উত্তর : ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত 'খ' গ্রম্নপে সাঁওতাল এবং 'ক' গ্রম্নপে গারোদের নির্দেশ করে এবং এদের সাংস্কৃতিক জীবনে বৈচিত্র্যপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল এবং সমতলের বাসিন্দা হচ্ছে গারোরা। সাঁওতাল ও গারোদের মধ্যে পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, উৎসব ভাষা প্রভৃতি বিষয়ে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সাঁওতাল ও গারো উভয়ের প্রধান খাদ্য ভাত। গারোরা ভাতের সঙ্গে মাছ ও শাক-সবজি খেয়ে থাকে। সাঁওতাল মেয়েরা শাড়ি এবং পুরুষরা লুঙ্গি পরে। সাঁওতালরা অলঙ্কার প্রিয়। তারা হাতে ও গলায় পিতলের বা কাঁসার গহনা পরে। সাঁওতাল পুরুষরাও অলঙ্কার ব্যবহার করে।
অন্যদিকে গারো মহিলারা নিজেদের তৈরি পোশাক 'দকমান্দা' ও 'দকশাড়ি' এবং পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম 'গান্দো'। সাঁওতালদের নিজস্ব উৎসবাদির মধ্যে 'সোহরাই' ও 'বাহ' উলেস্নখযোগ্য। অন্যদিকে গারোদের সামাজিক উৎসবগুলো কৃষিকেন্দ্রিক সামাজিক ও কৃষি উৎসব হলো 'ওয়ানগালা'। সাঁওতালদের বিবাহ অনুষ্ঠানে আয়োজিত হয় 'দা' ও 'ঝিকা' নাচ। তাদের সংস্কৃতির একটি উলেস্নখযোগ্য অনুষ্ঠান হলো 'ঝুমুর নাচ'। সাঁওতালদের ছেলেমেয়েরা বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হচ্ছে। গারোদের ভাষা আচিক ও খুসিক। তবে এ ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা নেই।
উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি, বাংলাদেশে সাঁওতাল ও গারো নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক জীবনে স্বাতন্ত্র্য ও নিজস্বতা রয়েছে।
১৫। নিরু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি মেয়ে। বাংলাদেশের বাইরে অরুণাচলেও তাদের জনগোষ্ঠীর লোকদের বসবাস রয়েছে। নিরু তার বান্ধবী শুভ্রার সঙ্গে ময়মনসিংহে তার গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেল। সেখানে সে যে বিষয়টি দেখে অবাক হলো, তা হলো শুভ্রার পরিবারের সদস্যরা শুভ্রার মায়ের মমতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এছাড়া সে খুব কাছ থেকে শুভ্রাদের ধর্মীয় আচরণ ও জীবিকা নির্বাহ দেখার সুযোগ পেল।
ক) মারমাদের গ্রামের প্রধানকে কী বলা হয়?
খ) বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে কীভাবে সুষম যোগাযোগ স্থাপিত হয়?
গ) নিরুদের সাংস্কৃতিক জীবন ব্যাখ্যা করো।
ঘ) 'নিরু ও শুভ্রাদের সামাজিক জীবনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে' উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ক) মারমাদের গ্রামের প্রধানকে 'রোয়াজা' বলা হয়।
খ) প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছে এবং সেই সব সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করেছে। এক সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের বিনিময়ের ফলে তৈরি হয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণ, যা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক আন্তঃসম্পর্কের ভিত রচনা করে। এই আন্তঃসম্পর্ক যতটা ঘনিষ্ঠ এবং স্থায়ী হবে ততই বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সুষম যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
গ) উদ্দীপক অনুযায়ী বলা যায়। নিরু চাকমা নৃগোষ্ঠীর একজন সদস্য। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিকজীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। চাকমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো তাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ও উৎসব। এই তিনটি ক্ষেত্রেই চাকমারা তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। তারা স্বীয় ঐতিহ্যকে যত্নের সঙ্গে লালন করে। অর্থাৎ তারা তাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। চাকমারা নিজেদের পোশাক নিজেরা তৈরি করে। চাকমা মেয়েদের পরনের কাপড়ের নাম 'পিনোন ও হাদি'। পূর্বে পুরুষরা ধুতি ও গামছা পরতো এবং মাথায় গাগরি বাঁধত। ইদানীং তারা শার্ট, প্যান্ট ও লুঙ্গি পরিধান করে। চাকমা মহিলাদের তৈরি কাপড়, ফুলদানি ও নানা ধরনের ওড়না অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাকমারা বেত ও বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি, পাখা, চিরুনি ও বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে। তাদের প্রধান খাদ্য ভাত। তারা মাছ, মাংস ও সবজি খেতে ভালোবাসে। তবে তাদের প্রিয় খাদ্য বাঁশ কোড়াল। চাকমারা হা-ডু-ডু, কুস্তি ও ঘিলাখারা খেলতে ভালোবাসে। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব হলো 'বিজু'। বাংলা বর্ষের শেষ দুদিন এবং নববর্ষের প্রথম দিনে এই উৎসব উদযাপিত হয়।
