পাঠক মত

শিশুশ্রম বন্ধে স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিশুদের হাসি আমাদের সমাজে আনন্দের জোয়ার এনে দেয়, তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি আকাশের চেয়ে বিশাল, সমুদ্রের চেয়েও গভীর, সুন্দর একটি সংসার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীর। একটি শিশু একটি সমাজের রঙিন ঘুড়ি। মানুষের জন্য সে হবে রাহবার, তার চারিত্রিক গুণাবলির মাধ্যমে সত্যের আলো ছড়াবে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মানুষের হৃদয়ে। অন্ধকার সমাজে প্রজ্বলিত করবে মুক্তির আলো, পথ ভোলা মানুষের দেখাবে মুক্তির পথ, হতাশায় ডুবন্ত জাতিকে তুলে আনবে আশার আলোর রঙিন ঠিকানায়। শিশুরা পবিত্র, নিষ্পাপ, অনেকে শিশুদের ফেরেশতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেক গুণীজন শিশুদের নিয়ে লিখেছেন অনেক উক্তি, যা লাভ করেছে অমরত্ব। যেমন- শিশুদের মন স্বর্গীয় ফুলের মতোই সুন্দর। শিশুরা মাটির মতোই সুন্দর, এদের যে পাত্রে রাখা যাবে তারা তেমন রূপই ধারণ করবে। আজ সেই শিশুদের একটি অংশ আমাদের অবহেলায়, হেলায়, হেলায়, তারা শিশু বয়সে তাদের শৈশবকে হত্যা করে চলছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। এরা গরিব অসহায় অতিদরিদ্র পিতৃ-মাত্রহীন অধিকার বঞ্চিত শিশু। অথচ সব শিশুর স্বাভাবিক ও সুন্দর শৈশবের নিশ্চয়তা জন্মগত অধিকার কাগজ-কলমে থাকলেও বাস্তবতা সত্যি করুণ। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা শুধু শ্রমেই নয়- বরং বিপুলসংখ্যক শিশু সমাজবিরোধী চক্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, প্রতিনিয়তই শুধু বেঁচে থাকার নিদারুণ অভিলাষে, দু'মুঠো ভাত খাওয়ার প্রত্যাশায়। কোথা থেকে, কত কালে, কত সালে এসেছিল এসব শিশুশ্রমিক বা পথশিশু জানি না, শুধু জানি পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পথপ্রান্তে এই পুষ্পগুলো নিঃশব্দে ঝরে যায়। যে শিশুরা আগামী দিনের স্বপ্ন, সার্থকতা, তাদের জীবনের পরিণতি করুণ। বেদনাসিক্ত দুঃখ-কষ্ট বঞ্চনার কত অভিশাপ। প্রতিটি মানুষই চায় তার জীবন হোক সুন্দর এবং মুহূর্তগুলো হক আনন্দদায়ক। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আমাদের প্রকৃতি যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর মানুষের জীবন, মানুষের স্বপ্ন। তবুও কিছু স্বপ্ন হয়ে যায় কেন যেন- রংহীন, বর্ণহীন। শিশুদের দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে অনেক বছর আগে ব্যথাতুর হৃদয়ে কবি সুকান্তকে বলতে হয়েছিল, 'সবচেয়ে খেতে ভালো লাগে মানুষের রক্ত'। মানুষের অর্থলালসার রাজ্যে ফুলের মতো পবিত্র শিশুদেরও মুক্তি নেই যেন। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সমাজের পরিবারগুলো তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে সন্তানদের আগলে রাখতে বা অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে। এদিকে দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের চিত্র উল্টো। দরিদ্র ও অসচ্ছল পরিবারের সুবিধা বঞ্চিত প্রায় শিশুরাই নিতান্ত পেটের দায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোকে তাদের নিত্য-নৈমিত্তিক পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসের শিকার সবচেয়ে বেশি এই শিশুরা। শিশুদের কলকারখানায় নিয়োগ করে একশ্রেণির স্বার্থান্ধ মানুষ প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। আইন এবং ফাইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাজনরা তাদের কাজ হাসিল করে। ন্যায্য প্রাপ্য মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। যারা পথশিশু বা শিশুশ্রমিক তাদের যেন প্রকৃতি নেই, পরিবেশ নেই, অবুঝ শৈশব নেই, ভবিষ্যৎ চিন্তা নেই, পরিবারের অর্থ যোগান এবং নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করতে যেন তারা ব্যস্ত। আজ এমনভাবে বেড়ে উঠছে তারা যা ভবিষ্যৎ জাতির জন্য ভয় বা বিপদ। যা আমাদের দেশ ও জাতির কাম্য নয়। শাকিলা আক্তার শিক্ষার্থী আব্দুল মান্নান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া