আসন্ন রমজান ও পণ্যমূল্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আসছে পবিত্র রমজান। রমজানকে পুঁজি করে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মতো এবারো সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি তদারকি করতে এবার মাঠে নামলেন বাণিজ্য সচিব। সোমবার রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বাণিজ্য সচিব বাজার অভিযানে সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা যথাযথভাবে প্রদর্শন করা, প্রদর্শনকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি না করা, ক্রয়কৃত মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় মূল্য সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে বলা হয়। পাশাপাশি আসন্ন রমজান ও চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে কেন্দ্র করে অতি মুনাফা থেকে বিরত থাকতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানানো হয়। কেউ যদি অনৈতিকভাবে দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। এই উদ্যোগ ইতিবাচক। এ কথা সত্য, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে চাল, ডাল, তেল, আদা, পেঁয়াজসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে মাছ মাংসের দামও। গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা। মুরগি প্রতি পিসের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। রোজায় ইফতারের অন্যতম উপকরণ ছোলার দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মোটা মসুর ডালের দাম আরেক দফা বেড়ে ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৭৫-৮০ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল ২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ডাবলি, মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। বাজারে এখন চায়না আদা ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৫০-১৬০ টাকা। দেশি আদা প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন কেজিতে ৪০-৬০ টাকা বেড়েছে। রমজান শুরু হলে এই দাম আরো বাড়বে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। করোনার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ কর্মহীন। তাদের কাছে জমানো টাকা নেই। তারা কীভাবে এই উচ্চমূল্যের বাজারে বেঁচে থাকবে? ভাবতে বিস্ময় লাগে যে এ দেশের অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে দাম বাড়িয়ে দেয়, দাম বাড়িয়ে দেয় রমজান এলেই। এর দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে তারা কতটা অমানবিক। পবিত্র রমজানের সময়ে প্রতি বছর আমরা একই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে থাকি। যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, দেশের অসৎ ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এরা রমজান মানে না করোনাভাইরাস কালেও জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজারসন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হওয়া যায় সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তাদের অতি লোভী মানসিকতার কারণেই দেশের সাধারণ জনগণ তাদের কাছে জিম্মি। অবাক ব্যাপার যে, বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো ধরনের সরবরাহ সংকট নেই, তারপরেও হুহু করে দাম বাড়ছে। বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই হতাশাজনক চিত্র। সরকারের উচিত এই দুর্যোগকালে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। সামনে সময় আরো কঠিন হতে পারে এই কথা মাথায় রেখে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।