নতুন করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে ছড়িয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। কার্যত বিশ্ব থমকে গেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে। মানুষ ঘরবন্দির মতো জীবন কাটাচ্ছে। কারোনাভাইরাসে আক্রান্ত করেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষকে, মৃতু্য ঘটিয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার। এ অবস্থায় যখন চরম বিপর্যয় আসতে এখনো বাকি বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- তখন পরিস্থিতি আরো কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা যেমন অনুধাবন করা জরুরি, তেমনিভাবে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের করণীয় নির্ধারণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করার বিকল্প নেই। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলোতে গত কয়েকদিনে মৃতু্যর সংখ্যা বৃদ্ধির গতি কমে আসায় বিভিন্ন দেশ অবরুদ্ধ অবস্থা শিথিল করতে শুরু করেছে। আর এই পরিস্থিতিতেই এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস।
উলেস্নখ্য, তিনি সোমবার জেনিভায় সংস্থার সদর দপ্তরে বলেছেন যে, 'বিশ্বাস করুন, সবচেয়ে খারাপ অবস্থার এখনো বাকি। আসুন একসঙ্গে সেই ট্র্যাজেডি ঠেকাই। এটি এমনই এক ভাইরাস- যা এখনো মানুষ বুঝতে পারছে না।' এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, সার্স, মার্সের প্রাদুর্ভাব পেরিয়ে আসা পৃথিবী হিমশিম খাচ্ছে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস মোকাবিলায়, যা প্রায় পাঁচ মাস আগে চীনের উহানে প্রথম মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। চীন থেকে একপর্যায়ে তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য দেশগুলোতেও, একপর্যায়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে কোভিড-১৯ রোগ নাম দিয়ে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করে। মূলত নতুন এ রোগের টিকা কিংবা প্রতিষেধক না থাকায় আক্রান্তের সংস্পর্শ এড়ানোই রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ বলে দেশে দেশে লকডাউন জারি হওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়ে দুনিয়ার অর্ধেক মানুষ। লকডাউনে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় যে ইউরোপে ইতোমধ্যে এক লাখ মানুষের মৃতু্য হয়েছে, সেই মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ নানা বিধি-নিষেধ তুলতে শুরু করেছে। লকডাউন তুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেও।
আমরা মনে করি, যে সংকটের মুখোমুখি আজ পুরো বিশ্ব, সেখানে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতনতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক বলছেন, 'যারা লকডাউন শিথিল করছেন, তাদের আমরা আগেই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা এখনো বলছি, বিধি-নিষেধ শিথিল করে কোনো দেশই এই মহামারি থামাতে পারবে না।' ফলে এই বিষয়গুলো যেমন ভাবতে হবে, তেমনি দূরত্ব নিশ্চিত করা, সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ স্বাস্থ্য নির্দেশনা মানতে হবে যে কোনো মূল্যে। এই সংকট মোকাবিলা যথাযথভাবে না করতে পারলে পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়ানক হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে এই সংকটে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি সেখানে বাংলাদেশেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে লাশের সারি, ইতোমধ্যে মৃতু্যর সংখ্যা একশ অতিক্রম করেছ। এই পরিস্থিতিতে দূরত্ব মেনে চলছে না অনেকে- এমন অভিযোগ যেমন এসেছে, তেমনিভাবে অনেক স্থানে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, পর্যাপ্ত ত্রাণ না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় আলোচনায় এসেছে। লোকজন অহেতুক ঘোরাফেরা করছে এমনটিও সামনে এসেছে। এ অবস্থায় যখন চরম বিপর্যয় আসতে এখনো বাকি বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- তখন তা আমলে নিয়ে দেশের সংশ্লিষ্টদেরও প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা অপরিহার্য বলেই আমরা মনে করি। .
সর্বোপরি বলতে চাই, নতুন এ করোনাভাইরাস এমন এক অদৃশ্য শত্রম্ন যার বিরুদ্ধে সবাইকে লড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে যেমন ব্যক্তি সচেতনতা জরুরি, তেমনি নিম্নআয়ের মানুষসহ অভাবীরা যেন খাবার পায় সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। সামগ্রিক চিত্র আমলে নিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর হতে হবে। অকারণে কেউ যেন ঘোরাফেরা না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য বিষয়। একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্নতা এই সময়ে অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গত কারণেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।