যথাযথ পদক্ষেপ নিন

থামছে না মানবপাচার

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানবপাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। সাগরপথে থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়ায় মানবপাচার হচ্ছে। এখন মানবপাচারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা। প্রায়ই তারা ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। এর একাংশ সাগরে ডুবে প্রাণও হারাচ্ছে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। এরপরও যে মানবপাচার থেমে নেই, মালয়েশিয়ায় ট্রলার ভেড়াতে না পেরে দেড় মাস পর প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গার টেকনাফে ফিরে আসার ঘটনা তারই প্রমাণ। তারা মনে করে, কোনোভাবে একবার থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় যেতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান। মাসে লাখ টাকা উপার্জন করার যাবে এমন মরীচিকার পেছনে ছুটে সাগর পথে বিদেশে পাড়ি জামাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন লোকজন। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর এই মানবপাচারকারীদের মূল লক্ষ্য এখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতারা বলেছেন, উন্নত জীবনের আশা এবং বিয়ে প্রলোভনে তরুণীরা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন। দালালরা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁদে ফেলছে। মানবপাচার রোধ করা না গেলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূতি ক্ষুণ্ন হবে এ কথা সহজেই বলা যায়। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, কক্সবাজার থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে যাওয়ার পথে ১১ ফেব্রম্নয়ারি ও ১৫ এপ্রিল ৪৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। আর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭৬ জনকে। এ ছাড়া গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলার বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে এমন খবরে সীমান্ত ও উপকূলে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরা। পাশপাশি তাদের ঠেকাতে পাহারা বসিয়েছে জেলে ও স্থানীয় লোকজন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সচেতনতার অভাবে রোহিঙ্গারা সাগর পাড়ি দিচ্ছে। ফলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যে কোনোভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পাচার ঠেকানো হবে। আর যেসব পাচারকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে তাদের ধরতে অভিযান চলছে। আমরা পুলিশের কথায় আশাবাদী হতে চাই। এটা সত্য, মানবপাচার বাংলাদেশের অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জল ও স্থল পথে মানবপাচার হচ্ছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশিরভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। একটা সময় শুধু রোহিঙ্গা পুরুষরা কাজের তাগিদে সাগর পাড়ি দিতেন। এখন নারী ও শিশু পাচারও বাড়ছে। এ ছাড়াও অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পড়া, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী-পুরুষ এবং শিশুরাই মানবপাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। আমরা মনে করি, মানবপাচার বন্ধ না হলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যে মানবতার পরিচিতি পেয়েছে সেই ভার্বমূতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কাজেই কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, পাচার বন্ধ করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।