কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সারা বিশ্ব এক বিপর্যস্ত ও ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২৯ লাখ মানুষ, মারা গেছে ২ লাখের বেশি। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ১৪৫ জন মারা গেছে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪১৬ জন। সঙ্গত কারণেই কারোনাভাইরাস কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বৃদ্ধির কারণ ওঠে এসেছে। ক্লাস্টার (একই এলাকায় কম দূরত্বে একাধিক আক্রান্ত) নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন) মেশিন সংকটের কারণে প্রয়োজন অনুযায়ী রোগী শনাক্তকরণ পরীক্ষার (টেস্ট) পরিধি বাড়াতে না পারা এবং অঘোষিত লকডাউনের মাধ্যমে সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে নানা প্রতিবন্ধকতাসহ ৮ কারণে দেশে মরণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ গত দুই সপ্তাহ ধরে উচ্চহারে বাড়ছে বলে জানা গেছে। আমরা মনে করি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে কারণগুলোর জন্য বাড়ছে তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এমন আশঙ্কার বিষয়ও উঠে এসেছে সামনে, যে সব কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ উচ্চহারে বাড়ছে, এসব সংকট দ্রম্নত কাটিয়ে উঠতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নেবে- যা দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সামাল দেওয়া একেবারেই অসম্ভব। আর তাই এ পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই যে কোনোভাবে এর লাগাম টেনে ধরা জরুরি বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা বলতে চাই, বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তাকে সামনে রেখে যত দ্রম্নত সম্ভব উদ্যোগ নিতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতনতা এবং করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন অপরিহার্য। প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লকডাউন ও ক্লাস্টার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং টেস্টের পরিধি বাড়াতে না পারার বাইরেও আরও যে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের পার্সোনাল প্রটেকশন ইকু্যইপমেন্ট (পিপিই) সংকট এবং এর মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকা, রোগীর তথ্য গোপনের প্রবণতা, করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর এ সংশ্লিষ্ট সতর্কতা মেনে চলার ক্ষেত্রে অনীহা, করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ভোগান্তি এবং সর্বোপরি জীবন ধারণের জন্য নূ্যনতম খাদ্য জোগানের অনিশ্চয়তা। আমরা বলতে চাই, যখন চিহ্নিত সংকটের সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ছাড়া করোনার সংক্রমণের লাফিয়ে বাড়া ঠেকানো দুষ্কর হবে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা- তখন সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস্টার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণেই মূলত গত কয়েক দিনে করোনা সংক্রমণ উচ্চহারে বাড়ছে। ফলে এই বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, সংকটগুলোকে সামনে রেখে যত দ্রম্নত সম্ভব সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে মহামারির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষা বাড়ানোর ব্যাপারে বারবার তাগিদ দিলেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সরঞ্জাম ও দক্ষ জনবল সংকটের কারণে দেশে তা সম্ভব হয়নি- এই বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোগী হতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের অন্তত চারটি ক্লাস্টার এলাকা নিয়ন্ত্রণে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সামান্য অংশও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা মনে করি, এই ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। সারাবিশ্বই কার্যত করোনার কারণে থমকে গেছে। এই মাহমারি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি ভিন্ন কোনো পথ নেই। সঙ্গত কারণেই যে সংকটগুলো সামনে আসছে তা আমলে নিয়ে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে।