ষষ্ঠ শ্রেণির পড়াশোনা

বাংলা প্রথমপত্র

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মো. ইমরান হোসেন, সহকারী শিক্ষক, ইস্টার্ন ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা য়
মানুষ জাতি
৮. নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। শুনহ মানুষ ভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই, জাতপাত যাই নিয়ে গর্ব করি না কেন ভাই আসল সত্য আমরা সবাই মানুষ, সৃষ্টির সেরা তাই। প্রশ্ন : ক. 'মানুষ জাতি' কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন : খ. 'একই পৃথিবীর স্তন্যে লালিত'- লাইনটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? প্রশ্ন : গ. উদ্দীপক ও 'মানুষ জাতি' কবিতার মধ্যে কী মিল রয়েছে- ব্যাখ্যা করো। প্রশ্ন : ঘ. কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভিতরে সবারই সমান রাঙা- উদ্দীপকের আলোকে চরণটি ব্যাখ্যা করো। উত্তর-ক : 'মানুষ জাতি' কবিতাটি অভ্র আবীর কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। উত্তর-খ : মায়ের দুধ পান করে সন্তান-সন্ততিরা যেমন বড় হয়ে ওঠে, তেমনি পৃথিবীর সব জাতি, ধর্ম ও গোত্রের মানুষ একই পৃথিবীর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে প্রতিপালিত হচ্ছে। মা যেমন তার সন্তানদের ভালোবাসা দিয়ে দুধ পান করিয়ে পরম যত্নের মাধ্যমে বড় করে তোলেন, তেমনিভাবে পৃথিবীও প্রবল ভালোবেসে সব মানবসন্তানকে খাদ্য ও পানীয় সমানভাবে জোগান দিয়ে থাকে। উত্তর-গ : 'মানুষ জাতি' কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মানবপ্রেমের দিকটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকেও মানুষ জাতি 'সর্বশ্রেষ্ঠ'্তএ সত্যটি প্রকাশিত হয়েছে। কবি 'মানুষ জাতি' কবিতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের আসল পরিচয়কে অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব মানুষের দেহে লাল রক্তকণিকা বইছে। কালো আর সাদা কেবল বাইরের দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়। পৃথিবীতে যে যেখানেই বসবাস করে না কেন, সবারই একটি পরিচয়। সেটি হলো মানুষ। তা ছাড়া সব মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা, শীত, গরমের অনুভূতি একই। চন্দ্র-সূর্য সবাইকে সমান আলো ও তাপ দেয়। জাতিপ্রথা বা বর্ণপ্রথা মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। তাই কবি বলেছেন, এই জাতিপ্রথা ভুলে পৃথিবীর সব মানুষকে একই জাতি হিসেবে গণ্য করতে হবে। সে জাতির একই পরিচয়, তা হলো মানুষ। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, আমরা সবাই মানুষ। জাতপাত বলে আমাদের মধ্যে কোনো ভিন্নতা নেই। জাত নিয়ে আমরা যতই গর্ব করি না কেন, আমাদের আসল জাত, আসল পরিচয় হলো আমরা মানুষ। মানুষ যতই নিজেদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে সব মানুষই সমান ও এক। এই পৃথিবী জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবারই বাসভূমি। সুতরাং বলা যায়, 'মানুষ জাতি' কবিতা ও উদ্দীপকের বক্তব্যের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে মিল রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে পৃথিবীব্যাপী মানুষ এক ও অভিন্ন। মানুষের আসল পরিচয় তারা মানুষ। উত্তর-ঘ : 'মানুষ জাতি' কবিতায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত দেখিয়েছেন মানুষ একই জায়গা থেকে জন্মগ্রহণ করে। একই পৃথিবীতে লালিত-পালিত হয়। পৃথিবীর বুকে ক্ষুধা-তৃষ্ণা-শীত ও তাপের অনুভূতি সবার একই রকম। আবার মৃতু্যর পর সবাই একই জায়গায় চলে যাবে। বাইরে মানুষের গায়ের রঙ একই হতে পারে। কারও গায়ের রঙ কালো আবার কারও ফর্সা। কিন্তু তাদের শরীরের ধমনিতে প্রবাহমান রক্তের রঙ একই রকম লাল। ধর্ম, বর্ণ, গোত্রভেদে মানুষের যে পরিচয় আমরা পেয়ে থাকি, তা কখনোই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়। ধর্মীয় বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, বর্ণগত বৈষম্য, ঙৃগোষ্ঠীগত বৈষম্য, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য- এ সবকিছু স্বার্থান্বেষী মহলের তৈরি করা কৃত্রিম বৈষম্য। বাইরে চেহারায় সাদা-কালোর ব্যবধান থাকতেই পারে। তাই বলে সাদা-কালোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। পৃথিবীতে সব মানুষ সমান। সাদা-কালো, গরিব-ধনী, জাতি-ধর্ম ইত্যাদি কারণে নিজেদের পরিচয়কে সংকীর্ণ ও গন্ডিবদ্ধ করা যাবে না। উদ্দীপক ও 'মানুষ জাতি' কবিতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি যে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা মানুষকে মানবসেবায় অনুপ্রাণিত করবে। শেষে বলা যায়, সব মানুষের শরীরে বহমান রক্ত একই বর্ণের, সব মানুষের শরীর একই নিয়মে কাজ করে। তাই বাইরের রঙ আলাদা হলেও ভেতরের রঙ সবারই সমান।