শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
অনুকরণ

১৬। মিজান ও রাসেলের বন্ধু শিহাব ৮ম শ্রেণির ছাত্র। শিহাব আন্তঃহাউস ইনডোর প্রতিযোগিতায় দাবায় পর পর দুইবার প্রথম

হয়েছে। রাসেল সিহাবের অনুপ্রেরণায় দাবা শিখে এই বছর দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। মিজান ইদানীং প্রায় স্কুলে দেরি করে আসে। বাড়ির কাজ ঠিকমতো করে নিয়ে আসে না। শিক্ষক মিজানের মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে মিজান রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।

ক) গণমাধ্যম কী?

খ) ব্যক্তির সামাজিকীরণের ক্ষেত্রে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা করো।

গ) রাসেলের দাবায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারের ক্ষেত্রে সামাজিকীরণের কোন প্রতিষ্ঠানটি প্রভাব বিস্তার করেছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) 'মিজানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অপব্যবহার লক্ষ্য করা যায়'- বিশ্লেষণ করো।

ক) উত্তর : যেসব মাধ্যমে জনগণের কাছে সংবাদ, মতামত ও বিনোদন পরিবেশন করা হয় তাকে গণমাধ্যম বলে।

খ) উত্তর : ব্যক্তির সামাজিকীরণের ক্ষেত্রে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিকীকরণের প্রথম এবং প্রধান বাহন হলো পরিবার। পরিবারে বসবাস করতে গিয়ে শিশু পরিবারের সদস্যদের প্রতি আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, ধর্মচর্চা, শিক্ষা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে পারিবারিক সংস্কৃতির প্রতিফলন সরাসরি ব্যক্তির উপর পড়ে।

গ) উত্তর : রাসেল দাবায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারের ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের সমবয়সি বন্ধু বা সঙ্গী প্রতিষ্ঠানটি প্রভাব বিস্তার করেছে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলোর মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা উলেস্নখযোগ্য। এই সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি হলো সমবয়সি বন্ধু বা সঙ্গী। শৈশবে শিশুরা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলাধুলার প্রচন্ড আকর্ষণ থাকে। এভাবে খেলার বা পড়ার সাথীরা একে অন্যের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখে। একে অন্যের সঙ্গে মিশে তারা বিভিন্ন গুণের অধিকারী হয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, মিজান ও রাসেলের বন্ধু শিহাব; তারা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। শিহাব আন্তঃহাউস ইনডোর দাবা প্রতিযোগিতায় দুই বার প্রথম স্থান পায়। তার অনুপ্রেরণায় রাসেল দাবা খেলা শেখে এবং পরে সেও এক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। তাই বলা যায়, রাসেলের মতো শিশু-কিশোরদের ভালো করার পেছনে সমবয়সিদের প্রভাব লক্ষণীয়।

ঘ) উত্তর : মিজানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের অপব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যার সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা যায় তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; যেমন- ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। বর্তমান সময়ের তরুণসমাজের ওপর তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনেরই প্রভাব রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার পারস্পরিক যোগাযোগকে সহজ করে দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভাব-বিনিময়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বৃদ্ধি করেছে, আবার যে কোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার সামাজিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; যেমনটি আমরা উদ্দীপকের মিজানের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করি। মিজান ইন্টারনেট শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে না। বরং রাত জেগে ইন্টারনেটে সে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। এতে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। ফলে তার পড়াশোনার ক্ষতি হয় এবং সে তার বাড়ির কাজও ঠিকমতো করতে পারে না। রাত জাগার ফলে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং এতে তার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটে। দেরি করে ঘুমানোর কারণে সে সকালে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে পারে না। ফলে স্কুলে যেতেও দেরি হয়। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, মিজান যদি প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার করত তবে তার পড়াশোনার উন্নতি হতো কিন্তু সে প্রযুক্তির অপব্যবহার করেছে বলে নেতিবাচক প্রভাব পড়াশোনার ওপর পড়েছে।

১৭। শাহেদ সাহেব একজন আর্কিটেক্ট (স্থপতি)। তিনি বড় কাগজে একটি বাড়ির নকশা করেছিলেন। তার ৫ বছরের ছেলে রনি তার দেখাদেখি কাগজ-পেন্সিল নিয়ে আঁকতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর সে বাবাকে তার আঁকা ছোট ছোট ঘরগুলো দেখায়। বাবা তাকে উৎসাহ দিয়ে বলেন- তোমাকে গ্রামে নিয়ে সত্যিকারের খড়ের ঘর, গাছ, নদী দেখাব। কিছু দিন পর গ্রামে বেড়াতে গেলে গ্রামে বসবাসরত তার চাচাত ভাই সোহেল তাকে মাঠ, পকুর, ঘরবাড়ি, গাছপালা ইত্যাদি দেখিয়ে আবার আঁকতে বলে।

ক) সামাজিকীরণের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহন কী?

