শিক্ষা হোক উন্মুক্ত গবেষণা ও শান্তিময়

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। কথায় আছে, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। সুন্দর সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ জাতিগঠনে তাই শিক্ষিত জনসমষ্টির বিকল্প নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড- উক্ত নীতিবাক্যের সঙ্গে পরিচয় নেই এমন শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা সাধারণ মানুষ খুঁজে পাওয়াটাই দুষ্কর। মেরুদন্ড যেমন প্রতিটি প্রাণীর সুস্থ ও সুন্দর থাকার প্রধান অঙ্গ, তেমনি একটি জাতিকে সুস্থ ও সুন্দর করতে শিক্ষাই তার প্রধান অঙ্গ। শিক্ষা একটি জাতিকে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের করে সঠিক ও সুন্দর পথে পরিচালনা করে। সে জাতিকে পৌঁছে দেয় উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে। অথচ আমাদের দেশের নামকরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বদা রাজনৈতিক অস্থিরতা উচ্চশিক্ষা গ্রহণকে একদিকে প্রভাবিত করছে। রাজনীতিচর্চার নাম করে ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ত্রাস সৃষ্টি করে, ফলে সাধারণ ছাত্ররা সুফল প্রাপ্তির বদলে ভয়ের মধ্যেই থাকে। ছাত্র রাজনীতির বিষক্রিয়া প্রমাণিত হয়েছে বারবার। আবার শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে কারোর ভ্রম্নক্ষেপ নিয়মিত পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গদবাঁধা নিয়মে গবেষণাহীন শিক্ষা জাতিগত উন্নয়নে কতটা ভূমিকা পালন করছে তা বিশ্লেষণের সুযোগ রেখে দিয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিশ্বে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে গবেষণামূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রযুক্তি ব্যবহার ও কারিগরি সুকৌশলে আধুনিক বিশ্বের হাতে হাত রেখে চলতে হলে প্রযুক্তি ও প্রকৌশলে এগিয়ে যেতেই হবে। আমাদের দেশের সব প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, তা ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়েরর্ যাংকিং নাম করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় চোখ মেলালেই দেখা যায়। জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এক অনন্য মডেলে রূপান্তরিত হলেও শিক্ষারক্ষেত্রে আমাদের পিছুপা থেকেই গেছে। বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণের ঢেউ শিক্ষা খাতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। নানা নির্বাচন ও বিভিন্ন সংকটপূর্ণ অবস্থা উপলক্ষে একসঙ্গে দেশের সব স্থানে পরীক্ষা পিছিয়ে সেশনজট তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রূপান্তর হয়েছে। যার ফলে ছাত্রদের নির্দিষ্ট সময়ে ফল প্রাপ্তিসহ নানা অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। অন্যদিকে শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক সমীকরণ ও বিভেদ, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানের অভাব- এসব নানামুখী সমস্যার কারণে শিক্ষার প্রতি এক না বলা অনীহা পরিলক্ষিত হয়। যার প্রভাব সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষার এমন লাগামহীন অবস্থার ফলে বেড়েই চলেছে সামাজিক অপরাধ ও অস্থিরতা। ফলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ পর্যায় থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি ও শিক্ষকতাকে নিজের কর্ম না ভেবে জাতিকে লালন করার দায়িত্ব গুরুদায়িত্ব পালনই হোক শিক্ষকতার মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে শিক্ষার্জনের পাশাপাশি শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করাও ছাত্রদের নৈতিক দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকে সুসংগঠিত ও জবাবদিহিমূলক ছাত্ররাজনীতির প্রচলন করতে হবে। কেননা দেশের পরবর্তী কর্ণধর এই নবীন ছাত্রসমাজ। তারাই যদি রাজনীতিকে নিজেদের অপছন্দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাহলে ভবিষ্যতে নেতৃত্বহীন হয়ে পড়বে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। উন্মুক্ত শিক্ষাক্ষেত্র প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য অধিকার। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্তরে উন্মুক্ত ও স্বাধীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন জরুরি। কেননা শিক্ষাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশই পারে শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে শিক্ষাসংক্রান্ত নানা সমস্যা চিন্তিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষাকে কীভাবে রাজনীতিমুক্ত ও স্বাধীন করা যায় তার জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে সব সংকটপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সেশনজট ও সঠিক সময়ে কোর্স শেষ করার নিশ্চয়তা প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান করতে হবে। যাতে ছাত্ররা কোনো বাধাবিঘ্ন ছাড়াই উজ্জীবিতভাবে আগ্রহের সহিত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। কেননা একমাত্র শিক্ষাই পারে সব মানবতাকে মুক্তি দিতে। আল-মাহমুদ সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সাতক্ষীরা