবের হক মেরে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এদের নেই মৃতু্যর ভয়। করোনা মহামারিতে এরা নিজেদের অপরাজেয় মনে করে পকেট ভারী করতে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক চোর-ডাকাতরাও বেশ তৎপর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মূলধারার মিডিয়ার কল্যাণে বেশ কয়েকটি চুরি-ডাকাতির খবর ও ভিডিও দেশের মানুষ দেখেছে। এটিএম বুথ, বিকাশসহ একাধিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমেও প্রতারকরা নানা ফাঁদ পাতছে অর্থলুটের জন্য। চুরি-বাটপাড়িসহ যে কোনো অসাধু কাজ ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত- পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে অপরাধজনক কাজ হলেও সারা বছরই চুর-বাটপাড়রা তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করে। দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়াসহ খাদ্য কষ্টে পতিত হলেও অসাধু ব্যক্তিদের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। সরকারপ্রধান যেখানে প্রদত্ত সহায়তাকে ত্রাণ নয়, উপহার বলছেন, সেখানে দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী আশাবাদী হলেও সুষ্ঠু বণ্টন না হওয়ায় বহু অসহায় মানুষ সরকারের প্রদত্ত উপহার পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় দেশব্যাপী সব মানুষের বিদ্যমান ক্রান্তিকালে যারা দরিদ্র-অসহায় নাগরিকদের অধিকার লুণ্ঠন করবে তাদের ধৃত ও শাস্তির আওতায় আনাসহ সরকারি উপহার সব দরিদ্র ও অসহায় নাগরিকদের মাঝে সুষ্ঠু বণ্টন এবং সুযোগ হলে জনসমাগমের মাধ্যমে নয়, সরাসরি মানুষের ঘরে ঘরে উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেয়া জরুরি। জুবায়ের আহমেদ: কলাম লেখক