পিপিই: ব্যবহার ও বাস্তবতা

হাঁচি-কাশি থাকলে জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে এর আগে এ ধরনের মহামারি ছিল না, তাই চিকিৎসক ছাড়া পিপিই সম্পর্কে অন্য মানুষের মধ্যে কোনো ধারণা ছিল না বললেই চলে।

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

মো. শফিকুল ইসলাম
পারসনাল প্রটেকশন ইকু্যইপমেন্ট (পিপিই) নামে বিভিন্ন তথ্য সমাজে বিরাজমান। পিপিই মানে অনেকেই মনে করছেন গাউন পরে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা। কেউ কেউ মনে করেন পিপিইর ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু তা সত্য নয়। কারণ কর্তৃপক্ষের মতে পিপিইর কোনো ঘাটতি নেই। পিপিই কে পাবে, কে পাবে না, এটা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই এটার ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। পিপিই সাধারণত মানুষকে রোগ বা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। পূর্বে চিকিৎসক ব্যতিত সবার কাছে পিপিই সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। বর্তমানে করোনার কারণে ব্যাপক আলোচনায় পিপিই। পিপিই বলতে- হেলমেট, ইয়ার পস্নাগ, সেফটি সু, সেফটি বেল্ট, মাস্ক, অ্যাপ্রোন, গাউন, গস্নাভস গগলস ইত্যাদি সরঞ্জামকে বোঝায়। ইনফেকসিয়াস রোগ সুরক্ষার জন্য চিকিৎসক, সহকারী, নার্স ও ক্লিনারদের পিপিই গাউন বা পোশাক পরিধান একান্ত জরুরি। কিন্তু পিপিই নিয়ে সমাজে অনেকেই সমালোচনায় পড়েছে। কারণ যাদের দরকার ছিল না, তারপরও তাদের পিপিই পরিধান করে অফিস করতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও কিছু কিছু জায়গায় বাবুর্চি, গেটম্যান, নিরাপত্তা কর্মী পিপিই পরে আছে। আবার অন্যদিকে পিপিইর জন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন, রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যতিত অন্য কেউ পিপিই গাউন পরলেই তাকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা করার জন্য পাঠানো হবে। বিশ্বে পিপিইর সংকট রয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন না থাকেলও বিভিন্ন পেশার মানুষ পিপিই চাওয়ায় কর্তৃপক্ষ কিছুটা মুশকিলে পড়েছে। তবে এর সঠিক ব্যবহার না হলেও ভবিষ্যতে পিপিই সমস্যা মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পিপিই ব্যবহারের কিছু কৌশল দিয়েছে যেমন পিপিইর যৌক্তিক ও সঠিক ব্যবহার, পিপিইর প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নিয়ে আসা, যা পিপিই আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার, সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাপস্নাই চেইনের সমন্বয় সাধন ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পিপিই ব্যবহারের কিছু নির্দেশনা- রেপিড রেসপন্স টিম (আরপিটি): রেপিড রেসপন্স টিমের সদস্যরা যদি করোনায় আক্রান্ত বা সন্দেহ হয়েছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে তবে তারা মাস্ক ব্যবহার করবে, অন্যথায় না। অ্যাম্বুলেন্স ও পরিবহণ : অ্যাম্বুলেন্সর চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীরা মেডিকেল মাস্ক, গস্নাভস, গাউন, চোখ সুরক্ষা ইত্যাদি দ্রব্যাদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহারের সুযোগ পাবে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালকের কোন পিপিই দরকার নেই। তারা কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখবে। অ্যাম্বুলেন্স পরিষ্কারকের মেডিকেল মাস্ক, মোটা গস্নাভস, গাউন, সেফটি সু, চোখ সুরক্ষা দ্রব্যাদি অবশ্যই প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা ও স্ক্যানিং এলাকা: যারা প্রথম স্টাফ হিসেবে স্ক্যানিংয়ের কাজ করে তাদের পিপিই দরকার নেই, শুধু দূরত্ব বজায় রাখলেই হবে। আর যারা দিত্বীয় পর্যায়ে স্ক্যানিং করে তারা মেডিকেল মাস্ক, গাউন পরবে। যারা এই এলাকায় পরিষ্কারের কাজ করবে তাদের সব ধরনের পিপিই দরকার। যারা অন্য যে কোনো ব্যবস্থাপনা কাজের সঙ্গে জড়িত তারা যদি কোনো করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে না আসে তাদের কোনো পিপিই দরকার নেই। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রকৌশলীরা বিশেষ মাস্ক ও গস্নাভস ব্যবহার করবে। স্বাস্থ্য কর্মীরা: যারা সরাসরি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয় তাদের ক্ষেত্রে মেডিকেল মাস্ক, মোটা গস্নাভস, গাউন, চোখ সুরক্ষা সরঞ্জাম ইত্যাদি অবশ্যই জরুরি। পাবলিক পেস্নস: স্কুল, কলেজ, বাজার,শপিং মল ও ট্রেন এসব ক্ষেত্রে চলার সময় আমাদের কোনো পিপিই দরকার নেই। যদি কেউ করোনার লক্ষণ বহন করে তবে তাকে অবশ্য মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যদের থেকে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ল্যাবরেটরি: চিকিৎসক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, নার্স ও অন্যান্য সেবাকর্মী যারা করোনা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসবে, যারা লাশ প্যাকেজিং করবে, আইসিইউর সব কর্মকর্তা, যারা লাশ দাফনের কাজ করবে, তাদের অবশ্যই সম্পূর্ণ পিপিই পরতে হবে- যেমন মেডিকেল মাস্ক, মোটা ডিসপজিবল গস্নাভস, গাউন, চোখ সুরক্ষা সরঞ্জাম ইত্যাদি। \হরোগী কক্ষ ও ভিজিটরস : যারা এই কক্ষে দায়িত্ব পালন করবে তাদের সবাইকে মেডিকেল মাস্ক, মোটা গস্নাভস, গাউন, চোখ সুরক্ষা সরঞ্জাম দিতে হবে। ভিজিটর যারা তাদেরও মেডিকেল মাস্ক, গস্নাভস,গাউন পরতে হবে। সংবাদকর্মী : যদি সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং মর্গের মতো স্থানে দায়িত্ব পালন করে, তাদের ডিসপজিবল জুতা, মাস্ক, সুরক্ষিত গস্নাভস, সু্যট পরাও একান্ত জরুরি। তবে প্রিন্ট মিডিয়ার ফটোগ্রাফার এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার টিভি সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। তাই তাদের সর্বদা স্বাস্থ্য সুরক্ষা পোশাক প্রয়োজন। \হডেস্কসেবা প্রদানকারী, এমিগ্রশেন কাউন্টার, কাস্টমস বিমানবন্দরে নিরাপত্তা কর্মী, তাপমাত্রা স্ক্যানিং কর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রোগী নিবন্ধনকারী, চিকিৎসক ও নার্স যারা শুধু ইন্টার্ভিউ নেবে, ব্যাংকার, দোকান কর্মী, সংবাদপত্র বিলির কাজে যুক্ত হকার তাদের ক্ষেত্রে ট্রিপল লেয়ার মাস্ক ও গস্নাভস প্রয়োজন। পিপিই ব্যবহারের ক্ষেত্রে মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, অন্যথায় এর সঠিক ব্যবহার হবে না। হাঁচি, কাশি থাকলে জনসাধারণের মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে এর আগে এ ধরনের মহামারি ছিল না, তাই চিকিৎসক ছাড়া পিপিই সম্পর্কে অন্য মানুষের মধ্যে কোনো ধারণা ছিল না বললেই চলে। এ লেখাটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাকে বিবেচনা করে লেখা হয়েছে। পিপিই সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ছিল। অপ্রয়োজনে পিপিই ব্যবহার করা এক ধরনের নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। অযথা পিপিই ব্যবহার করলে অর্থ ও সম্পদের অপচয় হয়। শুধু শুধু স্পেশসু্যট পিপিই করা এক ধরনের অন্যায়। স্পেশসু্যট পিপিই ব্যবহারের নিয়ম না জেনে ব্যবহার করলে বরং ক্ষতি হতে পারে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকতে পারে। কারণ এটা ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা। তাই তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে পিপিই ব্যবহার করা উচিত। কারণ তারা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী, বিদু্যৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহের কাজে যারা নিয়জিত, তাদেরও প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, আইসলোশন ইউনিটে যেতে হয়। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পিপিই ব্যবস্থাপনার কাজটি করা উচিত। যা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করবে বলে বিশ্বাস করি। মো. শফিকুল ইসলাম : পিএইচডি ফেলো, জংনান ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ল' উহান, চীন এবং শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। ংযধভরয়@লশশহরঁ.বফঁ.নফ