কমর্জীবী নারীদের সমস্যা: দেখবে কে?

অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত নারীদের কমর্স্থল অনেকটা শোভন এবং শালীন। কিন্তু নিমার্ণশ্রমিক থেকে শুরু করে পোশাকশিল্পে নিয়োজিত নারী পেশাজীবীদের জীবন যে কত দুবির্ষহ এবং সমস্যায় আবতির্ত তা বলে শেষ করা যায় না। পুরুষ সহকমীর্র কটূক্তি, অশালীন ব্যবহার তার চেয়েও বেশি প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চনার শিকার হওয়া সব মিলিয়ে এক অসহনীয় অবস্থায় পড়ে নারী শ্রমিকরা। মজুরির বেলায়ও হয় চরম বৈষম্য। তার ওপর আছে শিল্প-কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যার সরাসরি প্রভাবে আক্রান্ত হয় নারীরাই বেশি।

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মো. ওসমান গনি
সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে সারাবিশ্বের সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলছে দেশে কমর্জীবী মহিলার সংখ্যাও। কিন্তু সেই পরিমাণে নিমির্ত হচ্ছে না কমর্জীবী মহিলাদের থাকার জন্য আবাসিক ভবন বা হোস্টেল। যার কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কমর্জীবী নারীদের থাকার জন্য বহু কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। আবাসিক ভবনের অভাবে অনেক কমর্জীবী নারীরা অনেক সময় মারাত্মক লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। থাকে না তাদের কোনো নিরাপত্তার বিষয়ে নজরদারি। যার কারণে এসব নারী সবসময় একটা ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে তাদের জীবন কাটে। দেশে কমর্জীবী মহিলাদের থাকার জন্য পযার্প্ত পরিমাণ আবাসিক হোস্টেল না থাকার কারণে অনেক মহিলা বাধ্য হয়ে অনেক অপরিচিত লোকের বাসাবাড়িতে সাবলেট হিসেবে থাকে। সেখানে থাকে না তাদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা। যে কোনো সময় বাড়ির মালিকের লোকজন দ্বারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়। দেশের আথর্-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বলয়ের বিভিন্ন সূচকে অধার্ংশ নারীও সমানতালে ভ‚মিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, করপোরেট পেশা থেকে শুরু করে কৃষি, নিমার্ণ প্রকল্প, পোশাকশিল্প কারখানায় নারীর সচেতন কমের্যাগ সামগ্রিক সমৃদ্ধির নিয়ামক। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুবর্ল এবং সামাজিক রক্ষণশীলতার জালে আবদ্ধ নারীদের হরেক রকম বিপত্তি আর বিভ্রান্তির শিকার হতে হয় কমর্জীবনের উপস্থিত পরিস্থিতিকে সামলাতে গিয়ে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে পেশাগত জীবনে সিংহভাগ নারীই অবহেলা, অপমান আর অবিচারের আবতের্ পড়ে। সামাজিক বিধি নিষেধের কঠোর বেড়াজাল আজ পযর্ন্ত বহু নারীর চলার পথ নিরাপদ, নিবির্ঘœ আর মুক্ত করতে পারেনি। সংসার সামলিয়ে নারীকে তার পেশাগত জীবনের দায়-দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হয়। স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরিজীবী। কিন্তু সন্তান পালন থেকে শুরু করে তার শিক্ষা কাযর্ক্রম ছাড়াও সব ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা এসে পড়ে মায়ের কঁাধে। পারিবারিক সব কতর্ব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যখন কোনো নারী তার অফিসের গন্তব্যের দিকে রওনা হয় তখন তাকে নতুন আর এক বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয় সড়ক পরিবহনে। গণপরিবহনে নারীদের দুরবস্থার চিত্র এখন নিত্য সহনীয় অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে। চালক থেকে শুরু করে হেলপারের অসৌজন্যমূলক আচরণে নারী যাত্রী যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে, তা নতুন করে বলার আর কিছুই নেই। তার ওপর যদি পুরুষ সহযাত্রীর রোষানলে পড়ে তাহলে তো ষোলোকলা পূণর্ হয়। অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত নারীদের কমর্স্থল অনেকটা শোভন এবং শালীন। কিন্তু নিমার্ণশ্রমিক