ডেঙ্গুর হানা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে পুরোবাংলাদেশ করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, দেশে যেমন দ্রম্নত বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, তেমনি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার বাসায় থাকার কঠোর নির্দেশনাও দিয়েছে। আর এমন পরিস্থিতির মধ্যে হানা দিয়েছে মশাবাহিত আরেক আতঙ্ক 'ডেঙ্গু'। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করা জরুরি। উলেস্নখ্য, গত বছর দেশে রেকর্ডসংখ্যক এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এ বছরের শুরু থেকেই সেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আবারও দেখা দিয়েছে, যদিও এর ভয়াবহতা এখনো সেভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তবু সতর্কতা ও কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। আমলে নেওয়া দরকার, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋতু বদলজনিত কারণে এখন যেহেতু মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে, আবহাওয়া বদলাচ্ছে, তাই শুষ্ক স্থানে আগে থেকে পেড়ে রাখা এডিস মশার ডিম থেকে লার্ভা তৈরি হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতিতে। তাই করোনার ভয়াবহতার ভেতর এখন থেকেই এডিসসহ সব ধরনের মশা নিধন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। যা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় বলা প্রয়োজন যে, এডিস ছাড়াও কিউলেক্স মশার ঘনত্ব গত ডিসেম্বর মাস থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। গত বছর মশা নিধনে প্রথমে রাজধানী ও পরে দেশজুড়ে ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত সে কার্যক্রম শুরুই হয়নি এমনটিও জানা গেছে। প্রসঙ্গত আমরা এটাও বলতে চাই, কিছুদিনও আগেও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছিল এমন তথ্য, নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জলাশয়গুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলেও আলোচনায় আসে। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনাভাইরাসের জন্য রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে ভেজানো হলেও এই পানি ফুটপাথে বা পথের দু'পাশে পড়ছে না। আর ডেঙ্গু মশা যেহেতু পরিষ্কার পানিতে ডিম ফোটায়, ফলে করোনাভাইরাসের কারণে শহরের যেসব এলাকায় নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখে শ্রমিকরা চলে গেছেন, সেসব জায়গায় ঝড়বৃষ্টির পরের অবস্থা কী তা জানতে সিটি করপোরেশনগুলোর এখনই ভূমিকা নেয়া জরুরি। পাশাপাশি ডেঙ্গু মশা ডিম পাড়তে পারে বা বংশবিস্তার ঘটাতে পারে, এমন জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন করা এই মুহূর্তে ভীষণ দরকার হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের উলিস্নখিত বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া আমলে নেয়া দরকার, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসতে শুরু করেছেন হাসপাতালগুলোতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ কন্ট্রোল ইমার্জেন্সি ও অপারেশন্স সেন্টার থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮৯ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২৮৩ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ছয়জন। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৯৯ জন, ফেব্রম্নয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ আর এপ্রিলে এ পর্যন্ত ১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মৃতু্য নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশসহ সারাবিশ্বই যখন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে আরেকটি মরণব্যাধি 'ডেঙ্গু' দরজায় কড়া নাড়ছে যা অত্যন্ত আশঙ্কার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুর রোগী ধীরে ধীরে পাওয়া যাচ্ছে, মশা নিধন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে এখন থেকেই ঢাকাসহ দেশজুড়ে। ফলে যে কোনো মূল্যে মশা নিধন কার্যক্রম গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় মশার উপদ্রব রোধ করা না গেলে পরিস্থিতি আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে- এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।