ঘ) 'নিরু ও শুভ্রাদের সামাজিক জীবনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে'। নিরু চাকমা এবং শুভ্র গারো নৃগোষ্ঠীর সদস্য। এই দুই নৃগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। তাদের সামাজিক জীবনের ভিন্নতা তুলে ধরা হলো। গারোসমাজ মাতৃতান্ত্রিক। তাদের পরিবারের প্রধান হলেন মাতা। সন্তানরা মায়ের উপাধি ধারণ করে। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ কন্যা সমুদয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে থাকে। গারোসমাজের মূলে রয়েছে মাহারি। বিয়ে, উত্তরাধিকার, সম্পত্তির ভোগ-দখল ইত্যাদিতে এই মাহারির গুরুত্ব অপরিসীম। গারোসমাজে একই মাহারির পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। গারোসমাজে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে। এরকম প্রধান পাঁচটি দল হচ্ছে-সাংমা, মারাক, মোমেন, শিরা ও আরেং। চাকমা সমাজের মূল অংশ পরিবার। কয়েকটি চাকমা পরিবার নিয়ে গঠিত হয় 'আদাম বা পাড়া'। পাড়ার প্রধানকে বলা হয় 'কার্বারি'। কয়েকটি পাড়া নিয়ে গঠিত হয় 'মৌজা'। মৌজার প্রধানকে বলা হয় 'হেডম্যান'। কার্বারি ও হেডম্যান মিলে আদাম ও মৌজার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে। কয়েকটি মৌজা মিলে গঠিত হয় 'সার্কেল' এবং এর প্রধান হলেন 'চাকমা রাজা'। চাকমা সমাজে রাজার পদটি বংশানুক্রমিক। চাকমা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক এবং পিতাই পরিবারের প্রধান। তার পরে মা ও জ্যেষ্ঠপুত্রের স্থান।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, চাকমা ও গারোদের সামাজিক জীবনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
১৬। মাথিন চাকমা, অন্তরা সাহা ও অরুন এই তিন জনে একসঙ্গে বসে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দেখছিল। হঠাৎ তারা লক্ষ্য করল ছায়ানটের শিল্পীদের গান পরিবেশনের পর খাগড়াছড়ি থেকে আসা চার নৃত্যশিল্পী নৃত্য পরিবেশন করছে। তাদের পরনে ছিল আঞ্জি ও থামি।
ক) চাকমাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব কী?
খ) মিউয়া বলতে কী বোঝায়?
গ) উদ্দীপকে চার নৃত্যশিল্পী কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিচয় বহন করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ) 'বৈসাবি আর পহেলা বৈশাখ আজ এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে'। এই উক্তিটি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ক) চাকমাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব হলো 'বিজু' উৎসব।
খ) মিউয়া বলতে গারোদের একটি জনপ্রিয় খাদ্যকে বোঝায়। তারা ভাতের সঙ্গে মাছ ও শাক-সবজি খেয়ে থাকে। তাদের একটি বিশেষ খাদ্য হচ্ছে কচি বাঁশের গুঁড়ি। আর এই বিশেষ খাদ্যের জনপ্রিয় নাম হচ্ছে মিউয়া।
গ) উদ্দীপকের চার নৃত্যশিল্পী বাংলাদেশের পাবর্ত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মারমাদের পরিচয় বহন করছে। বাংলাদেশের পাবর্ত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে মারমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। মারমা নৃগোষ্ঠীর অধিকাংশই রাঙামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি জেলায় বাস করে। উদ্দীপকের চার নৃত্যশিল্পী খাগড়াছড়ি থেকে আসা। উদ্দীপক থেকে জানা যায় রমনা বটমূলে খাগড়াছড়ি থেকে আসা চার নৃত্যশিল্পী নৃত্য পরিবেশন করে। তাদের পরনে ছিল আঞ্জি ও থামি। এ থেকে বোঝা যায়, তারা মারমা নৃগোষ্ঠীর লোক। প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ন্যায় মারমাদেরও পোশাকের ক্ষেত্রে নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। মারমা মহিলারা গায়ে বস্নাউজ পরে তার নাম 'অঞ্জি'। তাছাড়া তাদের আরেকটি পোশাক হলো 'থামি'। তারা নিজেরাই কাপড় বুনে এই পোশাকগুলো তৈরি করে।
উপরের সংস্কৃতি থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকের চার নৃত্যশিল্পী 'মারমা' ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর।