শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ক্যালসিয়াম

বিজ্ঞানের যত কথা

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

ক্যালসিয়াম হচ্ছে ঈধ প্রতীকযুক্ত একটি মৌলিক পদার্থ, যার পারমাণবিক সংখ্যা ২০। ক্যালসিয়াম একটি ক্ষারীয় ধাতব পদার্থ। এ জন্য ক্যালসিয়াম বেশ প্রতিক্রিয়াশীল ধাতু, যা বায়ুর সংস্পর্শে আসার পরে গাঢ় অক্সাইড-নাইট্রাইড স্তর গঠন করে। এর গাঠনিক ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলোর অধিকাংশই মিলে যায় এর চেয়ে কিছু ভারি ও সদৃশ্য মৌল স্ট্রন্টিয়াম এবং বেরিয়ামের সঙ্গে। পরিমাণের দিক থেকে এটি পৃথিবীর ভূত্বকের উপাদানগুলোর ভেতরে পঞ্চম অবস্থানে আছে। একই সঙ্গে প্রাচুর্যের দিক থেকে পৃথিবীতে প্রাপ্ত ধাতুগুলোর ভেতরে এটি তৃতীয় অবস্থানে আছে, অর্থাৎ লোহা এবং অ্যালুমিনিয়ামের পরই এর অবস্থান। পৃথিবীতে সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায় এমন ক্যালসিয়াম যৌগটি হলো ক্যালসিয়াম কার্বোনেট- যা চুনাপাথর নামে পরিচিত। এটি সমুদ্রেপ্রাপ্ত জীবাশ্মের অবশিষ্টাংশে পাওয়া যায়, যে জীবাশ্মগুলো সৃষ্ট হয়েছিল সমুদ্র সৃষ্টির প্রারম্ভিক সময়ে। এর পাশাপাশি জিপসাম, অ্যানহাইড্রাইট, ফ্লোরাইট এবং অ্যাপাটাইট ক্যালসিয়াম উৎস। ক্যালসিয়াম নামটি ল্যাটিন শব্দ ঈধষী খরসব থেকে এসেছে। তৎকালে চুনাপাথরকে উত্তপ্ত করলে এটি পাওয়া যেত।

কিছু ক্যালসিয়াম যৌগ প্রাচীন মানুষের কাছে পরিচিত ছিল, যদিও তাদের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সতেরো শতক পর্যন্ত অজানাই ছিল। ১৮০৮ সালে হামফ্রে ডেভি ক্যালসিয়াম অক্সাইড যৌগের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ ক্যালসিয়ামকে প্রথমবারের মতো পৃথক করেন। তিনিই এই উপাদানটির নাম ক্যালসিয়াম রেখেছিলেন। ক্যালসিয়াম যৌগগুলো বিভিন্ন শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: ঔষধশিল্পে মানবদেহের পরিপূরক খাদ্য হিসেবে, কাগজশিল্পে বিস্নচ হিসেবে, সিমেন্ট ও বৈদু্যতিক ইনসুলেটরের উপাদান হিসেবে এবং সাবান তৈরিতে ক্যালসিয়াম দরকার হয়। অন্যদিকে, বিশুদ্ধ ক্যালসিয়ামেরও সীমিত কিছু ব্যবহার রয়েছে, কারণ এটি অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল। ইস্পাত তৈরিতে মিশ্রণকারী উপাদান হিসেবে সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম ব্যবহৃত হয়। আবার, গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতেও ক্যালসিয়াম ও সিসার সংকর ব্যবহৃত হয়।

মানবদেহে পাওয়া যায় এমন উপাদানগুলোর মধ্যে, মৌলের দিক থেকে ক্যালসিয়ামের অবস্থান পঞ্চম এবং ধাতুর দিক থেকে প্রথম। ক্যালসিয়াম আয়নগুলো জীব এবং জীবকোষের শরীরবৃত্তীয় এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানবদেহের হাড় গঠনে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ক্যালসিয়াম হলো একটি খুব নমনীয় রৌপ্য রঙের ধাতু। এই রঙকে কখনো কখনো ফ্যাকাশে হলুদও বলা হয়ে থাকে। ক্যালসিয়ামের সঙ্গে পর্যায় সারণিতে একই গ্রম্নপে অবস্থানকারী স্ট্রন্টিয়াম, বেরিয়াম এবং রেডিয়াম ইত্যাদি ভারি ধাতুর অনেক মিল আছে। একটি ক্যালসিয়াম পরমাণুতে বিশটি ইলেকট্রন থাকে।

ভৌত বৈশিষ্ট্য : ক্যালসিয়াম ধাতুটি ৮৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গলে যায় এবং ১৪৯৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয়। এই মানগুলো নিকটবর্তী ম্যাগনেসিয়াম এবং স্ট্রন্টিয়ামের চেয়ে বেশি। এটির স্ফটিক স্ট্রন্টিয়ামের মতো, মুখকেন্দ্রিক ঘনক বিন্যাসে বিন্যস্ত। এর ঘনত্ব ১.৫৫ গ্রাম/ ঘনসেন্টিমিটার- যা নিজ গ্রম্নপের মধ্যে সবচেয়ে কম। ক্যালসিয়াম সিসার চেয়ে শক্ত, তবে একটু জোর খাটালে ছুরি দিয়ে কাটা যায়। স্বল্প ঘনত্বের কারণে বিদু্যৎ পরিবাহক হিসেবে এটি তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় কম শক্তিশালী।

রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য

ক্যালসিয়াম একটি ভারি ক্ষারীয় ধাতু। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালসিয়াম স্বতঃস্ফূর্তভাবে পানির সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের চেয়ে দ্রম্নত এবং ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্ট্রন্টিয়ামের চেয়ে কম দ্রম্নত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটি বাতাসে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের সঙ্গে যথাক্রমে ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও ক্যালসিয়াম নাইট্রাইডের মিশ্রণ তৈরি করে। বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৩০%-এর চেয়ে কম হলে ক্যালসিয়ামকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113653 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1