শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক

প্রকাশ | ০৬ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বুদ্ধপূর্ণিমা। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই তিথিতে বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন নেপালের লুম্বিনি কাননে। এ রাতেই তিনি বোধিজ্ঞান লাভ করেছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়ায়। এছাড়া গৌতম বুদ্ধের মৃতু্যও হয়েছিল এ রাতেই। আর এ কারণেই এ তিথিকে বলা হয় বুদ্ধপূর্ণিমা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একই সঙ্গে শোক ও গৌরবের। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের এ প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা 'বুদ্ধপূর্ণিমা' উদযাপন করেন। জাতিসংঘ আজকের দিবসটিকে 'বেশাখ ডে' হিসেবে পালন করে। বুদ্ধ ছিলেন অহিংস, ন্যায় ও সাম্যনীতির এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ। বুদ্ধবাণীতে বারবার ধ্বনিত হয়েছে অহিংসা, শান্তি ও বিশ্বপ্রেম এবং মহামৈত্রীর কথা। এ ধর্মে সবার সামগ্রিক সুখকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। আর তাই তো মহামতি বুদ্ধের বাণী হলো- 'সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু' অর্থাৎ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। বৌদ্ধধর্মে জিঘাংসা, যুদ্ধপ্রবণতা, বিদ্বেষ ইত্যাদির কোনো স্থান নেই। বিদ্যমান জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বুদ্ধের বাণী এখনো সমকালীন। সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধরা এবং মানবতাবাদী দার্শনিক চিন্তাবিদরাও বুদ্ধের জীবনদর্শনকে গভীরভাবে অনুধাবন করেন। বৌদ্ধধর্মে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা আটটি বিশুদ্ধ পথের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সৎ বাক্য বলা, সৎ চিন্তা করা, সৎ কর্ম করা, সৎ জীবিকা নির্বাহ করা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি, সৎ সমাধি করা ইত্যাদি। এছাড়া বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাস করা হয়, অষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুশীলন ও চর্চায় জীবন সুন্দর, মাধুর্যময় ও পরিপূর্ণ হয়। বৌদ্ধধর্মে অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- 'পঞ্চশীল'। এতে বলা হয়েছে- প্রাণী হত্যা, চৌর্যবৃত্তি, ব্যভিচার না করা, মিথ্যা না বলা এবং মাদকদ্রব্য সেবন না করা। এসব কাজে কাউকে কোনোরকম উৎসাহিত না করার কথাও বলা হয়েছে। মহামতি বুদ্ধের এ পঞ্চনীতি পালনে ব্যক্তি যেমন উপকৃত হয়, নিরাপদে থাকে; তেমনি সমাজ ও দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে অবস্থান করতে পারে। ত্রিপিটকে উলেস্নখ আছে, জগৎ অনাচার, পাপাচারে নিমজ্জিত হলে জগতের কল্যাণে এবং মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে জীবের দুঃখমোচনে সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ জাত-পাতের চরম বৈষম্য, ধর্মের নামে প্রাণযজ্ঞ আর হিংসায় মানুষ যখন মেতে উঠল, মানুষকে আলোর পথ দেখাতে বুদ্ধ ধরায় এসেছিলেন। প্রসঙ্গত বলা দরকার, এবার বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা এমন এক সময় এসেছে- যখন সারা পৃথিবী কার্যত থমকে গেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে। বিশ্বে ৩৬ লাখের কাছাকাছি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে, মৃতু্য হয়েছে আড়াই লাখের বেশি মানুষের। বাংলাদেশেও বাড়ছে সংক্রমণ। ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃতু্য হয়েছে ২০০-র কাছাকাছি। জানা গেছে, এবারে করোনা মহামারির কারণে সব বিহার, প্যাগোডায় কোনো রকম বুদ্ধপূর্ণিমার আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন করা হবে না। শুধু বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষু সংঘরা বিহারে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পূজা, বন্দনাসহ ধর্মীয় কাজ সমাধা করবেন। অন্যরা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করে ধর্মীয় কার্য প্রতিপালন করবেন। দেশের শীর্ষ বৌদ্ধ সংগঠনগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর প্রাচীন ধর্মগুলোর অন্যতম। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় প্রতি বছর বুদ্ধপূর্ণিমা পালন করা হয়। কিন্তু এবার করোনার জন্য ঘরেই উদযাপন করতে বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে সংকটে মানুষ যেভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, এই সংকট নিরসনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বৌদ্ধ সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্ত মোতাবেক দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপন হোক এমনটি কাম্য। শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় 'জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক'।