দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সক্রিয় বাজার সিন্ডিকেট

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান। রমজানকে পুঁজি করে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মতো এবারো সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাস ও চলমান করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে সুযোগ নিচ্ছে কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী। প্রতি বছর ব্যবসায়ীরা একই কাজ করে। দেশের দুঃসময়ে করোনার মধ্যেও এবার পাইকারি, আমদানিকারক, আড়তদার ও মিল মালিকদের কব্জায় রয়েছে রমজানের বাজার। দোকানগুলোতে নেই মূল্যতালিকা। মানছে না আইন। ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দিচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ৬টি টিম অভিযান চালিয়ে এর প্রমাণ পায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, গোদারাঘাট বাজার, ভাটারা বাজার, উত্তর বাড্ডা বাজার, দক্ষিণ বাড্ডা বাজার, গুলশান-১ কাঁচাবাজারে এ অভিযান চালায় তারা। এ সময় মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, অনৈতিকভাবে বেশি দামে নিত্যপণ্য বিক্রি করাসহ যথানিয়মে ভোক্তা আইন পালন না করায় ১১ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান চলাকালে হ্যান্ডমাইকে চাল, ডাল, তেল, আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা যথাযথভাবে প্রদর্শন করা এবং প্রদর্শনকৃত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি না করা, করোনাকে কেন্দ্র করে অতি মুনাফা গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে মাছ, মাংস, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবজির দাম। কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। পাশাপাশি দাম বেড়েছে সব ধরনের মুরগির। আদার দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে রসুনের দাম। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ বাজার। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে এ পণ্যটি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দাম বেড়ে যাওয়া মসুর ডালের দাম রোজার আগে আবার বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে চিনির দামও। এর সঙ্গে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অ্যাংকর, ছোলা ও মুগ ডাল। রোজায় চাহিদা বেড়ে যাওয়া আদা, রসুন, সয়াবিন তেলার দাম আগেই বেড়েছিল। হঠাৎ করে চিনি ও মসুর ডালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহকারীরা চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কমেছে সরবরাহ। মসুর ডালের ক্ষেত্রে একই ঘটনা। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রোজার আগে ব্যবসায়ীদের পণ্যের দাম বাড়ানোকে অমানবিক বলছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, মানুষ আতঙ্কে থাকলেও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। এমন অমানবিক কাজ করলেও এই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবেও সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি ও মসুর ডালের দাম বেড়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে এখন চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা- যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। বাজারে সবচেয়ে দাম বেড়েছে শসা ও বেগুনের। প্রতি কেজি বেগুন (প্রকারভেদে) ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভাবতে বিস্ময় লাগে যে, এ দেশের অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে দাম বাড়িয়ে দেয়, দাম বাড়িয়ে দেয় রমজান এলেই। এর দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তারা কতটা অমানবিক। আমরা মনে করি, দেশের অসৎ ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এরা রমজান মানে না করোনাভাইরাস কালেও জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজার সন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হওয়া যায় সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তাদের অতি লোভী মানসিকতার কারণেই দেশের সাধারণ জনগণ তাদের কাছে জিম্মি। অবাক ব্যাপার যে, বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো ধরনের সরবরাহ সংকট নেই, তারপরেও হুহু করে দাম বাড়ছে। সামনে সময় আরো কঠিন হতে পারে। তাই বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।