বিজ্ঞানের যত কথা

যক্ষ্ণা

প্রকাশ | ০১ জুন ২০২০, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়
যক্ষ্ণা (ঞটইঊজঈটখঙঝওঝ বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ। যার কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামের জীবাণু। সারা বিশ্বে এই রোগে প্রতি বছর মারা যান ২২ লাখ মানুষ।'যক্ষ্ণা' শব্দটা এসেছে 'রাজক্ষয়' থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন। যক্ষ্ণা প্রায় যে কোনো অঙ্গে হতে পারে (ব্যতিক্রম কেবল হৃৎপিন্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশি ও থাইরয়েড গ্রন্থি)। যক্ষ্ণা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ফুসফুসে। টিকা বা ভ্যাকসিনেশনে মধ্যে দিয়ে যক্ষ্ণা প্রতিরোধ করা যায়। রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ : -ফুসফুসে যক্ষ্ণা হলে হালকা জ্বর ও কাশি হতে পারে। -কাশির সঙ্গে গলার ভিতর থেকে থুতুতে রক্তও বেরোতে পারে। -মুখ না ঢেকে কাশলে যক্ষ্ণা সংক্রমণিত থুতুর ফোঁটা বাতাসে ছড়ায়। আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে। -বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট হিসেবে ৫-৬ মাস জ্বর থাকার মূল কারণ এই টিবি। -সাধারণত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি-জ্বর- কাশির সঙ্গে কফ এবং মাঝেমধ্যে রক্ত বের হওয়া। -ওজন কমে যাওয়া -বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষ্ণার প্রধান উপসর্গ। যক্ষ্ণা ফুসফুস থেকে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এবং বাচ্চাদের। তখন একে অশ্বাসতন্ত্রীয় যক্ষ্ণা' বলা হয়, যেমন- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে মেনিনজাইটিস, লসিকাতন্ত্রে স্ক্রফুলা, প্রজননতন্ত্রে প্রজননতন্ত্রীয় যক্ষ্ণা, পরিপাকতন্ত্রে পরিপাকতন্ত্রীয় যক্ষ্ণা এবং অস্থিকলায় পটস ডিজিস। বিশেষ ধরনের ছড়িয়ে যাওয়া যক্ষ্ণাকে বলা হয় মিলিয়ারি যক্ষ্ণা। জীবাণু শরীরে ঢুকলেই সবার যক্ষ্ণা হয় না। যাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের যক্ষ্ণা বেশি হয়। যক্ষ্ণা কীভাবে ছড়ায় : বাতাসের মাধ্যমে যক্ষ্ণা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষ্ণা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মেশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়। রোগ নির্ণয় : যক্ষ্ণার লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো- সাধারণ লক্ষণ : অস্বাভাবিকভাবে ওজন হ্রাস পাওয়া, অবসাদ অনুভব করা, জ্বর, রাতে ঘাম হওয়া, কাঁপুনি, ক্ষুধা মন্দা। অন্যান্য লক্ষণ : তিন সপ্তাহ বা এর অধিক সময় ধরে কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথা অথবা শ্বাস নেওয়ার সময় ও কাশির সময় ব্যথা হওয়া। যক্ষ্ণা প্রতিরোধ করার উপায় : ১। জন্মের পর পর প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেয়া ২। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করা ৩। যেখানে-সেখানে থুতু না ফেলা ৪। রোগীর কফ থুতু নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। যক্ষ্ণা রোগের চিকিৎসা : যখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক যক্ষ্ণা রোগের সব জীবাণু ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয় তখনই ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্ণার সৃষ্টি হয়। ওষুধ প্রতিরোধক যক্ষ্ণার মূল কারণগুলো হলো- পর্যাপ্ত চিকিৎসা গ্রহণ না করা ভুল ওষুধ সেবন চিকিৎসার কোর্স সম্পূর্ণ না করা। বাংলাদেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স জেলা সদর হাসপাতাল বক্ষব্যাধি ক্লিনিক/হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্ণার চিকিৎসা করা হয় ও ওষুধ দেওয়া হয়। টিবির ওষুধ : প্রথম সারির ওষুধ- রিফাম্পিসিন, আইসোনিয়াজিড, পাইরাজিনামাইড, ইথামবু্যটল, স্ট্রেপ্টোমাইসিন। দ্বিতীয় সারির ওষুধ- ওফ্লক্সাসিন, রিফাবিউটিন, ইথিওনামাইড, সাইক্লোসেরিন, প্যারা অ্যামিনো স্যালিসিলেট। যক্ষ্ণার জীবাণু ছড়ানো প্রতিরোধের উপায় : ১. হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল দেওয়া, না হলে অন্তত হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা সবার থেকে দূরে গিয়ে কাশি দেওয়া। ২. যেখানে-সেখানে থুতু-কফ না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে ভালোভাবে জায়গাটি পরিষ্কার করা বা মাটি চাপা দেয়া। ৩. কারও মুখের সামনে গিয়ে কথা না বলা অথবা যক্ষ্ণা জীবাণুমুক্ত রোগীর সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলা। ৪. যক্ষ্ণা রোগীর আক্রান্ত স্থান, সুস্থ ব্যক্তির ক্ষত স্থানের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা। ৫. পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ৬. রোগী জীবাণুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। ৭. থ্রিএইচটি প্রতিরোধক থেরাপির মাধ্যমে এই জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে রোগীকে রিফাপেন্টিং নামে একটি ওষুধ প্রতিমাসে একবার করে তিন মাস খেতে হয়।