পাকবাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে
আজ তোমাদের জন্য সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো
ঘ. 'ফটিকের পরিণতি আর মিনুর পরিণতি ভিন্ন'্তউক্তিটি বিচার করো।
উত্তর : উদ্দীপকের ফটিক যে প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে পারেনি, মিনু তা পেরেছে বলে উভয়ের পরিণতি ভিন্ন-মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকের ফটিক নতুনের আকর্ষণে মামাবাড়িতে এসে মামির অনাদর, অবজ্ঞা পেয়ে অসময়ে পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেয়।
অন্যদিকে 'মিনু' গল্পের ১০ বছরের অনাথ, বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী মিনু তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে গৃহীত হয় পেট ভাতায় ২৪ ঘণ্টার চাকরানি হিসেবে; কিন্তু সেই জীবনকে মিনু সহজভাবে গ্রহণ করতে পেরেছিল শুধু নিজের ভেতরে একটা আলাদা জগৎ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল বলে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে সে শুকতারাকে সই, কয়লা ও মিটসেফকে শত্রম্ন, রান্নাঘরের বাসনকে বন্ধু বানিয়ে তাতে নতুনরূপে নতুন রং আরোপ করে আনন্দে ডুবে থাকে। হলদে পাখি দেখে তার মনে পুলক জাগে। পাশের বাসার কোনো এক প্রবাসী পিতার আগমন লক্ষ্য করে সে মনে করে একদিন তার বাবাও ফিরে আসবে। পিতার জন্য মনে মনে অপেক্ষা করে সে। একদিন সত্যিই যখন হলদে পাখি কাঁঠালগাছের সরু ডালে বসে, তখন তার ধারণা হয়, তার বাবা নিশ্চয়ই এসেছে। সে জ্বর গায়েই বাইরে ছুটে যায়- তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে।
উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে পারেনি বলে উদ্দীপকের ফটিককে অকালে মৃতু্যকে বরণ করে নিতে হয়েছে আর গল্পের মিনু তার স্বপ্ন ও কল্পনা দিয়ে তা অতিক্রম করতে পেরেছে বলে উভয়ের পরিণতি হয়েছে ভিন্নতর।
৪. নিচের অনুচ্ছেদটুকু পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন জামাল সাহেব। তাকে ঘিরে ছোট একটা জটলা। তিনি চা পানের ফাঁকে ফাঁকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলছিলেন। তিনি ২৫ মার্চ কালরাত সম্পর্কে বললেন, 'পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরীহ বাঙালিদের ওপর। নির্বিচারে সংঘটিত হলো ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম নৃশংস হত্যাকান্ড।'
প্রশ্ন : ক. সাবুর গ্রামের নাম কী?
প্রশ্ন : খ. সবাই শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছিল কেন?
প্রশ্ন : গ. উদ্দীপক ও 'তোলপাড়' গল্পের কোথায় মিল রয়েছে, ব্যাখ্যা করো।
প্রশ্ন : ঘ. 'নির্বিচারে সংঘটিত হলো ইতিহাসের ভয়াবহ নির্মম নৃশংস হত্যাকান্ড'- তোলপাড় গল্পের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর-ক : সাবুর গ্রামের নাম গাবতলী।
উত্তর-খ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্মমভাবে হত্যা করে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক-যুবতীদের। তাদের এই নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। সারা দেশেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে যায়। মানুষজন নিরুপায় হয়ে শহর ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাই শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যাত্রা করে গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সব শ্রেণির হাজার হাজার মানুষ।
উত্তর-গ : উদ্দীপক ও 'তোলপাড়' গল্পে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তত্মানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উদ্দীপক ও 'তোলপাড়' গল্পে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
'তোলপাড়' গল্পটি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের পটভূমি নিয়ে রচিত। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত বাঙালিরা শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে যাত্রা করে। উদ্বাস্তু এই পথিকদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। রোদের মধ্যে দীর্ঘ পথ হাঁটার পর মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মানুষ কাতর হয়ে পড়ে। অনেকের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এমনকি পথিমধ্যে কারও কারও মৃতু্যও হয়।
উদ্দীপকে জামাল সাহেব চা পান করতে করতে গ্রামের মানুষকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের ভয়াবহতার কথা বলেন। উভয় ক্ষেত্রেই সেই রাতের গা শিউরে ওঠা ভয়াবহ অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে, যা নিরস্ত্র, নিরীহ বাঙালিদের অসহায়ভাবে সহ্য করতে হয়েছে অথবা বরণ করে নিতে হয়েছে মৃতু্যকে।