নবম-দশম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

আতাউর রহমান সায়েম, সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
আজ তোমাদের জন্য অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করা হলো জীবন-সঙ্গীত ২। 'আয়ু যেন শৈবালের নীর' বলতে কী বোঝানো হয়েছে? উত্তর: 'আয়ু যেন শৈবালের নীর' বলতে আয়ু শৈবালের শিশিরের মতোই ক্ষণস্থায়ী তা বোঝানো হয়েছে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এই সময়ের স্রোতে মানুষের আয়ুও দ্রম্নতই ফুরিয়ে যায়। শৈবালের ওপর জমে থাকা শিশিরের চিহ্নের স্থায়িত্ব খুবই সামান্য। মানুষের জীবনও তাই। মানুষের জীবনের এই ক্ষণস্থায়িত্ব বোঝাতেই কবি আয়ুকে শৈবালের শিশিরের সাথে তুলনা করেছেন। ৩। 'স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে'বলতে কী বোঝানো হয়েছে? উত্তর: 'স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে' বলতে নিজ নিজ মহৎ কর্মকে পতাকা হিসেবে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে। পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয় তার মহৎ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে। যুগে যুগে মহামানবরা তাঁদের কর্মগুণেই স্মরণীয় হয়েছেন। শ্রদ্ধা ও সম্মানের আসন লাভ করেছেন। তাই কবি শুভকর্ম সম্পাদন এবং তাকে ধারণ করেই এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ৪। কবি 'বৃথা জন্ম এ সংসারে' বলতে নিষেধ করেছেন কেন? উত্তর: মানবজীবন অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় কবি 'বৃথা জন্ম এ সংসারে' কথাটি বলতে নিষেধ করেছেন। মানুষের জীবন একটাই। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমাদের স্মরণীয়-বরণীয় হওয়ার জন্য কাজ করে যেতে হবে। কেননা এই জীবন শেষ হয়ে গেলে আর নতুন জীবন পাওয়া যাবে না। ফলে ক্ষুদ্র এই জীবনে মানব-জনম বৃথা এ কথা বলে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। তাই কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলতে নিষেধ করেছেন। ৫। কবি অতীত সুখের দিন চিন্তা করে কাতর হতে নিষেধ করেছেন কেন? উত্তর:অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে বর্তমানের কাজ ব্যাহত হয় বলে কবি অতীত সুখের দিন চিন্তা করে কাতর হতে নিষেধ করেছেন। অতীত কখনও ফিরে আসে না। তাই অতীত নিয়ে চিন্তা করে বৃথা সময় অপচয় করে লাভ নেই। বরং বর্তমানে সময়কে কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য অর্জনে এগিয়ে গেলে সফল হওয়া যায়। আর অতীতের সুখের কথা চিন্তা করলে শুধু হতাশাই বাড়ে। তাই কবি অতীত সুখের দিন চিন্তা করে কাতর হতে নিষেধ করেছেন। \হ ৬। কবি বাহ্যদৃশ্যে ভুলতে নিষেধ করেছেন কেন? উত্তর :বাইরের জগতের চাকচিক্য জীবনের প্রকৃত রূপ এ উদ্দেশ্যকে ধারণ করে না বলে কবি বাহ্যদৃশ্যে ভুলতে নিষেধ করেছেন। মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে সংসারে নিজের কাজে রত থেকে মহাজ্ঞানীদের দেখানো পথে এগোতে হবে। পৃথিবীর চাকচিক্যময় রূপে ভুলে বৃথা সময় নষ্ট করে স্মরণীয় বরণীয় হওয়া যায় না। তাই কবি বাহ্যদৃশ্যে ভুলতে নিষেধ করেছেন। ৭। আমাদের সংসারে সংসারী সাজতে হবে কেন? উত্তর: বৈরাগ্যে কোনো মুক্তি নেই বলে আমাদের সংসারে সংসারী সাজতে হবে। সংসার ত্যাগ করে বৈরাগ্য সাধন করেলে স্মরণীয় হওয়া যায় না। তাই সংসারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেই আমাদের মহাজ্ঞানীদের দেখানো পথে যেতে হবে। যেসব মহাজ্ঞানী স্মরণীয় হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে নিজের কাজে রত থেকেই বরণীয় হয়েছেন, বৈরাগ্যে নয়। তাই আমাদেরও সংসারে সংসারী হতে হবে। ৮। আমাদের ভবিষ্যতে নির্ভর করা ঠিক নয় কেন? উত্তর:মানুষের জীবন শৈবালের শিশিরের মতোই অনিশ্চিত এবং ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় আমাদের ভবিষ্যতে নির্ভর করা ঠিক নয়।মানুষের জীবন একটাই। এই জীবনে কখন মৃতু্য এসে হানা দেয় তা কেউ বলতে পারে না। ফলে সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। কোনো কাজ ভবিষ্যতের জন্য ফেলে রাখলে তা আর সম্পন্ন করা নাও হতে পারে। তাই আমাদের ভবিষ্যতে নির্ভর করা ঠিক নয়। ৯। কবি সংসারকে সমরাঙ্গন বলেছেন কেন? উত্তর: সংসারে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না সবই একসাথে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত নানান ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করতে হয় বলে কবি সংসারকে সমরাঙ্গন বলেছেন।মানুষ ক্ষণস্থায়ী জীবনে সংসার ধর্ম পালন করেতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই সমস্যা মোকাবেলায় মানুষকে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করতে হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসী সৈনিকদের মতো সংসারেও মানুষকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। তাই কবি সংসারকে সমরাঙ্গন বলেছেন। ১০। কবি আমাদের কীভাবে প্রাতঃস্মরণীয় হতে বলেছেন? উত্তর:কবি আমাদেরকে মহাজ্ঞানীদের পথ অনুসরণ করে প্রাতঃস্মরণীয় হতে বলেছেন। মহাজ্ঞানীরা সংসার সমরাঙ্গনে থেকেই নিজের লক্ষ্যে অটুট থেকেছেন। তাঁরা জীবনকে বৃথা ক্ষয় করেননি। মানুষের কল্যাণে কাজ করে হয়েছেন স্মরণীয়। কবি আমাদেরও স্বীয় লক্ষ্য অটুট রেখে সেই মহামানবদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রাতঃস্মরণীয় হতে বলেছেন। ১১। কবি 'তুমি কার কে তোমার' বলে কাঁদতে নিষেধ করেছেন কেন? উত্তর:পৃথিবীতে কেউ কারো নয়- ঠিক না বলে কবি আলোচ্য কথাটি বলতে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। সংসার সমরাঙ্গনে সুখ-দুঃখ আসবেই। তাই বলে হতাশ হয়ে পড়ে থাকার যৌক্তিকতা নেই। মানবজন্ম বৃথা এবং মানব-সম্পর্ককে মূল্যহীন মনে করারও কোনো কারণ নেই। সংসারে স্ত্রী-পুত্র-পরিবারকে সময় দিয়েই স্মরণীয় হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বৈরাগ্যে মুক্তি নেই। আর জীবনের উদ্দেশ্যও তা নয়। তাই কবি 'তুমি কার কে তোমার' বলে কাঁদতে নিষেধ করেছেন।