বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর
  ০৩ মার্চ ২০২১, ০০:০০
মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ

আজ তোমাদের জন্য সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো

ঘ) উদ্দীপকে উলিস্নখিত উন্নয়ন সূচকে শিক্ষা, বেকারতের হার, কর্মহীন ও সামাজিকভাবে অসহায় হত-দরিদ্রদের হার ও শিশু মৃতু্যর হার বিষয়গুলো বর্ণিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ঐঁসধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ জবঢ়ড়ৎঃ মোতাবেক ২০১৩ সালে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম, যা ২০১২ সালে ছিল ১৪৩তম। সরকার শিক্ষার সকল স্তরে গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়নসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যদিও ২০০০ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৩.৩%,২০০৫ সালে সেটি বেড়ে ৪.৩% এ পৌঁছেছে। সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া সরকার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় প্রজনন হার ও মৃতু্যর হার কমেছে, নবজাতক শিশু ও মাতৃমৃতু্য হার উলেস্নখযোগ্য হারে কমেছে। তাই সরকার জাতিসংঘ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পরিশেষে বলা যায়, উলিস্নখিত সূচকের বিষয়গুলোসহ নানা কর্মসূচি সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

৫। আরিফ পড়ালেখা শেষ করে চাকরি নিয়ে কানাডায় চলে যায়। সে প্রতিমাসে পরিবারের জন্য দেশে টাকা পাঠায়, যা পরিবারের খরচ বহন করার পর দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।

ক) এউচ-এর পূর্ণ রূপ কী?

খ) বাংলাদেশের উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য ব্যাখ্যা করো।

গ) আরিফের কানাডা থেকে পাঠানো অর্থের ধরন ব্যাখ্যা করো।

ঘ) মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরিফের গৃহীত পদক্ষেপটি কী একমাত্র উপায়? মতামত দাও।

উত্তর : ক) এউচ-এর পূর্ণ রূপ হলো এৎড়ংং উড়সবংঃরপ চৎড়ফঁপঃ বা মোট দেশজ উৎপাদন।

খ) বাংলাদেশের উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা। দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদন বাড়লে নাগরিকদের জীবনযাত্রার ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা হলে তা প্রবৃদ্ধির সূচকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।

গ) কানাডা থেকে আরিফের পাঠানো অর্থ হলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। বিদেশে কর্মরত নাগরিকদের স্বদেশে প্রেরিত অর্থকে রেমিট্যান্স বলে। প্রবাসী শ্রমিক, কর্মচারী পেশাজীবীরা তাদের অর্জিত অর্থের একটা অংশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠান। এই অর্থ পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি করছে। এছাড়া রেমিট্যান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হওয়ার ফলে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮ম। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ছিল ১২,২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। উদ্দীপকের আরিফ একজন প্রবাসী। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি নিয়ে তিনি কানাডায় যায়। প্রতিমাসে আরিফ দেশে যে টাকা পাঠায় তাই রেমিট্যান্স। এই অর্থ পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও অবদান রাখে।

ঘ) পড়ালেখা শেষ করার পর আরিফের বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় নয় বরং মানব সম্পদ উন্নয়নে আরও বহুবিদ উপায় রয়েছে। আরিফের বিদেশে গিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাত্র উপায় এর বাইরে যে সব নাগরিক শ্রম ও মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি, শিল্প, সেবা খাতসহ যে কোনো খাতের উন্নয়নে অবদান রাখেন তাদেরই দেশের মানব সম্পদ বলা হয়। সাধারণত অদক্ষ জনগণকে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির সাহায্যে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করা যায়। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব। তবে উদ্দীপকে আরিফের ক্ষেত্রে শুধু কর্মসংস্থানের কথা ফুটে উঠলেও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার অভাবে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী অসচেতন ও অদক্ষ রয়ে যায়। ফলে তারা যেমন নিজের ও পরিবারের উন্নতি করতে পারে না তেমনি সমাজ ও দেশের অগ্রগতিতেও অবদান রাখতে পারে না। তাই মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য করা উচিত। এছাড়া কর্মমুখী ও ব্যবহারোপযোগী শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, নারী ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা বৃদ্ধি, আর্থিক সহযোগিতা ও উপবৃত্তির সুযোগ, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন ধরনের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানে সক্ষম জনশক্তিতে পরিণত করা যায়। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরিফের গৃহীত পদক্ষেপটি একমাত্র উপায় নয় এর বাইরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের যথাযথ প্রয়োগ করে বেকার যুবকদের দক্ষ করে দেশেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।

৬। কাশেম সাহেব তার জমিতে ধান ও বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং সবজি ফলান। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তিনি বাজারে বিক্রি করেন। তিনি তার ছেলে সাজেদকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠান। সাজেদ সেখান থেকে টাকা পাঠান। সেই টাকায় তাদের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসে।

ক) এঘচ-এর পূর্ণ রূপ কী?

খ) কীভাবে জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তর করা যায়?

গ) কাশেম সাহেবের কাজটি জাতীয় আয়ের কোন খাতের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) সাজেদের প্রেরিত অর্থ এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে-উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : ক) এঘচ-এর পূর্ণরূপ হলো এৎড়ংং ঘধঃহধঃরড়হধষ চৎড়ফঁপঃ বা মোট জাতীয় উৎপাদন।

খ) জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তরের প্রধান উপায় হলো জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বাসস্থান, চিকিৎসা ও খাদ্য সংস্থানের মাধ্যমেই মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টি করতে হবে এবং দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করার জন্য সুস্বাস্থ্যের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গ) কাশেম সাহেবের কাজটি জাতীয় আয়ের কৃষি খাতের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম একটি প্রধান খাত হলো কৃষি। খাদ্যশস্য, শাক-সবজি ও বনজ সম্পদ এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে জাতীয় উৎপাদনে কৃষি খাতে অবদান ছিল ১৩.০৯ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১.৪৭ শতাংশ। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে জাতীয় উৎপাদনে কৃষি খাতে অবদান ছিল ১,৭৬৫০০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জাতীয় উৎপাদনে কৃষি খাতে অবদান ছিল ১১.১২ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১.৯৬ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে