বিজ্ঞানের যত কথা

অর্ধপরিবাহী

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়
অর্ধপরিবাহী (ঝবসরপড়হফঁপঃড়ৎ) এক বিশেষ ধরনের পদার্থ, যাদের তড়িৎ পরিবাহিতা পরিবাহী (ঈড়হফঁপঃড়ৎ) এবং অন্তরকের (ওহংঁষধঃড়ৎ) মাঝামাঝি। সিলিকন, জার্মেনিয়াম, ক্যাডমিয়াম সালফাইড, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ। কোন পদার্থ কতটুকু তড়িৎ পরিবহন করতে সক্ষম তা তাদের আপেক্ষিক রোধের মানের ওপর নির্ভর করে। যার আপেক্ষিক রোধ যত বেশি তার পরিবাহিতা তত কম। যেমন- স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কাচের (অন্তরক) আপেক্ষিক রোধ ১০১৬ ওহম-মিটার আর তামার (পরিবাহী) হলো ১০-৮। অর্ধপরিবাহীর আপেক্ষিক রোধের গড় মান এদের মাঝামাঝি (সাধারণত ১০-৫ থেকে ১০৮ এর মধ্যে)। আধুনিক যুগে প্রযুক্তির প্রভূত অগ্রগতির মূলে রয়েছে এই অর্ধপরিবাহী। কারণ এটি দিয়েই প্রথমে ডায়োড এবং পরবর্তীতে ট্রানজিস্টর নির্মিত হয়। আর এদের হাত ধরেই যাত্রা শুরু হয় আধুনিক ইলেকট্রনিক্স যুগের। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে এর বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আর বিজ্ঞানের যে শাখায় এ নিয়ে আলোচনা করা হয় তা হলো কঠিন অবস্থা পদার্থবিজ্ঞান। অর্ধপরিবাহীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একে উত্তপ্ত করা হলে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। তাই উচ্চ তাপমাত্রায় এটি সুপরিবাহীর মতো আচরণ করে। অথচ সুপরিবাহীকে উত্তপ্ত করলে তার পরিবাহিতা কমে যায়। এর সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কোনো বিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহীর সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো অপদ্রব্যের খুব সামান্য পরিমাণ (এক কোটি ভাগে এক ভাগ) যোগ করলে তার রোধ অনেকগুণ কমে যায়, ফলে পরিবাহিতা বেড়ে যায় অনেকগুণ। এভাবে অপদ্রব্য মেশানোর প্রক্রিয়াকে বলে ডোপায়ন। এই ডোপায়নের মাধ্যমেই ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ করা হয়। সংজ্ঞা : সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী এমন একটি পদার্থ যার কন্ডাক্টিভিটি কন্ডাক্টারের তুলনায় কম এবং ইন্সুলেটরের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ এটি পরিবাহীও নয় আবার অপরিবাহীও নয়। সেমিকন্ডাক্টরের রেজিস্ট্যান্স (রোধ) ০.৫ ওহম থেকে ৫০ ওহমের মধ্যে হয়ে থাকে। যেমন- সিলিকন, জ্যামেনিয়াম, কার্বন ইত্যাদি। বৈশিষ্ট্য : সেমিকন্ডাক্টরের রেজিস্টিভিটি কন্ডাক্টর এবং ইন্সুলেটরের মাঝামাঝি। এর শেষ স্তরে চারটি ইলেকট্রন থাকে। এর কন্ডাক্টিভিটি তুলনায় কম এবং ইন্সুলেটরের তুলনায় বেশি। অর্ধপরিবাহী প্রয়োজনীয় পদার্থ মিশ্রিত করে কারেন্টপ্রবাহ কমানো বা বাড়ানো যায়। প্রকারভেদ : অর্ধপরিবাহী মূলত দুই প্রকার। ১. ইনট্রিনসিক (খাঁটি) সেমিকন্ডাক্টর : সিলিকন ও