বিদেশে বাংলাদেশির প্রাণহানি নিরাপদ জীবনই প্রত্যাশিত

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী এক মহাআতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। পৃথিবীব্যাপী এক মহাবিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে এই ভাইরাস। দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ে ইউরোপ-আমেরিকার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হলেও গত ১০ দিনে এই অঞ্চলের অবস্থা ভালো নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানের অবস্থা খারাপের দিকে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই তিন দেশে মৃতু্যর হার সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতু্যর হার দ্রম্নত বাড়ছে, যার ফলে মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। সরকারি তালিকার বাইরেও জ্বর কাশি গলা ব্যথা শ্বাসকষ্ট নিয়ে দুই শোর বেশি মানুষ মারা গেছে। এর পাশাপাশি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩০১ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৮ জন, যুক্তরাজ্যে ৭৯ জন, সৌদি আরবে ১৫ জন, ইতালিতে ৮ জন, কানাডায় ৬ জন, স্পেনে ৫ জন, কাতারে ৪ জন। এছাড়া সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কেনিয়া, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন (২২ এপ্রিল ২০২০)। যা অত্যন্ত বেদনাজনক। এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে বিদেশি নাগরিকদের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশের নাগরিকরা এখানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এই দুঃসময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঙালিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই ক্রান্তিকালে অনেক বাঙালি ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না। বিদেশে শ্রমিকদের জীবন যাপন পদ্ধতিও খুবই মানবেতর। তারা এক রুমে ১০ থেকে ১২ জন গাদাগাদি করে থাকে। ফলে তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক শ্রমিক দেশে ফেরত আসতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। অনেক দেশ ফেরত পাঠানোর কথাও বলেছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াসহ মূলত যথাযথ কাগজপত্রের জন্য অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশের কর্মীরা পড়েছে বিপাকে। এর মধ্যে ইতিবাচক খবর হচ্ছে, বাহরাইন সরকার অনিয়মিত হয়ে পড়া ৫৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের অনিয়মিত হয়ে পড়া ৫০ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এই দুর্যোগকালে বাহরাইনের ইতিবাচক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, কেবল বাহরাইন নয়, যে সব দেশে অবৈধভাবে অভিবাসীরা রয়েছেন, যারা বৈধতার চেষ্টা করেও পাননি। উপরন্তু নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে জেলের ঘানি টেনেছেন। অনেকের মৃতু্যও হয়েছে। তারপরেও বৈধতা পাননি। পৃথিবীর এই করোনা দুর্যোগকালে অন্যান্য দেশেরও এই ধরনের মানবিক পদক্ষেপ নেয়া উচিত। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য এই মানবিক সত্য সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। এ কথা অকপটে স্বীকার করতেই হবে, করোনাভাইরাসের কারণে এখন যে বিশ্বব্যাপী বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নিতে হবে অভিবাসীসমৃদ্ধ সব দেশকেই। বিদেশি কর্মীদের নিয়মিতভাবে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা কিংবা তাদের দেশে ফেরার সুযোগ করে দিতে হবে। কেবল তাই নয়, যারা অনাহারে আছেন তাদের ত্রাণ দিতে হবে, দিতে হবে বিশেষ ভাতা। তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া কিংবা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারেরও করণীয় রয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা শঙ্কামুক্ত ও নিরাপদ থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যারা প্রবাসে করোনাভাইরাসে মারা গিয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।