রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

চুক্তির যথাযথ প্রতিফলন ঘটুক

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ আশ্রিত রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আন্তজাির্তকভাবে আলোচিত। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদসহ বৈশ্বিক নানান সভা ও সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংকটের আশু সমাধানের বিষয়ে আন্তজাির্তক সম্প্রদায়কে জোরালো ভ‚মিকা রাখতে এগিয়ে আসারও আহŸান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সেদেশের সেনাবাহিনীর হাতে নিযাির্তত-নিপীড়িত হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ তাদের আশ্রয়ও দেয়। আন্তজাির্তক চাপের মুখে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে মিয়ানমার। ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটানর্ অব ডিসপ্লেসড পাসর্ন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীষর্ক চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিয়ানমার চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করেনি। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। বিষয়টিকে বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করছেন। তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়াকিংর্ গ্রæপের তৃতীয় বৈঠকে গত মঙ্গলবার এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আন্তজাির্তক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এই প্রথম প্রত্যাবাসন শুরুর একটি নিদির্ষ্ট সময় নিধার্রণ করা হলো। অস্বীকারের সুযোগ নেই, এই প্রত্যাবাসন একটি ‘জটিল প্রক্রিয়া’। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ থাকলে এ সংকটের শান্তিপূণর্ সমাধানও অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শ বাংলাদেশ সেভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও সরকার সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকেও স্পষ্ট, বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অত্যন্ত নমনীয়তা ও সমঝোতার মনোভাব প্রদশর্ন করে আসছে। সরকারের উদ্দেশ্য যাতে দ্রততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়। জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় গত ফেব্রæয়ারিতে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম তালিকায় ১৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার ২ জন রোহিঙ্গার নাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই তালিকা যাচাই করে মিয়ানমার তাদের স্বীকার করে নিয়েছে, গত অক্টোবরে এমন তথ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগের চুক্তি মোতাবেক মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না করায় এক ধরনের আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছিল। তবে এবারের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাবাদের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, গত কয়েক দশকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিলিয়ে মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী আপাতত শুধু নতুন আসা শরণাথীের্দর প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, মিয়ানমার প্রতিদিন তিনশ করে রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছিল। অথচ ঘটেছে তার উল্টোটি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না করে মিয়ানমার নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয়। দেশটি বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেয়ারও অপচেষ্টা করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তাদের ভ‚খÐের মানচিত্রের রঙে বাংলাদেশের সেন্ট মাটির্ন দ্বীপকে দেখিয়েছে। ফলে সাবির্ক প্রেক্ষাপটে এমন প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া অসঙ্গত নয় যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার টালবাহানা শুরু করেছে কিনা? বলাই বাহুল্য, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পকের্ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের অজানা নয়। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নে সেদেশের সেনাবাহিনীর ভ‚মিকা যাতে বাধা হয়ে না দঁাড়ায়, সেদিকেও আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের নজর দেয়া জরুরি বলেও বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। নানান আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয়েছে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে বিপদ মাথায় নিয়ে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে অস্বীকার করতে পারে। সেদেশে গিয়ে পুনরায় নিগৃহীত হলে তারা আবারও বাংলাদেশ আশ্রয় নেবে। সুতরাং ফিরে যাওয়া শেষ কথা নয়, নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের নাগরিকতা প্রদানের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূণর্। আমরা বলতে চাই, যেহেতু নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে এমন আশাবাদের কথা জানা যাচ্ছে, তখন মিয়ানমার সরকার যাতে কোনো অজুহাতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি না করতে পারে, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সজাগ থাকা সমীচীন।