পোশাকশ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা

নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের মহামারিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই কারখানা চালু করা হয়েছে। দেশের সচেতন মহল মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। পরিস্থিতি বুঝে কারখানা চালু করা উচিত ছিল। যদিও তৈরি পোশাকশিল্পের দুই খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলেছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কারখানা চালু করা হয়েছে। কিন্তু কারখানা চালু করার কয়েক দিনের মধ্যেই ৯ পোশাকশ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে যে এই আক্রান্তের হার বাড়বে না এই নিশ্চয়তা কে দেবে? আরও একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে কারখানার পরিবেশ হয়তো বা স্বাস্থ্যসহায়ক; কিন্তু শ্রমিকরা যেখানে বসবাস করছে বস্তিতে অথবা বাসায় সেখানকার পরিবেশ কতটা করোনাঝুঁকিমুক্ত এই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। অন্যদিকে লকডাউন পরিস্থিতিতে যেসব শ্রমিক সংশ্লিষ্ট কারখানার আশপাশে অবস্থান করছেন তাদের দিয়েই কারখানা চালু করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। দূরের শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় কেউ হেঁটে, আবার কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। তাদের আসতে বাধ্য করা হয়েছে। চাকরি রক্ষার ভয়েই শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ২৬ মার্চ থেকে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে পোশাক কারখানাগুলো। তার এক মাসের মাথায় জরুরি রপ্তানি আদেশ পালন করতে কীভাবে স্বল্প পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কারখানা চালু করা যায় সেই আলোচনা শুরু হয়। মালিকপক্ষের পাশাপাশি খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়। এ ছাড়া শ্রমিক ছাঁটাই না করতে কারখানার মালিকদের অনুরোধ করা হয়; কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ও ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনের পর চাকরি ফিরে পেয়েছেন প্রায় ৩০০ শ্রমিক। শনিবার সকালে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার এলাইন অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন তারা। প্রায় তিন ঘণ্টা আন্দোলনের পর শ্রমিকদের চাকরিতে পুনর্বহাল করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। এখানেই শেষ নয়- চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বেতনের দাবিতে গোল্ডেন সন লিমিটেড এক্সপোর্ট নামের একটি পুতুল কারখানার গেটের সামনে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। ওই সময় অন্যান্য শিল্প কারখানার গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেতনের আশ্বাস পেলে দুপুর ১২টায় আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। শ্রমিকরা জানান, গত দুই মাস বেতন বন্ধ থাকায় বাসা ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাদের। আর এ কারণে বেতনের দাবিতে শনিবার সকালে কারখানার সামনে জড়ো হন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেতনের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনাও দেশের সচেতন মহল প্রত্যাশা করে না। সরকার প্রণোদনা দেওয়া সত্ত্বেও এমনটি কেন ঘটবে? মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে, পাশাপাশি মালিকরাও বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন এদেরই অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে। যাদের শ্রমে-ঘামে এই শিল্প দাঁড়িয়ে আছে, বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে, তাদের দুর্দিনে মালিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এর কোনো বিকল্প নেই।