করোনায় যেভাবে পড়ালেখার ক্ষতি পোষাবেন

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্ব মৃতু্যপুরীতে পরিণত হয়েছে। মারা গেছে দুই লক্ষাধিক মানুষ, আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখে ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর দেশে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা, সে অনুযায়ী সুস্থ হচ্ছে না মানুষ। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কেউ জানে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজটের আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে তারা। তবে এ অবস্থায় বেশ কিছু মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। এমন কয়েকটি মাধ্যম নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো- প্রথমত, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি নির্দেশনায় সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ২৯ মার্চ থেকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস সম্প্রচার শুরু করা হয়। প্রতিদিন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির দুটি করে ১০টি ক্লাস সম্প্রচার করা হচ্ছে। ২০ মিনিটের প্রতিটি ক্লাস শুরু হয় সকাল ১১টা থেকে। মাধ্যমিকের পর গত ৭ এপ্রিল প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস সম্প্রচার শুরু হয়। প্রতিদিন প্রতিটি শ্রেণির ২০ মিনিটের একটি করে ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে। টিভিতে প্রচারিত প্রতিটি ক্লাসের পর বাড়ির কাজ দেয়া হয়। আর প্রতিটি বিষয়ের আলাদা খাতায় সেই বাড়ির কাজ শেষ করতে হয়। করোনার তান্ডব শেষ হলে যখন স্কুল খোলা হবে তখন শিক্ষকদের সেই বাড়ির কাজের খাতা দেখাতে হবে। বাড়ির কাজের প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। যতদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ততদিনই টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা বাসায় বসেই যাতে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সংসদ টেলিভিশনে রেকর্ড করা শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয় সরকার। এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও তাদের পড়ালেখার ঘাটতি পূরণ করতে পারবে। পড়ালেখার ঘাটতি পোষাতে দ্বিতীয় আরেকটি দারুণ মাধ্যম হতে পারে পেন মিনিট স্কুল। বাংলাদেশি শিক্ষা উদ্যোক্তা আয়মান সাদিক ২০১৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন পাঠশালা হিসেবে তার স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পরিচিত। এখানে ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কন্টেট পাবে শিক্ষার্থীরা। রবি টেন মিনিট স্কুল অ্যাপের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রতিটি শ্রেণির প্রতিটি বিষয়ের অধ্যায়ভিত্তিক ক্লাসের ভিডিও পাওয়া যাবে এখানে। এতে দেশের স্বনামধন্য, দক্ষ শিক্ষকদের সুন্দর, সাবলীল উপস্থাপনায় প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রায় ১৫ লাখ সদস্যের টেন মিনিট স্কুল লাইভ নামে একটা গ্রম্নপ আছে। প্রতিদিন এখানে এসএসসি এবং এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য ৮টা করে লাইভ ক্লাস হচ্ছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী, ব্যাংক জব কিংবা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে চান, তাদের জন্যও এটি অন্যতম একটি মাধ্যম। দেশের এই দুর্দিনে শিক্ষা সহায়িকা হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য রবি টেন মিনিট স্কুল নিঃসন্দেহে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। আরেকটি কথা, সংসদ টিভিতে সম্প্রচারিত মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের ক্লাসগুলো যদি কেউ মিস করে থাকেন, চিন্তার দরকার নেই। কারণ, সংসদ টিভির প্রতিদিনের ক্লাসগুলোর ভিডিও টেন মিনিট স্কুলের অ্যাপে আপলোড করা আছে। করোনাকালে পড়ালেখার আরেকটি মাধ্যম অনলাইন শিক্ষাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এডুহাইভ। এটিও মূলত একটি অ্যাপ, যেটা গত বছরের ৩১ আগস্ট যাত্রা শুরু করে। এডুহাইভ বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র অনলাইন পস্নাটফর্ম যেখানে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে স্বনামধন্য শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের কোর্স এবং অনলাইন ক্লাস একসঙ্গে পায়। এখান থেকে পড়ালেখার একটি বড় সুবিধা হলো, প্রতিটি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন শিক্ষকের একাধিক লেকচার থাকে। যার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর কোনো বিষয়ে না বোঝার সম্ভাবনা কম থাকে। এডুহাইভের মাধ্যমে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা সহজেই ঘরে বসে পড়াশোনা করতে পারে। বর্তমানে এডুহাইভে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারের ৮০ হাজারের অধিক প্রশ্ন এবং ১০০-এর অধিক ভিডিও ক্লাস রয়েছে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য। আর প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন ক্লাস যোগ করা হচ্ছে অ্যাপে। করোনাকালে এডুহাইভের সব মডেল টেস্ট এবং অনলাইন লেসন ফ্রি করা হয়েছে। নবম-দ্বাদশ শ্রেণির সব শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। গুগল পেস্ন স্টোর থেকে শিক্ষার্থীরা 'ঊফঁযরাব' লিখে সার্চ দিলেই অ্যাপটি পেয়ে যাবেন। এই তিনটি মাধ্যম ছাড়াও পড়ালেখার আরও বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩ মার্চ অনলাইনে ক্লাসের নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। সে মোতাবেক বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালু রয়েছে। সেশনজট এড়াতে এটি বেশ ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটা চালু রাখা দরকার এবং শিক্ষার্থীদের নিজেদের প্রয়োজনেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। ফেসবুকে লাইভ ক্লাস, যে কোনো প্রয়োজনে শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া বর্তমানে যে কোনো তথ্যের জন্য গুগল, ইউটিউব বিশাল একটি মাধ্যম। নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে অধিক জ্ঞানার্জনের জন্য মাধ্যম দুটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ এ দুটি মাধ্যমে কোনো বিষয়ে সার্চ দিয়ে তথ্য না পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা অলস সময়ে এগুলোর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারে। এগুলো ছাড়াও পড়ালেখার জন্য আরও বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি হলো- লেখাপড়া বিডি, ই শিক্ষণ, রেপ্টো, শিক্ষক ডটকম, বিবিসি জানালা, পারফেক্ট স্কুল, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, এডুকার্নিভাল ডটকম ইত্যাদি। করোনা পরিস্থিতি যতদিন না স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া একজন বুদ্ধিমান শিক্ষার্থীর কাজ। নয়তো মেধার প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে পিছিয়ে যাবে এ দেশের শিক্ষার্থীরা, পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অনিক আহমেদ শিক্ষার্থী গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাভার, ঢাকা।