বারকোড

বিজ্ঞানের যত কথা

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
বারকোড হলো তথ্য সংগ্রহের একটি ভিজুয়াল পদ্ধতি। যা মেশিনযোগে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এটি সাধারণত এর ধারণকারী জিনিস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। গতানুগতিক বারকোড হলো কিছু অঙ্কিত সমান্তরাল লাইন- যার প্রস্থ এবং মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গার তারতম্য ভিন্ন ভিন্ন তথ্যের প্রতিনিধিত্ব করে; এটি রৈখিক বা একমাত্রিক ব্যবস্থা। পরবর্তী সময়ে আয়তক্ষেত্র, বিন্দু, ষড়ভুজসহ অন্যান্য জ্যামিতিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বারকোড ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। যাকে ম্যাট্রিক্স কোড বা দ্বিমাত্রিক বারকোড বলা হয়। যদিও তাতে প্রকৃতপক্ষে বার বা সরলরেখা ব্যবহৃত হয় না। প্রাথমিকভাবে বারকোড স্ক্যানার নামে বিশেষ অপটিক্যাল স্ক্যানার দিয়ে বারকোড স্ক্যান করা হতো। পরবর্তী সময়ে এমন কিছু সফটওয়ার তৈরি হয়েছে- যা ক্যামেরা সংবলিত স্মার্টফোনের ধারণকৃত ছবি পড়তে পারে। নরম্যান জোসেফ ও বারনার্ড সিলভার বারকোড আবিষ্কার করেন। এটি ১৯৫১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পেটেন্ট করা হয় (টঝ২৬১২৯৯৪অ)। এই আবিষ্কার হয়েছিল মোর্স কোডের ওপর ভিত্তি করে, যা ছিল পাতলা এবং পুরু দাগের রূপায়ন। শিল্প ক্ষেত্রে বারকোডের প্রাথমিক ব্যবহারে ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে আমেরিকান রেলপথ অ্যাসোসিয়েশন প্রণোদনা দেয়। জেনারেল টেলিফোন ও ইলেক্ট্রনিক্স এবং কারট্রাক এসিআই দ্বারা তৈরিকৃত এই প্রকল্পের মাধ্যমে রেলপথের রোলিং স্টকে স্টিলের ওপর বিভিন্ন রঙবিশিষ্ট ডোরা দেয়া হয়েছিল। একটি গাড়ির উভয়দিকে একটি করে পেস্নট ব্যবহার করা হয়েছিল। যাতে ছিল মালিকানা, যানের ধরন, শনাক্তকরণ চিহ্নের তথ্য। একটি ট্রাকসাইড স্ক্যানার দ্বারা সেই পেস্নটগুলো শনাক্ত করা হতো। বারকোড বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যখন এটি বিভিন্ন সুপার মার্কেটে স্বয়ংক্রিয় চেকআউট-এর জন্য ব্যবহার শুরু হয় এবং অন্যান্য কাজে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। যাকে স্বয়ংক্রিয় তথ্য শনাক্তকরণ এবং সংগ্রহকরণ ও বলা যায়। বর্তমানে সর্বত্র ব্যবহৃত সার্বজনীন পণ্য নম্বরের প্রথম শনাক্তকরণ ছিল ১৯৭৪ সালে রাইগলি কোম্পানির চুইংগামের প্যাকেটে। কিউআর কোড নামে এক ধরনের দ্বিমাত্রিক বারকোড বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। স্বয়ংক্রিয় তথ্য শনাক্তকরণ এবং সংগ্রহকরণ ব্যবস্থায় যদিও বারকোডসহ আরো অনেক পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। কিন্তু বারকোড ব্যবস্থা সহজ, সার্বজনীন এবং স্বল্পমূল্যবান হওয়ার কারণে অন্যান্য ব্যবস্থা গৌণই থেকে গেছে। বিশেষ করে ১৯৯৫ সালের আগে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশনের মতো প্রযুক্তি সুলভ হওয়ার কারণে। ইতিহাস:১৯৪৮ সালে ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভেনিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্র বারনার্ড সিলভার স্থানীয় খাদ্য শৃঙ্খলের প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করার পর স্বয়ংক্রিয় পণ্য শনাক্তকরণের ওপর গবেষণা করার জন্য অনুমতি নেন। সিলভার তার বন্ধু নরম্যান জোসেফকে এ সম্পর্কে জানান এবং এর বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তারা প্রথমে অতিবেগুনী রঙের কালী ব্যবহার করেন কিন্তু এটি সহজে হালকা হয়ে যাচ্ছিল এবং এর দাম ছিল চওড়া। ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে উডল্যান্ড ফ্লোরিডাতে তার বাবার অ্যাপার্টমেন্টে চলে গিয়েছিলেন কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তার পদ্ধতির আরও উন্নয়ন সম্ভব। তিনি তার কাজ চালিয়ে যান। তিনি পরবর্তী অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মোর্স কোড থেকে। সমুদ্রসৈকতের বালিতে তিনি তার প্রথম বারকোড তৈরি করেন। কোড পড়ার জন্য তিনি সিনেমার অপটিক্যাল সাউন্ডট্রাক প্রযুক্তি গ্রহণ করেন। এক সাইড থেকে কাগজের মধ্য দিয়ে ৫০০ ওয়াট ক্ষমতার একটি লাইট বাল্বের আলোর মাধ্যমে একটি জঈঅ৯৩৫ ফটোমাল্টিপস্নায়ার আলোকিত করে। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে যদি এটি লাইনের বদলে বৃত্ত হিসেবে মুদ্রণ করা যায় তবে তা ভালো কাজ করবে যে কোনো দিক থেকে স্ক্যান করার জন্য। ১৯৪৯ সালের ২০ অক্টোবর উডল্যান্ড এবং সিলভার "ঈষধংংরভুরহম অঢ়ঢ়ধৎধঃঁং ধহফ গবঃযড়ফ" এর জন্য একটি পেটেন্ট আবেদন করেন, যাতে রৈখিক এবং বুল'স আইয়ের নকশা মুদ্রণে বর্ণিত ছিল। পাশাপাশি তা পড়ার জন্য যান্ত্রিক এবং বৈদু্যতিক ব্যবস্থাও তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর পেটেন্টটি ইসু্য করা হয়। ১৯৫১ সালে উডল্যান্ড আইবিএমে এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের ব্যবস্থাটি উন্নয়ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। আবিষ্কারের একেবারে প্রথম দিকে বারকোড ব্যবহার করা হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় গাড়ি উৎপাদন কারখানায়। জেনারেল টেলিফোন অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বারকোডের একটা প্রাথমিক সংস্করণ ব্যবহার করেছিল। সে সময় এর নাম দেওয়া হয়েছিল কারট্রেক এসিআই (অটোমেটিং কার আইডেন্টিফিকেশন)। ধীরে ধীরে অন্য নানা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। বারকোড হলো মেশিন-রিডেবল কোনো পণ্যতে মুদ্রিত বিভিন্ন প্রস্থের সমান্তরাল রেখার প্যাটার্ন। একটি বারকোড মূলত ভিজু্যয়াল প্যাটার্নে রাখা কিছু তথ্য- যা শুধু মেশিন পড়তে পারে। কালো সাদা মিশ্রিত বারসমূহের যে প্যাটার্নটি আমরা বারকোডে দেখতে পাই সেগুলো একটি এলগোরিদম মেনে চলে। বারকোডে সাধারণত পণ্যের তথ্য থাকে যেমন: পণ্যের মূল্য ও ওজন, উৎপাদনের ও সমাপ্তির (মেয়াদ) তারিখ, প্রস্তুতকারকের নাম ইত্যাদি। আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যেকটি পণ্যের বারকোড ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে পণ্য ছাড়াও আরো অনেক কাজেই বারকোড ব্যবহার করা হয়।