মুক্তির চেতনা

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
কাকতাড়ুয়া ১. রাত নিয়ে ওর কোনো ঝামেলা নেই- কেন? উত্তর : ভবঘুরে বুধার মনে কোনো ভয়ডর নেই বলে রাত নিয়ে ওর কোনো ঝামেলা নেই। ছোটবেলা থেকেই ভয়ডরের সঙ্গে দেখা হয়নি বুধার। নিজের মতো করেই সে মানুষ হয়েছে। ছন্নছাড়া তার \হজীবন তাই দিন-রাত সবই তার কাছে সমান। জীবন নিয়ে তার বিশেষ কোনো ভাবনা নেই। রাত হলে ঘরে ফেরার তাড়া নেই। যেখানে ইচ্ছা সেখানেই নির্ভয়ে রাত কাটিয়ে দেয় সে। এ কারণেই আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে। ২. বুধা ফুলকলিকে 'জয় বাংলা' বলে ডাকবে কেন? উত্তর : ফুলকলির মাঝে মুক্তির চেতনা রয়েছে বলে বুধা ফুলকলিকে 'জয় বাংলা' বলে ডাকবে। 'জয় বাংলা' বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় স্স্নোগান। এর দৃপ্ত উচ্চারণ বাঙালির মাঝে অমিত প্রেরণার সঞ্চার করত। 'কাকতাড়ুয়া' উপন্যাসের বুধাও 'জয় বাংলার' মন্ত্রে উদ্দীপ্ত ছিল। ফুলকলি শত্রম্নর বিরুদ্ধে তার অবস্থান ও সহযোগিতার কথা জানায় বুধাকে। বুধা তখন ফুলকলিকে 'জয় বাংলা' বলে ডাকবে বলে জানায়। ৩. 'ও পাগল হয়নি। শক্ত হয়ে গেছে।'- কেন? উত্তর : চোখের সামনে পরিবারের সবাইকে মৃতু্যবরণ করতে দেখেছে বুধা। তার মনের অবস্থার স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য চরণে। একরাতেই বুধার বাবা-মা ও চার ভাই-বোনের সবাই প্রাণ হারায় কলেরায় আক্রান্ত হয়ে। এত কাছ থেকে আপন মানুষের এভাবে হারিয়ে যেতে দেখে শোকে পাথর হয়ে যায় বুধা। সেই থেকেই তার আচার-আচরণের কোনো ঠিক নেই। কেউ কেউ ভাবে বুধা বুঝি পাগল হয়ে গেছে। আর সচেতন মানুষ জানে বুধা পাগল হয়নি। মৃতু্যশোকের তীব্রতা তার স্বাভাবিক অনুভূতিকে ভোঁতা করে দিয়েছে। মনের ভেতর তৈরি হওয়া স্বজন হারানোর গভীর ক্ষত বুধার মনে স্থায়ী ছাপ তৈরি করেছে। ৪. চাচির প্রতি বুধা মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে কেন? উত্তর : চাচির ভর্ৎসনার কারণেই বুধা আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল। এ কারণেই চাচির প্রতি সে কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে। এক রাত্রির ব্যবধানে পরিবারের সকল সদস্যকে হারানো অসহায় বুধার আশ্রয় জোটে চাচার ঘরে। বেকার চাচা তার আটটি সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে দিনযাপন করছিলেন। তাই বিশাল এই পরিবারে বুধা যে একটি বোঝা সেই কথা বুধাকে স্মরণ করিয়ে দেয় চাচি। চাচির কথা শুনে বুধা বুঝতে পারে আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার গুরুত্ব। চাচির সংসার ছেড়ে সে নিজের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। এভাবে মুক্ত স্বাধীন জীবনের স্বাদ পায়, যা চাচির সংসারে পড়ে থাকলে তার পক্ষে সম্ভব হতো না। এ কারণেই বুধা মনে মনে চাচির প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। ৫. বুধা আতঙ্কে ধানক্ষেতের কাদায় মিশে যায় কেন? উত্তর : পাকবাহিনীর বর্বরতা দেখে বুধা আতঙ্কে ধানক্ষেতের কাদায় মিশে যায়। ১৯৭১ সালের একদিন পাকিস্তানি হানাদাররা বুধাদের গ্রামে এসে উপস্থিত হয়। গ্রামের বাজারটিতে তারা হামলা চালায়। গুলি করে মানুষ হত্যা করে। বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে মারা যায় অনেকে। পাকিস্তানি হানাদারদের নিষ্ঠুরতার পরিচয় জানা ছিল না বুধার। তাছাড়া মানুষ যে মানুষের ওপর এতটা নির্দয় হতে পারে এ বিষয়টিও বুধা প্রথম বুঝতে পারল। এ কারণেই তাকে প্রচন্ড ভয় ঘিরে ধরেছিল। চোখের সামনে দেখা এমন দৃশ্য তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। ৬. বুধার গ্রামের লোকেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিল কেন? উত্তর : পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বুধার গ্রামের লোকেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিল। ১৯৭১ সালে পাক-হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। পাখির মতো মানুষকে হত্যা করে। বাড়ি-ঘর-বাজার জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। 'কাকতাড়ুয়া' উপন্যাসে উলিস্নখিত বুধাদের গ্রামেও একইভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় হানাদাররা। প্রাণ বাঁচাতে গ্রামের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ফেলে পালাচ্ছিল। ৭. 'যেন পুরো একটি বিল ঢুকে আছে ওর চোখে'- কথাটি বুঝিয়ে লেখো। উত্তর : বুধার বোন বিনুর মায়াঘেরা চোখের সৌন্দর্যের অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য বক্তব্যে। বিনু ছিল বুধার পিঠাপিঠি বোন। তার চোখ জোড়া ছিল অসম্ভব সুন্দর। বিলের মতোই গভীর ও স্বচ্ছ ছিল তার চাহনি। সেই বোনটি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মৃত বোনের কথা স্মরণ করে আবেগাপস্নুত হয়ে পড়ে বুধা।