প্রাথমিক বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

মো. মাসুদ খান, প্রধান শিক্ষক, ডেমরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা য়
প্রকৃতি
প্রশ্ন: অনবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে কেন? ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর: যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ একবার ব্যবহার করলেই নিঃশেষ হয়ে যায় সেগুলোকে অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন- মাটিস্থ ধাতু, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি চাহিদাও বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সব তেল, গ্যাস বা কয়লার মতো জ্বালানি শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এসব অনবায়নযোগ্য সম্পদের ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি যত্নবান হতে হবে। প্রশ্ন: প্রাকৃতিক সম্পদ কী? প্রাকৃতিক সম্পদের ৪টি ব্যবহার উলেস্নখ কর। উত্তর: প্রকৃতির যা কিছু আমাদের কাজে লাগে তাই প্রাকৃতিক সম্পদ। যেমন- মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, প্রাণী, পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর, খনিজ আকরিক ইত্যাদি। প্রাকৃতিক সম্পদের ৪টি ব্যবহার নিচে উলেস্নখ করা হলো- ১. নদীর পানি কাজে লাগিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়। ২. রান্নার কাজে, শিল্প উৎপাদনে, সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। ৩. মোটর গাড়িতে, বাতি জ্বালাতে, ইঞ্জিন চালাতে খনিজ তেল ব্যবহার করা হয়। ৪. সূর্যের আলো ব্যবহার করে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে। প্রশ্ন: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কী কী চাহিদা বাড়ে? বাড়তি ঘরবাড়ি তৈরি ও বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে মাটির কী ক্ষতি হয়? ৩টি বাক্যে লেখ। উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের প্রধান চাহিদা বাড়ে খাদ্যের। তারপর কাপড়-চোপড়, থাকার জায়গা, খেলার জায়গা, চিকিৎসা ইত্যাদি। এগুলোই হচ্ছে মানুষের মৌলিক চাহিদা। আবার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যোগ হবে পড়াশোনা, যাতায়াত, ঘর ও বাইরে খেলার চাহিদা। বাড়তি ঘরবাড়ি তৈরি ও বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে মাটির যে ক্ষতি হয় তা নিচে বর্ণনা করা হলো- ১. বাড়তি ঘরবাড়ি তৈরি করতে মাটি কেটে বসতভিটা তৈরি করায় মাটি আলগা হয় এবং বৃষ্টির পানির সঙ্গে নদী বা খাল-বিলে গিয়ে পড়ে মাটির ক্ষয় হয়। ২. বাড়তি বাড়িঘর তৈরিতে গাছপালা কেটে ফেললে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। ৩. বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে জমিতে অধিক পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় মাটির উর্বরতা কমে যায়। প্রশ্ন: বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পরিবেশের ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলে বলে তুমি মনে কর? ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর: বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পরিবেশের ওপর নিম্নরূপ প্রভাব ফেলে- ১. অধিক মাত্রায় খাদ্যশস্য ও ফসল ফলানোর জন্য একই জমি বছরে একাধিকবার চাষ করতে হয়। ২. জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়- যা জমির উর্বরতা নষ্ট এবং বিভিন্ন জলাশয়ের পানি দূষিত করে। ৩. গৃহনির্মাণ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গাছপালা নিধন করার ফলে পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ৪. পশু-পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়। ৫. খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে। প্রশ্ন: জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে? উত্তর: জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে- ১. বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান ও কলাকৌশলগত যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে। ২. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা ও চর্চার মাধ্যমে। ৩. দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করে। ৪. উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে। ৫. বিজ্ঞানভিত্তিক ও কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে। ৬. বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। প্রশ্ন: প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনসংখ্যার প্রভাব বর্ণনা কর। উত্তর: প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে মাটি, পানি, বায়ু, গাছপালা ও খনিজসম্পদকে বোঝায়। এসব সম্পদের ওপর অধিক জনসংখ্যার প্রভাব নিচে বর্ণনা করা হলো- ১. মাটি : অধিক জনসংখ্যার অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য জমিতে অধিক হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে মাটি দূষিত হচ্ছে। ২. পানি : অধিক জনসংখ্যার কারণে তৈরি হচ্ছে অধিক বর্জ্য। এসব বর্জ্যের বেশির ভাগই পানিতে ফেলা হয়। এ কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। ৩. বায়ু : অধিক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজন অধিক যানবাহন, শিল্পকারখানা, ইটের ভাটা। এসব উৎস থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। ৪. গাছপালা : অধিক জনসংখ্যার জন্য ব্যবস্থানসহ অন্যান্য জিনিস তৈরিতে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে বনভূমির পরিমাণ কমে গেছে। ৫. খনিজসম্পদ : কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক সম্পদ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি খনিজসম্পদ অধিক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন: বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের চাহিদা পূরণে কী ধরনের প্রভাব পড়ে? ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর: বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে হয়, সেই সঙ্গে অধিক পরিমাণে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ফলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা হ্রাস পায় অন্যদিকে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদী বা জলাশয়ে পড়ে মাছ ও জলজপ্রাণি মারা যায়। ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া জমিতে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে বায়ুমন্ডলে বায়ু উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বায়ুদূষণ ঘটে। প্রশ্ন: জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে কেন তা ৫টি বাক্যে লেখ। উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অধিকসংখ্যক লোকের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ইত্যাদির চাহিদা পূরণের জন্য বনজঙ্গল, গাছপালা কাটতে হচ্ছে। এতে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে বন্যপ্রাণীর প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিকূল পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী টিকতে না পেরে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। তা ছাড়া অধিক জনসংখ্যার জন্য অধিক ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনে কৃষক জমিতে অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। এসব সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানির সঙ্গে জলাশয়ে পড়ে জলজপ্রাণি ও মাছ ধ্বংস হচ্ছে, এসব কারণে ধীরে ধীরে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। প্রশ্ন: প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ৫টি বাক্যে ব্যাখ্যা কর। উত্তর: প্রাকৃতিক সম্পদ অফুরন্ত নয় বলে এসব সম্পদ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। যেমন- ১। অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করা। ২। ব্যবহারের মাত্রা কমানো। ৩। যতটুকু সম্ভব পুনর্ব্যবহার করা এবং পুনরুৎপাদন করা। ৪। এতে ভবিষ্যতে চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ পাওয়া যাবে। ৫। সম্পদ ব্যবহারে যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।