পাঠক মত

যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি পরিবারের একজন যুবক সদস্য যদি অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে শুধু সেই পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, জাতি অধঃপতিত হয়। একটি প্রজন্মের সব স্বপ্ন সম্ভাবনা ধুলিসাৎ হয়ে যায়। আমাদের দেশে যুবসমাজ ব্যাপকভাবে অবক্ষয়ের অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের সামাজিক অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে দুর্বৃত্ততা বাড়ছে। অসৎ সঙ্গের কারণে মাদকাসক্ত হয়ে যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে গেছে। পিতা-মাতার প্রতি সমীহ বোধ হারিয়ে যাচ্ছে। সন্তানরা দুর্বিনীত আচরণ করছে। অনেক পরিবার আছে যেখানে পরিবারের সদস্যদের দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। অথচ এক বাড়িতে বসবাস করে। সদস্যরা যে যার রুমে ঢুকে যায়, আবাসিক হোটেলের মতো। প্রযুক্তির অকল্যাণ দিকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সভ্যতার অগ্রগতি বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বটে। প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, দিয়েছে কল্যাণকর অনেক কিছু। কিন্তু হরণ করেছে আমাদের আবেগ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে। প্রতি বারো সেকেন্ডে নাকি একটি করে ফেসবুক একাউন্ট খোলা হচ্ছে, এতে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, উদ্বেগের জায়গাটা হলো মানুষ মোবাইলে ফেসবুকে সারাক্ষণ বিভোর থাকছে। স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের চির ধরছে। সৃষ্টি হচ্ছে সন্দেহ। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আড্ডা-হাসি-আনন্দে সময় কাটানো এখন আর দেখা যায় না। মানুষের আবেগ ও অনুভূতিতে আঘাত হানার মাধ্যম হিসেবে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। নৈতিক মূল্যবোধ বিবর্জিত মানুষ প্রযুক্তিকে তাদের কুরুচিপূর্ণ অসুস্থ অশ্লীল বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করে ফেলেছে। এর জন্য প্রযুক্তির উন্নতি কিংবা আবিষ্কারকে দায়ী করা যায় না কোনোভাবেই। দায়ী অপব্যবহারকারীরা। প্রযুক্তির এই উন্নতি আমাদের ভৌগোলিক দূরত্ব কমিয়েছে। কিন্তু বাড়িয়েছে পারস্পরিক সম্পর্কের দূরত্ব অনেক বেশি। এছাড়া যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম আরও একটি কারণ হলো মাদক। আমাদের দেশে অপার সম্ভাবনাময় যুবসমাজ মারাত্মক মাদক ঝুঁকিতে রয়েছে। মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে খুব সহজে মাদকে আসক্ত হওয়ার সুযোগ পায় তরুণসমাজ। আমাদের তরুণ সমাজকে বাঁচাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সবাইকে একযোগে কাজ করা প্রয়োজন। মাদকাসক্তির ফলে বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। শরীরে নানা অসুখ জেঁকে বসে। শারীরিক সমস্যার মধ্যে খাদ্যে অরুচি, পুষ্টিহীনতা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ, বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি হয় যার শেষ পরিণতি মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। মানসিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া। মাদকাসক্তির ফলে ব্যক্তি তার স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ফেলে। স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, ধৈর্যচু্যতি ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণ ব্যক্তির মধ্যে প্রকট হয়ে ওঠে যা ক্রমাগত তাকে মানসিক রোগীতে পরিণত করে। সামাজিক সমস্যার মধ্যে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, সামাজিক সহিংসতা, নারী নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি অন্যতম। যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে মাদক নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এই বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। যুবসমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন রাষ্ট্র ব্যক্তি পরিবার সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস। সমাজ বিনির্মাণে যুবসমাজের হিতৈষী ভূমিকা রাখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মানবিক বোধের উন্মেষ ঘটানোর জন্য জনকল্যাণকর কাজে তাদের লাগাতে হবে। বেকারত্ব, সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক বিরোধ দূর করতে হবে। কেউ যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাহলেই মুক্তি পেতে পারে যুবসমাজ, যে যুবসমাজ জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে যুগে যুগে। সাগর জামান মাগুরা