প্রা ক তি ক প রি বে শ
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র
প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
আতাউর রহমান সায়েম সহকারী শিক্ষক, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
কপোতাক্ষ নদ
৩। 'আর কি হে হবে দেখা?' - কবির এই আক্ষেপের কারণ কী?
উত্তর : দূর পরবাসে থাকার কারণে কবির মনে শঙ্কা জেগেছে তার প্রিয় নদের সান্নিধ্য লাভ নিয়ে।
কবি সুদূর ফ্রান্সে বসে কপোতাক্ষ নদকে স্মরণ করে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি দূরে বসেও কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান। তিনি আবার তার ছোটবেলার স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের সাক্ষাৎ পেতে চান। কিন্তু দূরে থাকায় তার সংশয় হয় আর কখনো কপোতাক্ষ নদের কাছে ফিরে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে। তাই কবি প্রশ্নোক্ত আশঙ্কা করেছেন।
৪। 'ভ্রান্তির ছলনে' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : 'ভ্রান্তির ছলনে' বলতে কল্পনায় মানুষ যা ভাবে তার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই, তবুও কপোতাক্ষ নদের স্রোতধারার কথা কল্পনা করে কবির মানসিক প্রশান্তি লাভের কথা বোঝানো হয়েছে।
সুদূর ফ্রান্সে বসবাস করলেও মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভুলতে পারেননি তার প্রিয় কপোতাক্ষ নদের কথা। প্রতিনিয়তই তিনি নিভৃতে কল্পনা করেন সেই নদীর কলকল ধ্বনির কথা। কল্পনায় মানুষ যা ভাবে তার বেশির ভাগই বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। একই ভাবে কবির কল্পনাও আশাবাদে ঘেরা মিথ্যা এক মায়া মাত্র। কবি এ বিষয়টি জানেন। তবুও মনকে শান্ত করার জন্য বারবার কপোতাক্ষ নদের কথা ভাবেন তিনি।
৫। কবি সর্বদা কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করেন কেন?
উত্তর : কপোতাক্ষ নদের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকায় কবি সর্বদা এই নদের কথা মনে করেন।
'কপোতাক্ষ নদ' কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে। শৈশবে মধুসূদন এই
নদের তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাই নদটি যেন তার আত্মার সাথে মিশে গেছে। সুদূর ফ্রান্সে অবস্থান করেও তিনি যেন এই নদের কলকল শব্দ শুনতে পান। জন্মভূমির এই নদ যেন কবিকে মায়ের স্নেহভারে বেঁধেছে। তাই তিনি কপোতাক্ষ নদের কথা ভুলতে পারেন না।
৬। 'কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?'- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : কপোতাক্ষ নদের সান্নিধ্যে থেকে কবি যে স্নেহ-মমতার স্বাদ পেয়েছেন তা অনন্য- এ কথাটিই উঠে এসেছে আলোচ্য উক্তিটিতে।
কপোতাক্ষ নদের পাড়ে মধুসূদন দত্তের আনন্দমুখর শৈশব-কৈশোর কেটেছে। নদের প্রাকৃতিক পরিবেশ কবিকে যেন মায়ের মমতায় বেঁধেছে। প্রবাসে গিয়ে কবি অনেক নদ-নদীর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার কোনোটিকেই কপোতাক্ষ নদের মতো প্রশান্তিময় বলে মনে হয়নি তার। তাই তিনি কবিতায় আলোচ্য প্রশ্নটি করেছেন।
৭। কবি কপোতাক্ষ নদকে প্রজা হিসেবে জ্ঞান করেছেন কেন?
উত্তর : কপোতাক্ষ নদ সাগরকে কর হিসেবে পানি দেয়- এই বিবেচনায় কবি কপোতাক্ষ নদকে প্রজা বিবেচনা করেছেন।
প্রজাদের কাছ থেকে রাজা কর বা রাজস্ব আদায় করে থাকেন। 'কপোতাক্ষ নদ' কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরকে চিত্রিত করেছেন রাজা হিসেবে। সব নদীর পানি এসে একসময় সাগরে মেশে। কপোতাক্ষ নদের পানিও তেমনি প্রতিনিয়ত সাগরের সাথে মিশে যায়। এই পানি যেন সে সাগরকে কর বা রাজস্ব হিসেবেই দেয়। এ কারণেই কবি কপোতাক্ষ নদকে প্রজা বলে অভিহিত করেছেন।
৮। কবি কপোতাক্ষ নদের কাছে মিনতি করেছেন কেন?
উত্তর : স্বদেশের জন্য কবির কাতরতাকে স্বদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কবি কপোতাক্ষ নদের কাছে মিনতি করেছেন। স্বদেশকে গভীরভাবে ভালোবাসেন 'কপোতাক্ষ নদ' কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কবিতায় স্মৃতিকাতরতার আড়ালে লুকিয়ে আছে তার স্বদেশপ্রেমের প্রবল অনুরাগ। প্রবাসে থাকলেও স্বদেশের জন্য তার মন প্রতিনিয়ত কাঁদে।
স্বদেশের মানুষের মনে তিনি তার স্মৃতিকে অক্ষয় করে রাখতে চান। এ কারণেই কপোতাক্ষ নদের কাছে তার কাতর মিনতি তার হৃদয়ের এই ভাবোচ্ছ্বাস কপোতাক্ষ নদ যেন দেশের মানুষের কাছে ব্যক্ত করে।