এক মাসে সারা দেশে ২১১ জন নিহত

প্রকাশ | ০৫ মে ২০২০, ০০:০০

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
করোনাকালেও সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। করোনাভাইরাসের কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশে প্রায় লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও গণপরিবহণ বন্ধের ঘোষণার পরও গত এক মাসে সারা দেশে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২১১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২২৭ জন। একই সময় নৌ-পথে ৮টি দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত, ২ জন আহত এবং ২ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৯৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে। এছাড়া ৬৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে, ২৯টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ২৮টি নসিমন ও করিমন, ২২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১৭টি প্রাইভেট কার ও ১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বাসের মাধ্যমে এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৩ এপ্রিল। ওইদিন ১৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ৫ জন আহত হয়। গণপরিবহণ বন্ধ থাকার পরও এমন দুর্ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর জন্য চালকরাই মূলত দায়ী। কারণ ফাঁকা রাস্তা পেয়ে তারা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালান। এ সময় রাস্তায় থাকা ট্রাফিক পুলিশও তৎপর ও মনোযোগী নয়। করোনাকালেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এর আগে দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে চাপা পড়ে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্যর ঘটনায় সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর সব ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ে। নতুনভাবে যখন সড়ক আইন করা হয়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সড়ক আইন জনগণের নিরাপত্তার আইন। জনগণের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার আপস করবে না। এ আইন সবার জন্য। রাস্তায় নৈরাজ্য চলতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু করোনাকালেও যখন ২১১ জন মানুষ নিহত হন তখন আমরা কী বলতে পারি। আসলে বাংলাদেশে স্বাভাবিক মৃতু্যর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কার কখন কীভাবে মৃতু্য হচ্ছে কেউ বলতে পারছে না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- একের পর এক এধরনের ঘটনা কি ঘটতেই থাকবে। এর কি কোনো প্রতিকার নেই। মানুষের জীবন যে কত তুচ্ছ তা এসব ঘটনার দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো। যোগ্য ও দক্ষ লোকেরাই যেন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিআরটিএর। যদি যোগ্য লোককে লাইসেন্স দেয়া হয় তা হলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে দুর্ঘটনা রোধ করতে।