দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে বিশ্ব

সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বই বিপর্যস্ত, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের যে ঝুঁকির বিষয় সামনে আসছে তা কতটা ভয়ানক বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয় তা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই যত দ্রম্নত সম্ভব বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের এখনই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির বিষয়টি ভাবতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশ্বকে। এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির বিষয়টি মোকাবিলা করা সহজ কাজ নয়, তবু এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে সর্বাত্মক প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। উলেস্নখ্য, এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডবিস্নউএফপি) সতর্ক করে বলেছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদেরও বিষয়টি আমলে নেওয়া জরুরি। কেননা, এ দেশে অনেক পরিবার নিত্য অভাব অনটনকে মোকাবিলা করেই জীবনযাপন করে। ফলে দেশের সংশ্লিষ্টরাও যত দ্রম্নত সম্ভব দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির বিষয়টিকে সামনে রেখে সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এমনটি কাম্য। বলা দরকার, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পর্যটন থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া, রেমিট্যান্সে ধস, ভ্রমণ এবং অন্যান্য কার্যক্রমে নানামাত্রিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট অভিঘাত চলতি বছর নতুন করে আরও ১৩ কোটি মানুষকে তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে- এমনটি বলছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রতিবেদন। এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ এখনই এ তালিকায় আছে বলেও জানিয়েছে তারা। আমরা বলতে চাই, সব মিলিয়ে চলতি বছরই বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ২৬ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে মঙ্গলবার ডবিস্নউএফপি যে ধারণা দিয়েছে তা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া বিপর্যয় এড়াতে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন ডবিস্নউএফপির প্রধান। আমরাও মনে করি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি- এমন অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে বিশ্ব নেতৃত্বকে পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এ ছাড়া এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন- সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনলাইনে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে ডবিস্নউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসেইন বলেছেন, 'সুতার ওপর ঝুলে থাকা কোটি কোটি মানুষের জন্য কোভিড-১৯ ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। যদি আমরা তা না করি তাহলে চড়া মূল্য দিতে হবে, ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে বিশ্বকে। অনেকে প্রাণ হারাবে, অসংখ্য মানুষ জীবিকা হারাবে। এ ছাড়া বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির গবেষণা, মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণবিষয়ক এ পরিচালক বলেছেন, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের সুরক্ষায় শিগগিরই পদক্ষেপ না নিতে পারলে বিপদ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ফলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব এক ভয়ঙ্কর সময়ের মুখোমুখি আর এটি সামাল দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কেননা, এর অন্যথা হলে বিশ্বকে ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে- যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাস মহামারির আগেই যারা তীব্র ক্ষুধার্তের তালিকায় ছিলেন তাদের বেশিরভাগই সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বাসিন্দা। এ ছাড়া মরুভূমির পঙ্গপাল পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শস্য ও ফসল নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ায় সেখানকার অসংখ্য মানুষও এখন ডবিস্নউএফপির খাদ্য কর্মসূচির ওপর নির্ভরশীল। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে করে কার্যত পুরো বিশ্বই এক ভয়ঙ্কর সময়ের মুখোমুখি। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি অনুধাবন করা এবং আগামী দিনের ভয়াবহতাকে আমলে নিয়ে এখনই সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ অপরিহার্য। একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, অন্যদিকে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি- ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্টরা দ্রম্নত উদ্যোগ নেবে এমনটি প্রত্যাশিত।