নতুন মোড়কে রাজনৈতিক মঞ্চে আসলেও লাভ হবে না

জামায়াতে ইসলামীকে কখনো ইতিহাস ক্ষমা করবে না। তারা এখনো পাকিস্তানের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারা এদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসুক। তারা এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে।

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২০, ০০:০০

সাইদুল করিম মিন্টু
করোনাভাইরাসের প্রকোপে যখন সারাবিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে। যার কবল থেকে বাদ যায়নি প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে আসা ও বহিষ্কৃতদের সমন্বয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামের একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের দোসর, একাত্তরের মানবতাবিরোধী শক্তি আবার নতুন রূপে এদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যা এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক সংবাদ নয়। কারণ তারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি। তারা এদেশের কল্যাণ চায় না। কৌশলগত কারণে নতুন মোড়কে রাজনৈতিক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে জামায়াতের ইসলামীর সাবেক নেতারা। এ যেন পুরান বোতলের মদ নতুন বোতলে স্থানান্তরের কারসাজি। তাই জামায়াতে ইসলামী আর এবি পার্টি দুটি দলই জাতভাই। অর্থাৎ যেই লাউ সেই কদু। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান এএফএম সোলাইমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং দল থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রশবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্যসচিব করে 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' নামের একটি নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অকার্যকর রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে 'নতুন রাজনীতির' প্রয়োজনে এর আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে বিজয়নগরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করা হয়। 'জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ' নামের রাজনৈতিক পস্নাটফরম থেকেই এই নতুন দলের ঘোষণা আসল। জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কৃত দলটির মজলিসে শুরার সাবেক সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিুবর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে 'জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয় গত বছর ২৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, কোনো তত্ত্ব বা আদর্শের চর্চা করা হবে না। কোনো ধর্মভিত্তিক দল করা হবে না। মানুষের প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করা হবে। এ প্রেক্ষাপটে গত এক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সেমিনার, মতবিনিময়সভার মাধ্যমে দল গোছানোর কাজটি করেন জন আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতারা। সোলাইমান চৌধুরী চাকরি জীবনে রাষ্ট্রপতির সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য নির্বাচিত হন। এই দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গত বছর ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে 'জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ'-এর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরপর জামায়াতের শীর্ষ পর্যায় থেকে তার সমালোচনা করা হয়। এ অবস্থায় গত বছর ১০ ডিসেম্বর তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন এবং জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হন। এর আগে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত বছর ১৫ ফেব্রম্নয়ারি পদত্যাগ করেন। তিনি বিদেশে থেকেই পদত্যাগ করেন। ঠিক একই সময়ে দলটির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মজলিসে শুরা সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা এরইমধ্যে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। মাঠপর্যায়ে কিছু কিছু নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। পদত্যাগী ও বহিষ্কৃতরা 'জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ' সঙ্গে যুক্ত হন। তাদের সমন্বয়েই নতুন রাজনৈদিক দল গঠন করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আপাতত দলটির উপদেষ্টা পরিষদে থেকে কাজ করবেন বলে জানা গেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেকোনো দল ও মতের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের রাজনীতি চর্চা করার অধিকার রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর মতো মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজ প্রগতি বিরুদ্ধ একটি দলের সাবেক নেতাকর্মীদের হাতে ভয়াবহ মহামারির সময়ে একটি দলের আত্মপ্রকাশ কখনোই সন্দেহের ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। বিশেষত এই দলের প্রকাশ্য নেতাদের অনেকেই যেখানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় শীর্ষ অভিযুক্তদের পক্ষে আইনি সহায়তার কাজে যুক্ত ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এই নেতারা কৌশলগত কারণে নতুন মোড়কে রাজনৈতিক মঞ্চে আসার চেষ্টা করছে। তারা গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে আমার মনে হচ্ছে। সে ব্যাপারে সকল সচেতন মহলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মাধ্যমে এদেশকে আবার পাকিস্তান করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি দেশের মাটি থেকে বিলীন হয়ে যায়নি। তারা এদেশের স্বাধীনতার পতাকা পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নতুন মোড়কে রাজনীতির মাঠে হাজির হয়েছে। কারণ তারা সুযোগের সন্ধানে আছে। তারা যতই মুখে এদেশের কল্যাণে কাজ করার কথা বলুক। তাদের বিশ্বাস নেই। তারা সুযোগ পেলেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বিশ্বাস করি, জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো পরাজিত শক্তিকে রাজনীতি করার সুযোগ দেবে না। পাকিস্তানের ভাবধারার রাজনৈতিক দলকে এদেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ তারা দেশের শত্রম্ন, মানবতার শত্রম্ন। জামায়াত ইসলামী যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসার চেষ্টা করুক না কেন। তাদের বিষয়ে সরকার ও জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। কোনোভাবেই তাদেরকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। কারণ তাদেরকে সুযোগ দিলের '৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের কোনোভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া যেতে পারে না। জামায়াতে ইসলামীকে কখনো ইতিহাস ক্ষমা করবে না। তারা এখনো পাকিস্তানের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারা এদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসুক। তারা এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে। কথায় আছে, কুকুর লেজ ঘি দিয়ে টানলেও সোজা হয় না। তার লেজ বাঁকা হবেই। তাই জামায়াতে ইসলামীর থেকে পদত্যাগ করে এসে নতুন রাজনৈতিক দল করুক। ওই কুকুরের মতো তাদের পাকিস্তানের ভাবাদর্শ থেকেই যাবে। আর সুযোগ পেলেই নিজেদের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশকে বিষ বাষ্পে পরিণত করবে। তাই যতই মোড়ক পরিবর্তন করে রাজনীতির মাঠে আসুক তাদেরকে কোনো ভাবেই বিশ্বাস করা যাবে না। সাইদুল করিম মিন্টু: সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