জ্যামেনিয়ামকে খাঁটি সেমিকন্ডাক্টর বলা হয়। এটিতে কোনো ভেজাল থাকে না। ২. ইক্সট্রিনসিক (ভেজাল মিশ্রিত) সেমিকন্ডাক্টর : খাঁটি সেমিকন্ডাক্টরের সঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণ অন্য কোনো ভেজাল পদার্থ মিশ্রিত করে ভেজাল সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করা হয়। ত্রিযোগী এবং পঞ্চযোগী মৌল গেলিয়াম, ইন্ডিয়াম ইত্যাদির সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর পদার্থ মিশ্রিত করলে অনেক ফ্রি ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। ইক্সট্রিনসিক সেমিকন্ডাক্টর দুই ধরনের। চ- :ুঢ়ব ও ঘ- :ুঢ়ব। চ- :ুঢ়ব হলো এমন এক ধরনের সেমিকন্ডাক্টর যার হোলের সংখ্যা ইলেকট্রনের সংখ্যার চেয়ে বেশি। ঘ- :ুঢ়ব এখানে হোলের সংখ্যা ইলেকট্রনের সংখ্যার চেয়ে কম। গাঠনিক বৈশিষ্ট্য: অর্ধপরিবাহীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ভূমিকায় উলেস্নখ করা হয়েছে। প্রথমত, পরিবাহী পদার্থে যেখানে তাপমাত্রা বাড়ালে পরিবাহিতা হ্রাস পায় অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় সামান্য অপদ্রব্য যোগ করলে এদের পরিবাহিতা উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পরিবাহী পদার্থের সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে একটি, দুটি বা সর্বোচ্চ তিনটি ইলেকট্রন থাকে। বহিঃস্তরের এই ইলেকট্রনগুলো পরমাণু কেন্দ্রের সঙ্গে বেশ দুর্বলভাবে সংযুক্ত থাকে। এই সর্ববহিস্থ তথা যোজন স্তরের ইলেকট্রনগুলো অন্য পরমাণুর অসম্পূর্ণ কক্ষপথ পূর্ণ করার জন্য নিজ পরমাণু ছেড়ে চলে যায়। এভাবে আয়নিক বন্ধন গঠিত হয়। এভাবে পরিবাহীর অভ্যন্তরের ইলেকট্রনগুলো এক পরমাণু থেকে আরেক পরমাণুতে ভ্রমণ করতে পারে। আর এ কারণেই এদের মধ্যদিয়ে বিদু্যৎ প্রবাহিত হয়, ইলেকট্রনের প্রবাহই তো আসলে বিদু্যৎ। মূলত যোজন ইলেকট্রনের স্বাধীন চলাচলেই পরিবহন ঘটে। কিন্তু অপরিবাহী পদার্থের সর্ববহিস্থ শক্তিস্তর ইলেকট্রন দ্বারা প্রায় পূর্ণ থাকে। উলেস্নখ্য, বহিস্থ স্তরে আটটি ইলেকট্রন থাকলে তা সুস্থিতি লাভ করে; আর অপরিবাহীতে আটটি বা এর কাছাকাছি সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে। তাই এদের যোজন ইলেকট্রন পরিবহনে অংশ নিতে পারে না, তারা নিজ নিজ পরমাণুতে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। অন্যদিকে অর্ধপরিবাহী পদার্থ যেমন জার্মেনিয়াম বা সিলিকন পরমাণুর বাইরের কক্ষে চারটি ইলেকট্রন থাকে। আটটি পূর্ণ করতে হলে তার প্রয়োজন আরও চারটি ইলেকট্রন। তারা বাকি চারটি ইলেকট্রন অর্জন করে আশপাশের অন্য পরমাণু থেকে। তবে পাশের পরমাণু তাদের ইলেকট্রন একেবারে দিয়ে দেয় না বরং ভাগাভাগি করে। একে অন্যের চারটি করে পরমাণু ভাগাভাগি করে। ফলে দুজনেই বহিস্থ কক্ষে আটটি করে ইলেকট্রন পায় এবং স্থিতি অর্জন করে। এভাবে তাদের মধ্যে যে বন্ধনের সৃষ্টি হয় তাকে বলে সমযোজী বন্ধন।