পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, এটি অপার সম্ভাবনার নাম। একটি দেশের মর্যাদার ও অহঙ্কারের প্রতীক, অর্থনীতির নতুন সোপান। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই পদ্মা সেতু। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের দিকে দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের সাহসী উদ্যোগ আর আন্তরিক প্রচেষ্টায়। অচিরেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল। এই চ্যালেঞ্জে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছেন। স্বপ্ন পূরণ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের আনন্দের সীমা থাকবে না। এই সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করবে দেশের মানুষ। এটা হবে সবার জন্য বড় পাওনা।
আশার কথা, করোনা প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। সোমবার বসানো হয়েছে সেতুর ২৯তম স্প্যান। মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে ১৯ ও ২০ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এতে পদ্মা সেতুর ৪ হাজার ৩৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়েছে। এটা সত্য, করোনার কারণে সেতুর কাজ কিছুটা ধীরে হচ্ছে। বেশ কিছু প্রকৌশলী বিদেশে আটকা পড়েছেন। শ্রমিকও কিছু কম আছে। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পদ্মা সেতুর ৪২টি স্প্যানের মধ্যে ২৯টি বসেছে। আর মাত্র ১২টি স্প্যান স্থাপন বাকি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জানে, ফেরি পাড়ি দিয়ে পদ্মা পার হওয়া ভয়ঙ্কর এক অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তির কাজ। এর মধ্যে যথেষ্ট বিড়ম্বনা ও ঝুঁকিও রয়েছে। এর ফলে ৭-৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা লেগে যায়। এটা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ যেভাবে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সেভাবে পারছে না। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ এতদিনে সম্ভব হয়নি। এ সেতু নিয়ে একের পর এক জল ঘোলা হওয়ার পরও যখন সেতু নির্মাণ প্রকল্প পুরোদমে চলছে এবং শেষ হওয়ার পথে তখন স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, বিষয়টি ওই অঞ্চলের মানুষ ও দেশের স্বার্থে অত্যন্ত ইতিবাচক, আনন্দের সংবাদ। কেন না বঙ্গবন্ধু সেতু বাস্তবায়নের পরের যে দৃষ্টান্ত তাতেও স্পষ্ট হয় যে- একটি সেতু কীভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর রাখতে পারে উজ্জ্বল ভূমিকা। পাল্টে দিতে পারে মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি।
উলেস্নখ্য, দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হবে এ পদ্মা সেতু। যা অত্যাধুনিক স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ আজ সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
ধারণা করা যাচ্ছে- খুব কম সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। অচিরেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাবে বাংলাদেশ, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। সেতু বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ শেষ করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে এটাই দেশের সবাই প্রত্যাশা করে।