বাংলা ব্যাকরণ

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
১৩. নির্বাক মিত্র অপেক্ষা স্পষ্টভাষী শত্রম্ন অনেক ভালো। অথবা, স্পষ্টভাষী শত্রম্ন নির্বাক মিত্র অপেক্ষা ভালো। ভাবসম্প্রসারণ : যে ব্যক্তি সত্য প্রকাশ করতে সাহস পায় না, সে বন্ধু হলেও প্রকৃত বন্ধু নয়। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি সত্য কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদী, সে বন্ধু না হলেও নির্বাক বন্ধু অপেক্ষা অনেক ভালো। মিত্রতা দুটি দেশের মধ্যে অভিন্ন এক হৃদয় সৃষ্টি করে। দৃষ্টিভঙ্গির সমতার মাধ্যমে মিত্রতা গড়ে ওঠে। একজন সৎ বন্ধু প্রত্যেকের জীবনে অপরিহার্য। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি তার বন্ধুর বিপদে নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করে, তাহলে এমন বন্ধু থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- ১৭৫৭ সালের ২৩ জুনে পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফর স্বার্থপরতার কারণে বাঙালি হয়েও স্বদেশপ্রেম উপেক্ষা করে নবাব সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে বেইমানি করে ইংরেজদের পক্ষে আঁতাত করেছিল। সে সেনাপ্রধান হয়েও নবাবের পক্ষে যুদ্ধ করেনি; বরং নির্বাক থেকে মুনাফিকি আচরণ করেছে। অন্যদিকে, মানুষের জীবনের এক মহৎ গুণ স্পষ্টবাদিতা। স্পষ্টভাষী লোক শত্রম্ন হলেও নির্বাক বন্ধু অপেক্ষা সহস্র গুণ শ্রেয়। এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতে একটি প্রবাদ আছে, যার বাংলা অর্থ- যিনি সামনে প্রিয় বাক্য বলেন, কিন্তু পরোক্ষ ক্ষতি করেন, তিনি বন্ধু হলেও উপরে দুধ আর ভিতরে বিষ রাখা দুধের কলসির মতো। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছেন যারা বন্ধুর বিপদে বন্ধুর পাশে থেকেও কোনো প্রকার সাহায্য বা সহানুভূতি প্রকাশ না করে নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। তারা সযত্নে সব ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চান। অন্যায়কে অন্যায় বলার মতো সৎ সাহসও তাদের থাকে না। এমন প্রকৃতির ব্যক্তি বন্ধু হলেও তাকে পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে স্পষ্টবাদী ব্যক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদী। তার সম্মুখে ঘটে যাওয়া অন্যায়কে সে অন্যায় বলে প্রতিবাদ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। একজন ব্যক্তি তার দোষ-ত্রম্নটি সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাই স্পষ্টভাষী ব্যক্তি শত্রম্ন হলেও নির্বাক বন্ধু অপেক্ষা অনেক ভালো। সে শত্রম্ন হলেও স্পষ্টবাদিতার গুণে মহৎ বন্ধু। হযরত ওমর (রা.)-এর ভাষায়- 'যে তোমার দোষ ধরে, বন্ধু সেই জন।' বন্ধুকে ভুল পথে চলতে দেখে যে বন্ধু নীরব সম্মতি জ্ঞাপন করে, সে কখনো বন্ধু নয়। বরং যে দোষ-ত্রম্নটি ধরে সঠিক পথে চলার দিকনির্দেশনা দেয়, সে শত্রম্ন হলেও নির্বাক বন্ধু অপেক্ষা ভালো। ১৪. সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা। ভাবসম্প্রসারণ : এ সংসার সমুদ্রে মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত দুঃখ-দৈন্যে আবর্তিত হচ্ছে। এর মাঝে আশাই তাকে টিকিয়ে রেখেছে। আশা না থাকলে তার জীবন হয়ে পড়ত স্থবির। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়েই মানুষ এ পৃথিবীতে আসে। কখন তার এ নির্দিষ্ট সময় ফুরিয়ে যাবে, তা সে জানে না। তবু আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই, শেষ নেই জাগতিক নানান সুখ-স্বপ্নের। প্রতিনিয়ত স্বপ্নময় পরিকল্পনায় আমরা চাই সুখ, শান্তি, সম্পদ, সাফল্য। কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায়? জীবনে দুঃখ আছে, দৈন্য আছে, আছে আশা ভঙ্গের হতাশা, আছে নিরবচ্ছিন্ন সুখ ভোগে নানান প্রতিবন্ধকতা। জীবনে প্রতিনিয়ত, শান্তির সঙ্গে অশান্তির, সুখের সঙ্গে দুঃখের, সার্থকতার সঙ্গে ব্যর্থতার নিরন্তর দ্বন্দ্ব চলছে। তথাপি মানুষকে এসব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়। তার আশা, একদিন জীবনে সুখময় ও আনন্দময় হয়ে উঠবে। বিক্ষুব্ধ সাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য যেমন প্রয়োজন হয় জাহাজের, সংসার সাগরেও তেমনি সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কোনো অবলম্বন দরকার। সংসারের এ অবলম্বন হচ্ছে মানুষের মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা। বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে জীবন তার মধ্যে প্রেরণা জোগায় ভবিষ্যতের আশা। আজকের জীবনের সংকট আর সমস্যা আগামী দিনে থাকবে না, এ আশা নিয়ে মানুষ সংসার-সাগর পাড়ি দেয়। বর্তমানের বাস্তবতার চেয়ে ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন মানুষকে অধিক উদ্দীপ্ত করে। একদিন আঁধার কেটে সুদিন আসবে- এ আশায় মানুষ বর্তমানের গস্নানি উপেক্ষা করার চেষ্টা করে। \হআশা মানুষের জীবনীশক্তির সঞ্চার করে। আশা না থাকলে মানুষ ডুবে যেত দুঃখের অতল গর্ভে। আশাই মানুষকে এনে দেয় সুখের আশ্বাস, দেয় দুঃখ সাগর পাড়ি দেওয়ার দুরন্ত সাহস। আর তাই তো ইংরেজিতে একটি কথা আছে- 'ডযবৎব :যবৎব রং ষরভব, :যবৎব রং যড়ঢ়ব.্থ অর্থাৎ 'যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ'। সংসার জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখই বেশি। তথাপি সোনালি দিনের আশা নিয়ে মানুষ এ দুঃখময় সংসারে বেঁচে থাকে।