প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়াতে হবে

বজ্রপাতে প্রাণহানি

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যতই দিন যাচ্ছে দেশে বজ্রপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে প্রতি বছর গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ জনের মৃতু্য হয় বজ্রপাতে। এটাকে দুর্যোগ ঘোষণার পর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ২০১৭ সাল থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার অন্যতম উদ্যোগ হচ্ছে তালগাছ রোপণ। সরকারি হিসাব মতে, সারাদেশে সাড়ে ৩১ লাখ তাল বীজ বপন করা হয়েছে। এগুলো বড় হতে সময় লাগবে আরও ৫-৬ বছর। আশার কথা, সর্বত্র তালগাছের সংখ্যা বাড়লে বজ্রপাত সেখানেই হবে, ফলে এড়ানো যাবে প্রাণহানি। অন্য এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত অন্তত ৮১ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। বজ্রপাতের ক্ষতি এড়াতে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা সেন্সরের মাধ্যমে চিহ্নিত করে জনগণকে কীভাবে দ্রম্নত জানানো যাবে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পদ্ধতিতে লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর ব্যবহার করে ১৫-২০ মিনিট আগে বজ্রপাত প্রবণতা এলাকার জনগণকে এসএমএসের মাধ্যমে সতর্ক করতে পারলে ক্ষতি এড়ানো যাবে। বজ্রঝড়ের সময় সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট বজ্রপাতের ভয় থাকে। কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত শুরুর অন্তত আধ ঘণ্টা সময় সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের ৮টি অঞ্চলে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র (ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামে লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর) রয়েছে। আমরা মনে করি এটি যথেষ্ট নয়। অঞ্চল আরও বাড়াতে হবে। এটা সত্য, বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণের কথা বললেই প্রথমেই আসবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা। তাছাড়া পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষসম্পদ ধ্বংস, নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ তো রয়েছেই। বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার এমন অনভিপ্রেত পরিবর্তন বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টির জন্য বেশি দায়ী। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই এক দশকে দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি ঘটেছে ২ হাজার ৮১ জনের। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ব্যাপার। বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে 'প্রাকৃতিক দুর্যোগ' হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বজ্রপাত রোধে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা ও সতর্কীকরণ কর্মসূচি। কিন্তু মৃতু্যর মিছিল তাতে থামানো যায়নি। গ্রামাঞ্চলে বড় বড় গাছ কমে যাওয়াসহ কৃষিতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও মুঠোফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি বজ্রপাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে মানুষের অসচেতনতাও রয়েছে। বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে তালগাছ লাগানো একটা ভালো সমাধান। তবে এটা বেশ সময়সাপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। প্রযুক্তিগত সহায়তা আরও বাড়ানোর কথা এ ক্ষেত্রে ভাবা যেতে পারে। কোথায় কখন বজ্রপাত হতে পারে, ওই প্রযুক্তির সাহায্যে ৪০ মিনিট আগেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় মুঠোফোনের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা সম্ভব। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিনির্ভর এই 'লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর' কাজে লাগাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এই প্রযুক্তির সহায়তা নিতে মার্কিন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে। যদিও এই প্রযুক্তিতে ব্যয় একটু বেশি। বজ্রপাত যেহেতু প্রাকৃতিক এটা হবেই, তবে কম অথবা বেশি। বজ্রপাত রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণই বজ্রপাতে মৃতু্যর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।