পাঠক মত

ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশে প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের তৃতীয় সপ্তাহের পর থেকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। ঢাকা মহানগরতো বটেই নারায়ণগঞ্জ গাজীপুর মাদারীপুর, ভোলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল আজ করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপে বেসামাল হয়ে পড়েছে। প্রায় সবকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে রোগীদের চিকিৎসার জন্য। উদ্‌বেগ দিনে দিনে বাড়ছে। শতাধিক চিকিৎসক আজ করোনা আক্রান্ত। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পাঁচ চিকিৎসক অসুস্থ। এর মধ্যে এক চিকিৎসক দম্পতি করোনা রোগগ্রস্ত। স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। করোনাভাইরাস বিস্তারের নানাদিক উঠে এসেছে। আক্রান্ত মানুষের মৃতু্যর সংখ্যা অগণন। প্রতিরোধ প্রস্তুতি চলছে। পৃথিবীজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। নানা তথ্য অনুসন্ধানে একশ ভাগ সফলতা আসেনি। করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ নামে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই ভাইরাস দীর্ঘদিন অজ্ঞাত ছিল। চীনে অনেক মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়ে করোনা ভাইরাস একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করে। করোনাভাইরাসের অন্য নাম ২০১৯-তে পাওয়া এনসিওডি বা নভেল করোনাভাইরাস। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্য থেকে ছয় প্রজাতি ক্রিয়াশীল ছিল: নতুন একটি যোগ হয়েছে। ২০০২ সালে চীনা সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটিরি সিনড্রোম। ১। ভাইরাসে ৭৭৪ জনের মৃতু্য এবং ৮০৯৮ জনের সংক্রমণ হয়েছিল তা ছিল করোনাভাইরাসের আর এক প্রাদুর্ভাব। করোনাভাইরাসের বিভিন্ন নাম ছিল- (১) চায়না ভাইরাস (২) করোনা ভাইরাস, (৩) রহস্য ভাইরাস। ২০২০ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস লক্ষণ চিহ্নিত করে এ রোগের নাম দেয় কোভিড- ১৯ (করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জ্বর, কাশি, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। আস্তে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। ওষুধ প্রতিরোধী শক্তি যোগাতে পারে না। সাধারণ জ্বর থেকে এ ভাইরাস সংক্রমণ শুরু। কাশিসহ শ্বাসকষ্ট চলতে থাকে। রোগীকে হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়। চারজনের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছে। সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকে এ রোগ মৃতু্য পর্যন্ত গড়াতে পারে। ধারণা করা হয় কোনো বন্যপ্রাণীর শরীর থেকে এসে মানবশরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হতে শুরু করেছে। এমন হতে পারে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয় এমন এক বাজার থেকে এ রোগের উৎপত্তি ঘটে থাকতে পারে। ঠান্ডা লাগা থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার বিভিন্ন পর্যায় পর্যন্ত করোনাভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এটি এখন মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেই উদ্বেগ বেশি। মুরগি, বাদর, খরগোস, সাপ, এমনকি বেগুলা তিমি করোনাভাইরাসের বাহক হতে পারে। এ মুহূর্ত পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বাদুর অনেক রোগের বাহক। চীনের হর্সশু প্রজাতির বানরের সাথে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আধিকাংশ করোনাভাইরাস জীবাণু বিপজ্জনক মাত্রায় থাকে না। দুই একটি যা রয়েছে তা মৃতু্যকে নিশ্চিত করছে। নিউমোনিয়ার শেষ পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে এই ভাইরাস। জনবসতি, জনসমাবেশ এবং একাধিক মানবমানবীর করমর্দন, আলিঙ্গন, চুমু বা ছোঁয়াছুঁয়ি করোনাভাইরাস সংক্রমণ উৎসাহিত করে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে কতো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করেছে তার যথাযথ পরিসংখ্যান কারো হাতে নেই। বিজ্ঞানীরা এক অভিনব তথ্য দিয়েছেন- করোনাভাইরাস দেহকোষের মধ্যে নীরব থেকে কোষ অভ্যন্তরের গঠন পরিবর্তন করে কোষকে অকার্যকর করে থাকে। করোনাভাইরাস বার বার তার চরিত্র বদলায়। চীন ও ইতালির করোনা ভাইরাসের চরিত্র আলাদা। আমাদের দেশে ৮ মার্চ ইতালিফেরত এক রোগীর মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তার পরে দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এই ভাইরাস অকার্যককর করে দেওয়ার নানা প্রস্তুতি চলছে। বিজ্ঞানীরা বলছে প্রতিরোধ টিকা, ভ্যাক্সিন কার্যকর হতে আরও সময় লাগবে। আমরা আশা করি বিজ্ঞানীরা অন্য রোগ সংক্রমণ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী বিশেষ লক্ষণ না বহন করে অন্য মানুষকে করোনাভাইরাস সহজে উপহার দিতে পারে। বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। নিত্যনতুন যন্ত্র আবিষ্কার হচ্ছে। আমরা যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছি। আমাদের মানবিকতা হারাচ্ছে। স্বার্থপরতা প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন আর নিজেকে জাহিরের মতো কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি অবলীলায়। প্রশ্ন উঠতে পারে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতোটা প্রস্তুত? হাত ধোওয়া সাবান, মাস্ক এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসকরা তাদের মেধা, শ্রম ও ভালোবাসায় শুশ্রূষার কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনসমাগম বেশি হয় এমন সব জায়গা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বেঁচে থাকা জরুরি। বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসা সবকিছু জয় করতে চায়। পারেও। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে চাই। তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে বিশেষ সেল খোলা শুরু করা হয়। জেলা শহরগুলোতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। আমরা লক্ষ করি বিশেষ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সুবিধা ও চিকিৎসকের উপস্থিতি না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। একজন ছাত্রের আকস্মিক মৃতু্য ঘটে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন চিকিৎসকের অবহেলার কারণে কারো মৃতু্য হলে সহ্য করবেন না। প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে চিকিৎসক আনবেন। তিনি চিকিৎসকদের আন্তরিকভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান। ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করার পর লকডাউন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় গাড়ি আসা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মানুষের চলাচলের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। তবুও মানুষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চলাচল করতে চায়। দোকানপাট খোলা ও বন্ধের নতুন সময়সূচি চালু হয়েছে। শপিংমল, হোটেল ও বাজার বন্ধ রয়েছে। সীমিত আকারে ব্যাংক, ডাকঘর খোলা রয়েছে। কিছু বিষয়ে এখন গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সব দক্ষ প্রতিনিধি নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি সময়ের দাবি মাত্র। রাজনৈতিক, সামাজিক, চিকিৎসক ফোরাম ও স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন জরুরি। ঘরে ঘরে স্যাম্পল টেস্ট ও খাদ্য বিতরণ হয়তো সম্ভব নয়। সম্ভব এলাকাভিত্তিক ভলানটিয়ার মনোনীত করে ক্রাশ কার্যক্রম গ্রহণ করা। যেহেতু বিশাল বাহিনী গড়া সম্ভব নয়। দু-চারজন বিশেষ পোশাক পরে কিছু কাজ করতে পারে। পেছনে থাকবে অভিজ্ঞ দল। পরিকল্পনা ও প্রয়োগ দরকার। শত্রম্ন করোনাভাইরাস ধেয়ে আসছে এখনই নামতে হবে পথে। \হচীনে সচেতনতার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে। ইতালি ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য এখনো ঝুঁকির মুখে। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আমেরিকা। আমরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৮ জন এবং মারা গেছে ১৪০ জন। আমাদের দেশে সচেতনতার প্রয়োজন। চিকিৎসকদের বিশেষ পোশাক পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখতে হবে। \হস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত লোকজনের চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ কোনো সুফল বয়ে আনছে না। সারাদিন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঘুরছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বাজারে, শপিংমল চা দোকান ঘিরে আড্ডা অব্যাহত আছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে মানুষ চলছে। করোনাভাইরাস ট্রান্সফার কমিউনিটি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এখনই সকল শক্তি দিয়ে লাগাম টেনে ধরতে হবে। একটি সংবাদ থেকে জানা গেল কল্যাণপুর আবাসিক এলাকায় কোয়ার্টারের বাসিন্দারা সরকারের কাজের ওপর ভরসা না করে নিজেরাই সিটি করপোরেশন থেকে মশক নিধন ওষুধ, জীবাণুনাশক এলাকায় ছিটিয়ে প্রতিরোধ কাজ করে যাচ্ছে। কাঁচাবাজার সরবরাহের জন্য ভ্যানগাড়ি এনে সমন্বিতভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করছে। এক পরিবারের এক সদস্য পালাক্রমে বাইরে যাচ্ছে, অন্যরাও তাদের অনুসরণ করছে। জরুরি ব্যবস্থা জারির বিকল্প নেই। সাধারণ অনুরোধ এখন পর্যন্ত কোনো কাজে আসছে না। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণ মানুষ। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিশ্ব পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ বিষয় ভেবে তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে। তার চারপাশে চালচোর, সুযোগসন্ধানীরা ভিড় করছে। তিনি এদের সতর্ক করে দিয়েছেন। কঠোর শাস্তিও হচ্ছে। ঘরের মানুষগুলো বাইরে গিয়ে করোনাভাইরাস ঘরে না নিয়ে আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইরের বন্ধু, বাজারের ঠোংগা, ব্যাগ, সবজি, কাঁচামালের মধ্যে ঘরে করোনাভাইরাস না ঢুকতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। কমিউনিটি সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা সচেতন থাকব। ভয়াবহ এই যুদ্ধে আমাদের জয় হবেই। সাইফুজ্জামান প্রাবন্ধিক, কবি, উপকীপার জাতীয় জাদুঘর