স্বাগত মাহে রমজান সিয়ামসাধনায় জীবন পরিশুদ্ধ হোক

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মুসলমানদের সংযম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা। দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার পর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে সারা বিশ্বে মুসলমানের কাছে সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস এই পবিত্র মাহে রমজান ফিরে আসে। বছর ঘুরে আসা পবিত্র মাহে রমজান মাসের শুভাগমনকে আমরা স্বাগত জানাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, কু-প্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস পবিত্র রমজান মাস। পুণ্যময় এই মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে, হৃদয়কে প্রশান্ত করে। বিশ্ব মুসলিমকে সংযত-সুন্দর জীবন-যাপনের শিক্ষা দেয়। মুসলিম নর-নারীর কাছে রোজার মাস অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত। মহান আলস্নাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আশায় মুসলমানরা শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে এই মাসকে। মহান আলস্নাহ এই মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য। আর তাই পবিত্র এই মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। আর এই পবিত্র মাসে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয়, এর পাশাপাশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের জন্য। রমজানের শিক্ষা হলো সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। নিজের এবং অন্যের ওপর জুলুম করা, অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, পবিত্র রমজানে অনেকেই বেখেয়াল থাকেন। এছাড়া রোজার মাস এলেই দেখা যায় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই মাসে বেশি মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে মরিয়া হয়ে ওঠে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এবারে বিশ্বে মুসলমানের পবিত্রতম রমজান মাস এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে সমাগত। কেননা করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের যে ধরনের কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে রোজা পালন করতে হবে, তার নজির ইতিহাসে বিরল। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মুসলমানরা এবারে আত্মীয়-পরিজন-প্রতিবেশীদের নিয়ে সন্ধ্যায় ইফতার করতে পারবেন না এবং মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন না। বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পবিত্র রমজানে তারাবির নামাজ মসজিদের পরিবর্তে ঘরে পড়ার জন্য মুসলিস্নদের আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এই নির্দেশনা না মানলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলেও জানা গেছে। এ বছর রমজানে সারা দেশের মসজিদগুলোতে ইমাম-খতিব মিলিয়ে মোট ১২ জন তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রত্যেকের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করার স্বার্থে পবিত্র রমজান উপলক্ষে কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান ইফতার মাহফিলের আয়োজন কিংবা যোগদান করতে পারবেন না। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে সিয়াম সাধানায় রত থাকতে হবে। এছাড়া আমরা বলতে চাই, রমজানকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মতো এবারো সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন এমনটি সামনে এসেছে। ফলে নিত্যপণ্যের মূল্য যেন অযৌক্তিভাবে বেড়ে না যায় এই বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। উলেস্নখ্য যে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বই কার্যত থমকে গেছে। বিশ্বে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে, মৃতু্য হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষের। বাংলাদেশেও মৃতু্য একশ ছাড়িয়ে গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজারের বেশি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ স্বাস্থ্য নির্দেশনা মানতে আহ্বান জানিয়েছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রমজানের তাৎপর্য প্রত্যেকেরই গভীরভাবে উপলব্ধি করা এবং সেই মোতাবেক আমল করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সিয়াম সাধনার শিক্ষা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করতে হবে। তবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। বলা দরকার, এবারে করোনা পরিস্থিতির ভেতর পবিত্র এই মাসে বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে সিয়াম সাধনায় রত থাকতে হবে। কেননা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এক মাসের সংযম সাধনার ভেতর দিয়ে প্রত্যেকের জীবন পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে উঠুক; সমাজ হয়ে উঠুক মানবিকতাপূর্ণ- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।