শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর য়
  ০৭ মার্চ ২০২১, ০০:০০
ঢাকায় বস্তি গড়ে ওঠার কারণ-

১২। এমরানের বাবা একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধ। তিনি তার পরিষদে নিজ এলাকার উন্নয়নে ব্রিজ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কারের দাবি করেন। অন্যপক্ষে বনির বাবা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দেশের প্রচলিত আইনানুসারে জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন।

ক) এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে?

খ) যে কোনো দেশের জন্য সংবিধান জরুরি কেন।

গ) এমরানের বাবা যে বিভাগের সদস্য তার নাম উলেস্নখপূর্বক গঠন ব্যাখ্যা করো।

ঘ) বনির বাবা সরকারের যে বিভাগে কর্মরত তা নাগরিক জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে তোলে-বিশ্লেষণ করো।

উত্তর :

ক) যে সরকারব্যবস্থার কেন্দ্রের হাতে সব ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে।

খ) সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনায় মূল দলিল হওয়ায় যে কোনো দেশ পরিচালনার জন্য সংবিধান জরুরি। সংবিধান যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। একটি নকশা দেখে যেমন একটি ভবন ইমারত তৈরি হয় ঠিক তেমনি সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। সরকারের ধরন, নাগরিক অধিকার, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও ক্ষমতা সবকিছুই সংবিধানে লিপিবব্ধ থাকে। একটি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অবশ্যই সংবিধান প্রয়োজন।

গ) এমরানের বাবা সরকারের আইন বিভাগের সদস্য। বাংলাদেশের আইন বিভাগ এককক্ষ বিশিষ্ট। এর নাম জাতীয় সংসদ। মোট ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে এটি গঠিত। এর মধ্যে ৩০০ জন সদস্য দেশের ৩০০টি নির্বাচনি এলাকা থেকে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্যরা তাদের নির্বাচিত করেন। সদস্যরা নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। একজন স্পিকার এবং একজন ডেপুটি স্পিকার জাতীয় সংসদের অধিবেশন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ডেপুটি স্পিকার তাকে এ কাজে সহায়তা করেন। এ ছাড়া স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তিনি সংসদ অধিবেশেনে সহায়তা করেন। দুজনই সংসদ সদস্য থেকে নির্বাচিত হন। এমরানের বাবা একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যিনি নিজ এলাকার উন্নয়নে ব্রিজ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কারের দাবি করেন। সুতরাং বলা যায়, তিনি আইন বিভাগের সদস্য।

ঘ) বনির বাবা সরকারের বিচার বিভাগে কর্মরত যার তৎপরতা নাগরিক জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে তোলে। সরকারের যে অঙ্গ বা বিভাগ ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান ও আসন অনুযায়ী বিচারকাজ পরিচালনা করে থাকে তাকে বলা হয় বিচার বিভাগ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিচারালয়ের বিচারকদের নিয়ে এ বিভাগ গঠিত। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর হলো সুপ্রিম কোর্ট। এর প্রধানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বলা হয়। রাষ্ট্রপতি তাকে নিয়োগ দেন। সুপ্রিম কোর্ট দুটি বিভাগ নিয়ে গঠিত এর একটি আপিল বিভাগ এবং অন্যটি হলো হাইকোর্ট বিভাগ। এ দুটি বিভাগের বিচারপতিরাও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকেন। অপরাধীর শাস্তি বিধান ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করে নাগরিক জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে তোলে। বিচার বিভাগ সংবিধানের বিভিন্ন ধারা বা আইনের ব্যাখ্যা দেয়। দেশের সংবিধান ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করে বিভিন্ন ধরনের তদন্তমূলক কাজ করে। উদ্দীপকে বনির বাবা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে জনগণের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। অর্থাৎ তিনি বিচার বিভাগে কর্মরত একজন কর্মকর্তা। সার্বিক আলোচনা থেকে বলতে পারি, বিচার বিভাগ আইনের শাসনপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাগরিক জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে তোলে।

১৩। ঘটনা- ১. রংপুরের হিরু মে মাসে ফসলের মাঠে গিয়ে দেখে অনেক জমিতে ফসল শুকিয়ে গেছে এবং মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে।

ঘটনা-২. বরিশালে চলতি বছরে বর্ষা মৌসুমে প্রায় সবকটি জেলা পানিতে পস্নাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

ক) ওজোন স্তর কী?

খ) ঢাকায় বস্তি গড়ে ওঠার কারণ লেখ?

গ) হিরুর এলাকার দৃশ্যমান দুর্যোগটি মোকাবিলার পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করো।

ঘ) 'ঘটনা-২ এ নির্দেশিত দুর্যোগ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে'-বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ক) স্ট্রটোস্ফিয়ারের পরে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরটি হলো ওজোন স্তর।

খ) ঢাকায় বস্তি গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- শহরমুখী জনস্রোত। বাংলাদেশ জনবহুল। অতিরিক্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রামে দরিদ্র ও অসহায় লোকজন শহরমুখী হয়। ঢাকায় বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার কারণে দরিদ্র লোকজন কাজের সন্ধানে এখানে আসে। তাদের নিম্নআয় ও বাসস্থানের অভাবে ঢাকায় বস্তি গড়ে ওঠে।

গ) হিরুর এলাকার দৃশ্যমান দুর্যোগটি হলো খরা। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেক সময় খরা হতে দেখা যায়। খরা মোকাবিলায় আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে পারি। যেমন- এসব অঞ্চলে পুকুর ও খাল খনন করতে পারি। তাছাড়া যেখানে সম্ভব বৃষ্টির জল ধরে রাখতে হবে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ মজুত রাখতে হবে। এভাবে গবাদিপশুর জন্য খাদ্য মজুত রাখা প্রয়োজন। উদ্দীপকে রংপুর অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে হিরু দেখল অনেক জমিতে ফসল শুকিয়ে গেছে এবং মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে। এসব অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে খরা মোকাবিলার জন্য যেসব ফসল চাষে খুব বেশি জলের দরকার হয় না সেসব ফসল চাষ করা উচিত। খরার ফলে বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর জন্য আয়ের উৎস খুঁজতে হবে। এসময় জলের অপচয় রোধ করতে হবে এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ এড়াতে গবাদিপশুকে পুকুর থেকে দূরে রাখতে হবে। খরা কেটে যাওয়ার পর কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। আগাছা ও জঞ্জাল পরিষ্কার করে জমিতে জলের অপচয় কামাতে হবে এবং জমি গভীর করে চাষ করতে হবে। মাটির গভীরে শিকড় প্রবেশ করে এমন ফসল চাষ করতে হবে এবং বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।

ঘ) ঘটনা-২ এ নির্দেশিত দুর্যোগটি হলো বন্যা যা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে। বাংলাদেশে প্রতি বছরই কমবেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৪, ২০০৯ এবং ২০২০ সালের সংগঠিত বন্যা ছিল ভয়াবহ। এসব বন্যার কারণে কৃষকের খেতের ফসল, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, গাছপালা, মাছের খামার, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা, প্রাণহানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। প্রায় প্রতিবছর আমাদের দেশে সাধারণত শতকরা ২০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যায়। দুর্যোগ অস্বাভাবিক আকার ধারণ করলে ৬৮ ভাগ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বন্যা ও বন্যা পরবর্তীকালে খাবার তৈরি, পানি সংগ্রহ, নির্ভরশীল সন্তানদের পরিচর্যাসহ বৃদ্ধদের নিরাপদে রাখার ক্ষেত্রে নারীরা অধিক ভূমিকা পালন করে। ফলে তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় এদেশের দরিদ্র মানুষ। বন্যাজনিত কারণে প্রতিবছর অসহায় মানুষের প্রচুর ভোগান্তি হয়। নানা ধরনের সংক্রামক রোগে শিশু, বৃদ্ধসহ অনেক মানুষ মারা যায়। জানমাল ও গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং পরিবেশ নোংরা ও দূষিত হয়। এছাড়া বন্যার কারণে মানুষের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থারও অবনতি ঘটে। পরিশেষে আমরা বলতে পারি, বন্যা নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে