মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

মানব পাচারে জড়িতদের আইনের আওতায় আনুন

নতুনধারা
  ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এখন মানব পাচারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা। প্রায়ই তারা ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। এর একাংশ সাগরে ডুবে প্রাণও হারাচ্ছে। এরপরও যে মানব পাচার থেমে নেই। মালয়েশিয়ায় ট্রলার ভেড়াতে না পেরে দেড় মাস পর প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গার টেকনাফে ফিরে আসার ঘটনা তারই প্রমাণ বহন করছে। রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী মিয়ানমারের অধিবাসী। বাংলাদেশ তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল। যারা সমুদ্রপথে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের প্রতি বাংলাদেশের কোনো দায়িত্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু মানবিক কারণে টেকনাফের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় সাগরে ভাসমান ট্রলার থেকে মালয়েশিয়াফেরত ৪ শতাধিক রোহিঙ্গাকে ইউএনএইচসিআরের কাছে হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড। বুধবার রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা জাহাজপুরা ঘাট থেকে এসব রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে নানা প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার আড়াইটার দিকে ইউএনএইচসিআরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 'উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা একটি জাহাজে করে কিছুদিন আগে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাত্রা করেছিল। কিন্তু পরে দেশটিতে ভিড়তে না পারায় বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। উদ্ধার হওয়া ৩৯৬ জন রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা। এর মধ্যে ১৫০ জন পুরুষ, ১৮২ জন মহিলা এবং ৬৪টি শিশু রয়েছে। দেড় মাস আগে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গাবোঝাই একটি ট্রলার সাগরপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। মালয়েশিয়া উপকূলে পৌঁছলেও তারা কড়াকড়ির কারণে ভিড়তে পারেনি। সাগরে অবস্থানের সময় রোহিঙ্গাদের কয়েকজন মারা যায়। পরে ট্রলারটি বাংলাদেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার একটি নিয়মিত ঘটনা। রোহিঙ্গারাই মূলত এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তাদের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল খবর পৌঁছাচ্ছে। মানবিক কারণে সাগর থেকে ৪০০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হলেও এ জন্য তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া উচিত। উদ্ধারকৃতদেরও শাস্তির আওতায় আনার কথা ভাবতে হবে।

মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল-স্থল-আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশিরভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। হারাচ্ছে জীবন সমুদ্রসলিলে; কিংবা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের গহিন অরণ্যের গণকবরে মিলছে তাদের ঠাঁই। সেই অগস্ত্য যাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পরা, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাই মানব পাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। সব স্তরে সরকার, উন্নয়ন অংশীদার, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, সুশীলসমাজ, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানব পাচারের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানব পাচার এবং চোরাচালান উভয়ই বৈশ্বিক ঘটনা। এটি বাংলাদেশের জন্য এখন হুমকিস্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ট্রাফিকিং ইন পার্সন (টিআইপি) রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। এই অভিবাসীরা পাচারকারীদের শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

এদিকে, জীবিকার অন্বেষণে গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নারী গৃহকর্মীরা যৌন নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়াবহ শিকার হচ্ছে। তাদের অনেকেই কোনোমতে বিধ্বস্ত জীবন নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। যেসব তরুণ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকায় যাচ্ছে ভাগ্যান্বেষণে, তারা তাদের দালালদের লোকজনের জিম্মিতে পরিণত হচ্ছে। তাদের বিদেশের ভূমিতে বন্দি রেখে, তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের বস্ন্যাকমেইল করে মুক্তিপণ হিসাবে টাকা-পয়সা নেয়া হচ্ছে। তাদের অনেককে মেরে ফেলাও হচ্ছে। মানব পাচার এখন আদম বেপারিদের মানব ডাকাতির বিনা পুঁজির হাজার ভাগ লাভের বৃত্তিতে পরিণত হয়েছে। এসব আদম বেপারি আর দালালের দৌরাত্ম্য এমন সীমাহীন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তাদের হাতে নির্যাতিত, নিগৃহীত, নিঃস্ব হচ্ছে যারা, তারা দেশে এসেও তাদের বিরুদ্ধে মুখ পর্যন্ত খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এ তথ্য অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে ঠাঁই পায়নি। এমন খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। অবৈধপথে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সরকার বিদেশগামী জনশক্তিকে সুরক্ষিত করবে- এটাই কাম্য।

দিলীপ কুমার

আগরওয়ালা, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<97417 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1