পাঠক মত

করোনার থাবায় মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে বিশ্বঅর্থনীতির চাকা

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এপ্রিলে লক্ষ্যমাত্রার সাত ভাগের এক ভাগ মাত্র রপ্তানি আয় হয়েছে। গত বছরের রপ্তানির চেয়ে এটি ৮৩ শতাংশ কম। রপ্তানিতে এই ধস অপ্রত্যাশিত শুধু নয়- তা বিপর্যয়ের সব ধারণাকে হার মানিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চীন থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে যাওয়ার পরও গত মার্চে ২৭৩ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। এপ্রিলে তা কমে মার্চের মোট আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। রপ্তানি খাতের এই ভয়াবহ ধসে যৌক্তিকভাবেই উদ্বেগ বাড়ছে সরকারের মধ্যে। আর সেই উদ্বেগ থেকে রপ্তানিশিল্পে বিরূপ প্রভাব নিরূপণ এবং তা কাটিয়ে উঠতে 'অ্যাকশন পস্ন্যান' তৈরি করতে রোববার একটি সভা করেছে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যেসব ছোট ছোট শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা ব্যাংকে ঋণ সুবিধা পায় না, তাদের জন্য পৃথক প্রণোদনার সুপারিশ করা হবে। আর মাঝারি ও বড় শিল্প খাত, যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক খাতে রয়েছে এবং যাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সরকারের নীতিগত সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে কর্মপরিকল্পনায়। তৈরি পোশাকসহ প্রাতিষ্ঠানিক খাতের রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য এরই মধ্যে প্রণোদনা সুবিধা ঘোষণা করেছে সরকার। রপ্তানি আয়ের সঙ্গে দেশের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান যেমন জড়িত, তেমন জড়িত রাজস্ব আয়ের বিষয়টিও। করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ধস নামায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয় আগামী অর্থবছরে অন্তত এক-দশমাংশ হ্রাস পাওয়ার উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। পণ্য রপ্তানি খাতে আয় কমলে অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এ অবস্থায় দ্রম্নত রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু করা জরুরি হয়ে উঠেছে। এ প্রক্রিয়ার জন্য বন্দর ও পণ্য পরিবহণব্যবস্থা সচল করার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক। পাশাপাশি পরিবর্তিত সময়ে যেসব পণ্যের চাহিদা দুনিয়াজুড়ে বেড়েছে সেগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। রপ্তানি ক্ষেত্রে বিপর্যয় এড়াতে প্রয়োজনে নিতে হবে কূটনৈতিক উদ্যোগ। ইতোমধ্যে কোনো কোনো ইউরোপীয় দেশ প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করবে না। এ ধরনের প্রতিশ্রম্নতি আদায়ে আরও তৎপর হতে হবে। রেমিট্যান্সকে বলা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। বিশ্ব অর্থনীতিতে বারবার মন্দা আঘাত হানলেও রেমিট্যান্স আয়ের রমরমার কারণে সে আঘাত কখনো অনুভূত হয়নি। কিন্তু দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের থাবায় প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স আয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। গত বছরের শেষের দিকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রার কারণে রাজস্ব আদায়, আমদানি-রপ্তানিসহ অর্থনীতির বড় সূচকগুলো নাজুক অবস্থায় চলে গেলেও চাঙ্গা ছিল একমাত্র রেমিট্যান্সপ্রবাহ। কিন্তু ডিসেম্বরের শেষদিকে কোভিড-১৯ আতঙ্ক শুরু হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ে। কোভিড-১৯ মহামারি রূপ নিলে জীবন বাঁচাতে ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরার ঢল নামে। সে সময় দুই লাখের বেশি প্রবাসী দেশে ফিরে আসেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আশঙ্কা, অন্তত ১০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারাবেন করোনার প্রভাবে। একই সঙ্গে ডিসেম্বরের পর থেকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণা করায় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এখনো তারা কর্মহীনই রয়েছেন। বিদেশের মাটিতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় সেখানে নিজেদের জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে তারা আর আগের মতো রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে রেমিট্যান্স আয়। করোনার থাবায় বিশ্ব অর্থনীতির চাকা থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সমীক্ষায় বাংলাদেশের ১০ লাখ প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের পাঠানো শত শত কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে দেশ যেমন বঞ্চিত হবে তেমন ১০ থেকে ১২ লাখ লোক দেশে ফিরে এলে তাদের খাদ্য জোগান এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে যে ঈর্ষণীয় অবস্থান গড়ে তুলেছে তাও নড়বড়ে হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সান্ত্বনা শুধু এটুকুই বিশ্বের সব দেশই করোনাভাইরাসের বিপজ্জনক মন্দার শিকার। এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণ করতে হবে। কীভাবে রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় সে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড পবিত্র কোরআনের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কোরআনের আলোকে জীবন গঠনের প্রশিক্ষণ হয় মাহে রমজানে। আত্মিক উন্নয়ন,