থেকে শুরু করে পোশাকশিল্পে নিয়োজিত নারী পেশাজীবীদের জীবন যে কত দুবির্ষহ এবং সমস্যায় আবতির্ত তা বলে শেষ করা যায় না। পুরুষ সহকমীর্র কটূক্তি, অশালীন ব্যবহার তার চেয়েও বেশি প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চনার শিকার হওয়া সব মিলিয়ে এক অসহনীয় অবস্থায় পড়ে নারী শ্রমিকরা। মজুরির বেলায়ও হয় চরম বৈষম্য। তার ওপর আছে শিল্প-কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যার সরাসরি প্রভাবে আক্রান্ত হয় নারীরাই বেশি। সেনিটেশন সমস্যা এসব গতরখাটা প্রতিষ্ঠানের নিত্য-নৈমিত্তিক দুঃসহ যন্ত্রণা। নারীদের জন্য উপযোগী এবং স্বাস্থ্যসম্মত কোনো ওয়াশরুমও থাকে না, যেখানে তারা প্রয়োজনীয় সংকট নিরসন করতে পারে। নিম্ন কমর্জীবী নারী শ্রমিকরা তাদের বক্তব্যে কারখানার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করার দায়ভাগ চাপায় পুরুষ সহকমীের্দর ওপর। তাদের উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য এমনকি অনেক সময় শারীরিকিভাবেও নিগৃহীত হতে হয় পুরুষ সহকমীর্র কাছ থেকে। কমের্ক্ষত্রে নারীরা যদি নিশ্চিন্তে, নিবিের্ঘœ তাদের ভ‚মিকা পালনে ব্যথর্ হয় তাহলে উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন গতিধারায় তার প্রভাব দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে না। অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে নারীরা তাদের পেশাগত জীবনকে যেন সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে যথাযথ নজর দিতে হবে। কমর্স্থলের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন হওয়া একান্ত আবশ্যক। তা ছাড়া হোস্টেলগুলোর সুযোগ-সুবিধা প্রচারের জন্য পোস্টারে ও বিজ্ঞাপনে কমর্জীবী নারী হোস্টেলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই। এসব হোস্টেলের মালিকরা দু-তিনজন থাকতে পারে এমন রুম পঁাচ-ছয়জনকে ভাড়া দেন। একটি ঘরকে হাডের্বাডর্ দিয়ে একাধিক কামরায় বিভক্ত করা হয়। চার-পঁাচটা কক্ষের জন্য বরাদ্দ মাত্র একটি টয়লেট। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। অনেক সময় লাইনে পানি পযর্ন্ত থাকে না। প্রতিবাদ করতে গেলে হোস্টেল ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেয়া হয়। আর যখন-তখন ভাড়া বাড়ানো তো নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা বাড়ে না। সরকারি-বেসরকারি হোস্টেলে জায়গা না পেয়ে অনেক কমর্জীবী নারী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে সাবলেটে থাকেন। একা একজন মেয়েকে কেউই বাসাভাড়া দিতে চান না। তাই বাধ্য হয়েই তাদের খুঁজতে হয় সাবলেট। কমর্জীবী নারীরা সাবলেট থাকেন তাদের পরিচিত পরিবারে। এর জন্য গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। তার পরও তারা রান্নাবান্না, সময় মতো গোসলসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে উটকো বিড়ম্বনা তো আছেই। এমন সব সমস্যা আর প্রতিবন্ধকতার কারণে কমর্জীবী নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। দেশে যেহেতু এখন কমর্জীবী মহিলা ও ভাসিির্ট, কলেজে পড়ুয়া মেয়েদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে সেহেতু এখন আমাদের দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের থাকার জন্য হোস্টেল নিমার্ণ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। তবে সে হোস্টেলগুলো অবশ্যই হতে হবে মানসম্মত ও নিরাপত্তাবেষ্টিত। যেখানে সারাদিন মহিলারা কাজ করে এসে একটু আরাম-আয়াসে জীবনযাপন করতে পারে। ছাত্রীরা রাতের বেলায় নিশ্চিন্তায় লেখাপড়া করতে পারে। মহিলাদের থাকার জন্য আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে না পারলে কমের্ক্ষত্রে তাদের কাছ থেকে আমরা আসানুরূপ কমের্র আশা করতে পারব না। কমর্জীবী মহিলাদের থাকার জন্য নিমার্ণ করতে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। মো. ওসমান গনি: কলাম লেখক মধহরঢ়ৎবংং@ুধযড়ড়.পড়স