খ) নিজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী অন্যকে পরিচালিত করার প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করো।

গ) রবিন ছবি আঁকায় সামাজিকীরণের যে উপাদানের প্রভাব ঘটে সেটি ব্যাখ্যা করো।

ঘ) রনি ও সোহেলের জীবনে সামাজিকীরণের প্রক্রিয়ায় কোনো পার্থক্য আছে কী? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

ক) উত্তর : পরিবার সামাজিকীরণের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহন।

খ) উত্তর : নিজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী অন্যকে পরিচালিত করার প্রক্রিয়াকে অভিভাবন বলে। অভিভাবন এক ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম বা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তাব বা তথ্যাদি অপরের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের পরিপক্বতা না থাকায় তারা সহজেই অভিভাবিত হয়ে যায়। অভিভাবন প্রক্রিয়ার প্রয়োগ সমাজের অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। যেমন- শিক্ষা, রাজনীতি, শিল্প, বাণিজ্য ইত্যাদি।

গ) উত্তর : রনির ছবি আঁকায় সামাজিকীরণের উপাদান অনুকরণের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। একজন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির কাজ বা আচার-আচরণ হুবুহু নকল করাকে অনুকরণ বলে। শিশুরা সাধারণত বড়দের অনুকরণ করে। এর মাধ্যমে শিশুরা বড়দের কাছ থেকে ভাষা, উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি শিখে থাকে। অনেক সময় বড়রাও অনুকরণ করে। যেমন- শিক্ষা, ব্যবসা বা চাকরির জন্য যখন নতুন বা অচেনা পরিবেশে আসে তখন অনুকরণের মাধ্যমেই নিজেকে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়। উদ্দীপকে শাহেদ সাহেব একটি বাড়ির নকশা করেছিলেন। সেটি দেখে তার ছেলে রনি পেন্সিল নিয়ে কাগজে ছোট ছোট ঘর আঁকতে শুরু করে। অর্থাৎ শাহেদ সাহেবকে দেখে তার ছেলে রনি ছবি আঁকতে শুরু করে যা সামাজিকীকরণের অনুকরণ উপাদানের সঙ্গে মিলে যায়। এ জন্য বলা যায়, শাহেদ সাহেবের ছেলে রনি ছবি আঁকায় সামাজিকীকরণের অনুকরণ উপাদানটির প্রভাব ঘটেছে।

ঘ) উত্তর : রনি ও সোহেলের জীবনে সামাজিকীরণের প্রক্রিয়ায় অবশ্যই পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি। উদ্দীপকে রনি মা-বাবার সঙ্গে শহরে বাস করে বিধায় রনি শহরের সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আবার রনির চাচাতো ভাই সোহেল গ্রামে বাস করে তাই সোহেল গ্রামীণ সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। শহরের সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া আর গ্রামীণ সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া এক নয়। শহরের সামাজিকীকরণে শিশুর পরিবারই প্রথম মাধ্যম। শহরে বসবাসরত অধিকাংশ মা-বাবা চাকরিজীবী হওয়ার কারণে সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না। তাই শিশুদের মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধ সম্পর্কে জানা, শেখার ঘাটতি থেকে যায়। কিন্তু গ্রামীণ সামাজিকীকরণে শিশু নিজ পরিবারসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বেড়ে ওঠে। ফলে সহজেই সে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি গুণগুলো নিজেদের মধ্যে আয়ত্ত করে থাকে। অন্যদিকে শহরের সামাজিকীকরণে পরিবারের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম বেশি ভূমিকা রাখে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে বিনোদন প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সভা-সমিতি, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে গ্রামীণ সামাজিকীকরণে পরিবারের পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশী, জাতি-গোষ্ঠী, সমবয়সি ও খেলার সাথী, কর্মক্ষেত্র, স্ব-স্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান যেমন- উৎসব, পালাগান, লোকনাটক, লোকসংগীত, যাত্রা, পুতুল নাচ, লৌকিক আচার প্রভৃতির মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তবে ইদানীং টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট ও গ্রামীণ পরিবেশ সামাজিকীকরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি রনি ও সোহেলের জীবনে সামাজিকীরণের প্রক্রিয়ায় অবশ্যই পার্থক্য আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে