বিজ্ঞানের যত কথা

কলেরা

প্রকাশ | ২২ মে ২০২০, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। যা পাশ্চাত্যে এশীয় কলেরা নামেই বেশি পরিচিত। ভিব্রিও কলেরি নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। ঠরনৎরড় পযড়ষবৎধব নামক জীবাণুটি ক্ষুদ্রান্তের প্রদাহজনিত সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে শরীর থেকে ঘনঘন চাল ধোয়া পানির মতো মলত্যাগের সঙ্গে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। ১৮৮৩ সালে বিজ্ঞানী কক ঠরনৎরড় পযড়ষবৎধব জীবাণু আবিষ্কার করেন। এটি একটি কমা (,) আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। যা দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর এ জীবাণু ক্ষুদ্রান্ত্রের গায়ে লেগে যায় এবং সেখানে দ্রম্নত বংশবৃদ্ধি করে। এ সময় জীবাণু বিষ উৎপন্ন করে। এ বিষ রিসেপ্টরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্যাংলিওসাইড নামে ক্ষুদ্রান্তের ভিলাইগুলোতে অবস্থান করে। এর ফলে জীবাণুর বসবাসের স্থানে ব্যাপকভাবে এডেনাইলেট সাইক্লেজ এনজাইমের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। এ এনজাইম মূলত সাইক্লিক এএমপি তৈরির জন্য দায়ী যেটি ভয়ঙ্করভাবে অন্ত্রের নাড়াচাড়া বৃদ্ধি করে যার ফলে প্রচুর পাতলা পায়খানা হয়। কলেরা রোগের কারণে শরীরে যে পানিশূন্যতা দেখা দেয় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় রক্তনালিকার মাধ্যমে বা মুখে বা শরীরে তরল পদার্থ প্রবিষ্ট করিয়ে, যাতে থাকে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড আয়ন, গস্নুকোজ এবং অল্প পরিমাণ বাইকার্বনেট। ভিব্রিও কলেরি কলেরা টক্সিন নামের অ্যান্টেরোটক্সিন তৈরি করে যার ক্রিয়ায় খাদ্যনালির দেওয়ালের আবরণী কলা থেকে বেশি পরিমাণ ক্লোরাইড ও জল বের হতে থাকে যা পাতলা জলের মতো পায়খানা গঠন করে। জোরালো সংক্রমণ ও টক্সিনের বিষক্রিয়া হলে কলেরার প্রাণঘাতী ক্রিয়ায় ১ ঘণ্টায় একজন সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে যেতে পারে ও ২-৩ ঘণ্টায় মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণ মাঝারি মাপের সংক্রমণে ৪-১২ ঘণ্টায় শক এবং পরবর্তী দেড় দিন বা কয়েক দিনের মধ্যে মৃতু্য হতে পারে। রোগের কারণগুলো: সাধারণত আক্রান্ত রোগীর মলের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। সাধারণত পয়ঃপ্রণালির সুষ্ঠু ব্যবস্থার অভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির মল, খাবার ও পানির সংস্পর্শে এসে খাবার ও পানিকে দূষিত করে। পরে ওই খাবার ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে কলেরার জীবাণু সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে আক্রান্ত করে। সাধারণত যে কোনো পরিবেশেই কলেরার জীবাণু দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। এছাড়া খারাপ স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পেটে এসিডের মাত্রা কমে যাওয়া বা ঘাটতি থাকলে, সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস, কাঁচা ও আধাসেদ্ধ খাবার খাওয়া এসব কারণে অনেক সময় কলেরা হয়ে থাকে। লক্ষণ ও উপসর্গ: দূষিত জল খাবার ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে কলেরার উপসর্গ ফুটে ওঠে। সংক্রমিত ব্যক্তির মলের মধ্যদিয়ে ১-১০ দিন পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া বের হয়। যার মাধ্যমে অন্যান্য ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হ পাতলা পায়খানা হ বমি হওয়া হ দেহে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া হ পেশিতে ব্যথা হ শক হ ইলেক্ট্রোলাইট দেহে খনিজ পদার্থের ভারসাম্যহীনতা হ শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত চেতনার পরিবর্তন, মৃগী ও কোমা প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়। অতি দ্রম্নত চিকিৎসা করা না গেলে শরীরে পানিশূন্যতার অভাবে মৃতু্য হতে পারে। প্রতিকার : হ খাবার আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে হ বাইরে বের হলে হাত ধোয়ার জন্য স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হ ফুটানো পানি ব্যবহার করে খাবার রান্না করা হ আধ সেদ্ধ খাবার খাওয়া খেকে বিরত থাকা হ দুগ্ধজাত পণ্য খাবার সময় ভালো কিনা তা যাচাই করা হ বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে হ নোংরা ও বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা চিকিৎসা:রক্তপরীক্ষা, রক্তের গস্নুকোজের মাত্রা সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করা, কিডনির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা ও পায়খানার নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের মাত্রা অর্থাৎ কতটা ক্ষতিকারক তা নির্ণয় করা যায়। রোগীকে ওরাল সলিউশন, ইনট্রাভেনাস ফ্লুইডস, অ্যান্টিবায়োটিক, জিঙ্ক সাপিস্নমেন্টস প্রভৃতি প্রয়োগ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশ এ রোগটিকে পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, রক্তনালির মধ্যে তরল প্রবেশ করানোর পাশাপাশি মুখের ওরস্যালাইন ও তরল গ্রহণ পদ্ধতি উন্নয়নের মাধ্যমে শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখা, কলেরা জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার উন্নয়ন করা। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) প্রতিষ্ঠিত হয় যা এককভাবে কলেরা এবং পাতলা পায়খানাজনিত এবং সংশ্লিষ্ট রোগ ও চিকিৎসা গবেষণার জন্য কাজ করে।