বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ০০:০০

সুধীরবরণ মাঝি, শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয়, হাইমচর, চাঁদপুর
ভূমিকম্প
১৪। গত কয়েক দিন আগে স্কুল চলাকালে বেলা ১২টার সময় স্কুল ভবনটি কেঁপে ওঠে। এমন সময় কিছু ছাত্রী বেঞ্চের নিচে গিয়ে বসে পড়ে এবং কিছু ছাত্রী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ক্লাসরুমের বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি করছে। এভাবে দৌড়াদৌড়ি করার সময় একজনের সঙ্গে আরেকজন ধাক্কা খেয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়। কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষকের নির্দেশ পেয়ে দ্রম্নত টেবিল ও বেঞ্চের নিচে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং অন্যরা খোলা জায়গায় চলে যায়। ক) দুর্যোগ কী? খ) মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলতে কী বোঝায়? গ) উদ্দীপকে কোন দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ) উক্ত দুর্যোগ মোকাবিলায় তুমি কোন উপায়টিকে সঠিক বলে মনে করো? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। উত্তর : ক) যে অবস্থা অস্বাভাবিক ও অসহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে তাই দুর্যোগ। খ) মানুষের কাজকর্মের ফলে যে দুর্যোগ সৃষ্টি হয় তাকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলে। মানুষের অসচেতনতা ও দূরদৃষ্টির অভাবে যে দুর্যোগ সৃষ্টি হয় এবং যা মানুষের প্রাণহানি ঘটানোর পাশাপাশি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে, পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে এবং সমাজকে অস্থিতিশীল করে তোলে তাকে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলে। মানুষ সচেতন ও সতর্ক থাকলে তা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। গ) উদ্দীপকে ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে। ভূমিকম্প একটি আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পৃথিবীতে যত রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে তার মধ্যে ভূমিকম্পই অল্প সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ভূমিকম্পের ব্যাপারে আগাম কোনো সতর্ক সংকেত দেওয়া সম্ভব নয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি বা কয়েকটি ঝাঁকুনিতে পুরো এলাকা ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়। একই স্থানে সাধারণত পর পর কয়েক বার বড়, মাঝারি ও মৃদু ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। ভূমিকম্পে উদ্ধার কাজও জটিল হয়ে থাকে। ভূমিকম্প প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা এখনো মানুষের জানা নেই। উদ্দীপকেও এই দুর্যোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। উদ্দীপকে স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুল ভবনটি কেঁপে ওঠে, এমন সময় কিছু শিক্ষার্থী বেঞ্চের নিচে গিয়ে বসে পড়ে। আর কেবলমাত্র ভূমিকম্পেই এভাবে কাঁপুনি বা ঝাঁকুনি দেয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্পের কথা বলা হয়েছে। ঘ) দুর্যোগ অর্থাৎ ভূমিকম্প মোকাবিলায় শিক্ষকের নির্দেশিত উপায়টি ছিল সঠিক বলে আমি মনে করি। ভূমিকম্প একটি আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মোকাবিলার জন্য ভূমিকম্প চলাকালে আমাদের কিছু করণীয় আছে। যেমন-ভূমিকম্প চলাকালে কোনো শক্ত টেবিল বা কাঠের আসবাবপত্রের নিচে অবস্থান নিতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করা যাবে না। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী, হেলমেট, টর্চ, প্রভৃতি মজুত রাখতে হবে। প্রধান দরজা ছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার জন্য একটি বিশেষ দরজা থাকা প্রয়োজন। অবিলম্বে সকল বৈদু্যতিক সুইচ ও গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। তবে বাড়ির আশপাশে যদি যথেষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা থাকে তবে সম্ভব হলে দ্রম্নত ঘর থেকে বের হয়ে উক্ত খোলা জায়গায় চলে যেতে হবে। উদ্দীপকে শিক্ষার্থীরা এগুলো মেনে চলছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর শিক্ষকের নির্দেশ মতো শিক্ষার্থীরা টেবিল ও বেঞ্চের নিচে আশ্রয় নেয় যা ভূমিকম্প চলাকালে অন্যতম করণীয়। আবার কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে আহত হয় যা ভূমিকম্প চলাকালে কোনোভাবেই করণীয় নয়। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকের নির্দেশটিই ছিল সঠিক। ১৫। ঘটনা-১. গতকাল রিফাত ঞঠ-র সংবাদে জানতে পারল যে, ঢাকার একটি নামকরা শপিংমলের ১১ ও ১২ তলায় সংগঠিত একটি দুর্ঘটনায় বেশ কিছু দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বহু মানুষ হতাহত হয়। একটি বিশেষ বাহিনী সদস্যরা এসে উক্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনা-২. গত ২৫ এপ্রিল ২০১৫ বেলা ১১টা ৫৬ মিনিটে বাংলাদেশসহ সমগ্র নেপাল একযোগে কেঁপে ওঠে। এত অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহুলোকের হতাহতের খবরও পাওয়া যায়। আমরা যদি একটু সাবধান হই তাহলে এ ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে। ক) বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়কারী গ্যাসটির নাম কি? খ) গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া বলতে কী বোঝ? গ) উদ্দীপকে ঘটনা-১ এর দুর্যোগের কারণ ব্যাখ্যা করো। ঘ) ঘটনা-২ এর দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে তুমি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পার? মতামত দাও। উত্তর : ক) বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর ক্ষয়কারী গ্যাসটির নাম হাইড্রো ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (এইচসিএফসি) গ্যাস। খ) গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া বলতে গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়াকে বোঝায়। কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, সিএফসি ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমন্ডলকে ঘিরে একটি আচ্ছাদন তৈরি করে। তাপ এই আচ্ছাদন ভেদ করে পৃথিবীতে আসতে পারে; কিন্তু বিকিরিত তাপ বায়ুমন্ডলে আটকা পড়ে। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গ) উদ্দীপকে ঘটনা-১ এর দুর্যোগটি হলো অগ্নিকান্ড। অগ্নিকান্ড যেমন- প্রাকৃতিক কারণে ঘটে আবার অসাবধানতা ও দুর্ঘটনাজনিত কারণেও ঘটতে পারে। প্রচন্ড দাবদাহের কারণে কোনো কোনো দেশের বনাঞ্চলে অগ্নিকান্ড ঘটতে দেখা যায়। একে দাবানল বলে। আমাদের দেশে সাধারণত দাবানলের ঘটে না। এখানে অসাবধানতা ও দুর্ঘটনাই অগ্নিকান্ডের মূল কারণ। অসাবধানতা ও দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকান্ড সাধারণত শিল্পকারখানা, তেল শোধনাগার, গার্মেন্টশিল্প, পাটকল, পাটের গুদাম, রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা এমনকি বসতবাড়ি, দোকানপাট, শপিংমল, অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ঘটতে দেখা যায়। এছাড়া গ্রাম ও শহরাঞ্চালে জলন্ত চুলা, কুপি, মশার কয়েল, সিগারেটের আগুন, হারিকেন প্রভৃতি থেকেও অসাবধানতাবশত অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। উদ্দীপকে ঘটনা-১ এর দুর্যোগ অর্থাৎ অগ্নিকান্ডের কারণও ছিল মানুষের অসাবধানতা।