পাঠক মত

সামাজিক ব্যাধি

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ধর্ষণ ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের সমাজে। ধর্ষণ পর হত্যার লোমহর্ষক সব ঘটনায় আঁতকে উঠছে দেশবাসী। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা গ্রামে-শহরে, বাড়িতে কিংবা রাস্তায়, অফিসে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি চলন্ত বাসেও হচ্ছে। শিশু থেকে কিশোরী, যুবতী থেকে বৃদ্ধা, স্কুলছাত্রী থেকে পোশাককর্মী, ডাক্তার, আইনজীবী এমনকি ভিখারিনীও রেহাই পাচ্ছে না হিংস্র থাবা থেকে। প্রতিদিনই মাত্রাতিরিক্ত হারে অসংখ্য শিশু এবং নারী ধর্ষিত হচ্ছে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা এভাবে চলতে থাকলে সামাজিক কাঠামো ধ্বংস হওয়া নিশ্চিত। ধর্ষণ মূলত এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি। অসুস্থ মানসিকতার লোক এ পথ বেছে নেয়। বর্তমান আধুনিক সমাজব্যবস্থা ও ডিজিটাল প্রবণতায় যারা নারীকে যোগ্য সম্মান মর্যাদা দিতে প্রস্তুত নয়, তারাই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধ করে থাকে। ধর্ষণে শিকার হয়ে অসংখ্য নারী আত্মহত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেন না। ধর্ষণে শিকার নারীই সামাজিক ক্ষেত্রে লাঞ্ছিত বঞ্চিত হন। ধর্ষণের ফলে নারীর সুন্দর স্বপ্ন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দেয়। আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে পুড়তে থাকে সে নিজে ও পরিবার। বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন, কেন ধর্ষণ হচ্ছে? অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সমাজ পরিবর্তন, পারিবারিক অবহেলা, অপসংস্কৃতি, ভুল শিক্ষা, সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব ইত্যাদি ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণ। তা ছাড়া পশ্চিমা সংস্কৃতি ও বিশ্বায়নের ক্ষতিকারক প্রভাবে ধর্ষণপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে, ইন্টারনেট, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে যৌন উত্তেজনাপূর্ণ ছবি দেখে অনেকে লালসা চরিতার্থের পথ খুঁজে ফেরে ও যা দারুণভাবে প্রভাবিত করে। সামাজিক অবক্ষয়, মাদক বিস্তার, কর্মহীনতা, সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকা, পর্নো ছবির অবাধ বিক্রি, সর্বোপরি নারীর প্রতি পুরুষের হীন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা। যা মারাত্মক ব্যাধি আকারে রূপ নিচ্ছে। অথচ দেশে এ সংক্রান্ত আইন নেই তা বলা যাবে না। কারণ বাংলাদেশে ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড আর ধর্ষণের কারণে মৃতু্য হলে তাতে মৃতু্যদন্ডের বিধানও রয়েছে এবং কমপক্ষে এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের তুলনায় আমাদের দেশের আইন অনেক কঠোর। ইতোমধ্যে আইন অনুযায়ী রায় কার্যকর হয়েছে, তা সত্ত্বেও দুর্বৃত্তরা এ ধরনের অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। মানুষের মধ্যে যে আদিম প্রবৃত্তি, তা দমিয়ে রাখতে হলে শৈশব থেকে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যথাযথ জ্ঞানচর্চা, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। অসচেতনতার ফলে বাড়ছে ধর্ষণের মতো ঘটনা। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে ধর্ষণের মতো ঘটনা বেশি ঘটে। এসব পরিবারে নানা ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে থাকে। এর সুযোগ নেয় স্বার্থসন্ধানী লোক। সুযোগ বুঝে এসব পরিবারের শিশুদের নিজের কাছে নেয় এবং অবুঝ শিশুরা তাদের লালসার শিকার হয়। বর্তমানে যেভাবে শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন আতঙ্কিত করে তুলেছে। সমাজ কলুষমুক্ত করতে হলে সব অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে পঙ্কিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাবে সমাজ। সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের শিকার হয়ে বেশির ভাগ নারীই বিচার চাইতে যান না। আবার যেসব নারী বিচার চাইতে যান, তাদের পুলিশ, প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যথেষ্ট হেনস্তা হতে হয়। ধর্ষণের অভিযোগগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রমাণ হয় না। ধর্ষণ রোধে চাই সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ। ধর্ষণকারীর বিচার হতে হবে দ্রম্নত ও দৃষ্টান্তমূলক। যাতে অন্য কোনো ধর্ষণকারী ধর্ষণ করতে হাজারবার চিন্তা করে। ধর্ষণ শুধু একটি ব্যাধি নয়। দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপ। এই অভিশাপের কালো অধ্যায় থেকে সমাজকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক ঢাকা