ষষ্ঠ অধ্যায়
৪। রায়হান সাহেব দীর্ঘদিন চাকরি সূত্রে মালয়েশিয়ায় ছিলেন। কিছুদিন হলো তিনি দেশে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। তিনি লক্ষ্য করেন তার গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের কিশোর তরুণরা স্কুল-কলেজে যায় না, বেকার ও অলস সময় কাটায়, শিশু মৃতু্যর হারও অত্যধিক। তিনি গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।
ক) ২০১১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত ছিল?
খ) 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্পটি কী উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ) রায়হান সাহেবের নেওয়া উদ্যোগ দেশে যে ধরনের সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়কতা ব্যাখ্যা করো।
ঘ) উদ্দীপকে উলিস্নখিত উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর :
ক) ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন।
খ) 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্পটি দেশের প্রতিটি পরিবারকে মানব ও অর্থনৈতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই আর্থিক কার্যক্রমের একক হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য দেশব্যাপী 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো প্রকল্পাধীন সব গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে কৃষি, মৎস্য চাষ, পশু পালন ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে একটি কার্যকর খামার বাড়ি হিসেবে গড়ে তোলা।
গ) রায়হান সাহেবের নেওয়া উদ্যোগ দেশে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়ক। মানুষ তখনই সমাজের বা দেশের সম্পদে পরিণত হয়, যখন সে কিছু করতে পারে। তাই শ্রম শক্তিসম্পন্ন মানুষকেই দেশের মানব সম্পদ বলা যায়। প্রতিটি অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ মানুষকে যথাসম্ভব শ্রমশক্তি সম্পন্ন বা মানব সম্পদে পরিণত করা হচ্ছে মানব সম্পদের উন্নয়ন। যারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে, কর্মসংস্থানে নিজের চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে তারাই মূলত মানব সম্পদ। অদক্ষ মানুষ দেশের বোঝা, তারা দেশে বেকার সমস্যার সৃষ্টি করে। কোনো অদক্ষ মানুষ নয়, কেবল দক্ষ মানুষই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। উদ্দীপকে দেখা যায়, রায়হান সাহেব গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় গ্রামের বেকার ও অদক্ষ তরুণদের জন্য এলাকায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।
তাই বলা যায়, রায়হান সাহেবের নেওয়া উদ্যোগ দেশে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে এবং দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে।
ঘ) উদ্দীপকে উলিস্নখিত উন্নয়ন সূচকে শিক্ষা, বেকারত্বের হার, কর্মহীন ও সামাজিকভাবে অসহায় হত-দরিদ্রদের হার ও শিশু মৃতু্যর হার বিষয়গুলো বর্ণিত হয়েছে। ২০১৪ সালে ঐঁসধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ জবঢ়ড়ৎঃ মোতাবেক ২০১৩ সালে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম, যা ২০১২ সালে ছিল ১৪৩তম। সরকার শিক্ষার সব স্তরে গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়নসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যদিও ২০০০ সালে বেকারত্বের হার ছিল ৩.৩%, ২০০৫ সালে সেটি বেড়ে ৪.৩%-এ পৌঁছেছে। সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়তে নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া সরকার স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় প্রজনন হার ও মৃতু্যর হার কমেছে, নবজাতক শিশু ও মাতৃমৃতু্য হার উলেস্নখযোগ্য হারে কমেছে। তাই সরকার জাতিসংঘ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। পরিশেষে বলা যায়, উলিস্নখিত সূচকের বিষয়গুলোসহ নানা কর্মসূচি সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
৫। আরিফ পড়ালেখা শেষ করে চাকরি নিয়ে কানাডাতে চলে যায়। সে প্রতিমাসে পরিবারের জন্য দেশে টাকা পাঠায়, যা পরিবারের খরচ বহন করার পর দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়।
ক) এউচ-এর পূর্ণ রূপ কী?
খ) বাংলাদেশের উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য ব্যাখ্যা করো।
গ) আরিফের কানাডা থেকে পাঠানো অর্থের ধরন ব্যাখ্যা করো।
ঘ) মানব সম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরিফের গৃহীত পদক্ষেপটি কী একমাত্র উপায়? মতামত দাও।
উত্তর :
ক) এউচ-এর পূর্ণ রূপ হলো এৎড়ংং উড়সবংঃরপ চৎড়ফঁপঃ বা মোট দেশজ উৎপাদন।
খ) বাংলাদেশের উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা। দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদন বাড়লে নাগরিকদের জীবনযাত্রার ওপর তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা হলে তা প্রবৃদ্ধির সূচকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
গ) কানাডা থেকে আরিফের পাঠানো অর্থ হলো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। বিদেশে কর্মরত নাগরিকদের স্বদেশে প্রেরিত অর্থকে রেমিট্যান্স বলে। প্রবাসী শ্রমিক, কর্মচারী পেশাজীবীরা তাদের অর্জিত অর্থের একটা অংশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠান। এই অর্থ পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি করছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হওয়ার ফলে তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের একটা বড় অংশ আসে রেমিট্যান্স থেকে। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮ম। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ছিল ১২,২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। উদ্দীপকের আরিফ একজন প্রবাসী। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি নিয়ে তিনি কানাডায় যান। প্রতিমাসে আরিফ দেশে যে টাকা পাঠায় তাই রেমিট্যান্স। এই অর্থ পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও অবদান রাখে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়