এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি

সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্র

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক অধ্যয়ন শুরু করেনÑ

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর অধ্যায়-১ আয়েশা এবছর চট্টগ্রামের একটি মহিলা কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনাসর্ প্রথম বষের্ ভতির্ হয়েছে। প্রথম ক্লাসে সে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অধ্যাপক নাজমুল করিমের নাম জানতে পারে। এই অধ্যাপক অগ্রণী ভ‚মিকা নিয়ে ১৯৫৭ সালে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। জ্ঞানের একটি বিকাশমান শাখা হিসেবে পরবতীর্ সময়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। প্রশ্ন: ঘ. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের দীঘর্ ইতিহাস রয়েছেÑ কথাটির যথাথর্তা নিরূপণ কর। উত্তর-ঘ: বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানচচার্র দীঘর্ ইতিহাস রয়েছে। অবিভক্ত বাংলায় কৌটিল্যের অথর্শাস্ত্র, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী প্রভৃতি গ্রন্থ সমাজবিজ্ঞানচচার্র পটভ‚মি রচিত করে। গ্রন্থগুলোতে তারা তৎকালীন বাঙালি সমাজের আথর্-সামাজিক বিভিন্ন বিষয় সম্পকের্ আলোচনা করেন। ১৮৩৯ সালে ফরাসি দাশির্নক অগাস্ট কেঁাতের হাত ধরে জ্ঞানের রাজ্যে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অবিভক্ত বাংলায় প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক একে নাজমুল করিমের সাবির্ক প্রচেষ্টায় ও ইউনেসকোর সহযোগিতায় ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। পরবতীর্ সময়ে ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। বতর্মানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজেও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। অধ্যাপক নাজমুল করিমের হাত ধরেই বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের আনুষ্ঠানিক অধ্যয়ন শুরু হয়। তার পরে অধ্যাপক এফআর খান, অধ্যাপক আফসার উদ্দিন, ড. রঙ্গলাল সেন, ড. অনুপম সেন, ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রকে আরও গতিশীল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এটি একটি পূণার্ঙ্গ বিভাগ হিসেবে মযার্দা লাভ করে। ওপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের দীঘর্ ইতিহাস রয়েছে। অধ্যায়-৪ গত বছর সুপ্রিয়ার বিয়ে হয়। সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর থেকে বরকে নিয়ে তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করছে। সুপ্রিয়া পরিবারের ছোট মেয়ে হওয়ায় সব সম্পত্তির মালিক হয়েছে। অন্যদিকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী হ্যাপি বিয়ের পর তার বরের বাড়িতে বসবাস করছে। বিয়ের পর তার বর তাকে রাখার জন্য একটি নতুন ঘর নিমার্ণ করেছে। এ বছর হ্যাপি তাদের বিজু উৎসবে সুপ্রিয়া ও তার বরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রশ্ন: ক. খাসিয়াদের মধ্যে কয়টি গোত্র রয়েছে? প্রশ্ন: খ. মণিপুরি নৃত্যের সামাজিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর। প্রশ্ন: গ. হ্যাপি বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য? প্রশ্ন: ঘ. ‘সুপ্রিয়ার সমাজের পরিবারব্যবস্থা হ্যাপির সমাজের পরিবারব্যবস্থা থেকে ভিন্ন’ কথাটির যথাথর্তা প্রমাণ কর। উত্তর-ক: খাসিয়াদের মধ্যে ছয়টি গোত্র রয়েছে। উত্তর-খ: মণিপুরি নৃত্য মণিপুরি সমাজে বিশেষ ধরনের নৃত্য। নৃত্যের কারণে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে। তাই তারা এই নৃত্যকে খুব পবিত্র মনে করে। ফলে তারা সব পূজা-পাবর্ণ ও আচার-অনুষ্ঠানে এই নৃত্যের আয়োজন করে থাকে। ধমীর্য় বিশ্বাস থেকে এই নৃত্য তাদের কাছে গুরুত্বপূণর্। উত্তর-গ: হ্যাপি চাকমা নৃগোষ্ঠীর সদস্য। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চাকমা অন্যতম। জনসংখ্যার দিক থেকে তারা বৃহৎ। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় তাদের বসবাস। চাকমা সমাজে পিতৃবাস পরিবারব্যবস্থা বিদ্যমান। বিয়ের পর বরকে বাবার বাড়িতে নতুন ঘর তৈরি করে স্ত্রীকে রাখতে হয়। চাকমা সমাজে নানা রকম পূজা-পাবর্ণ, উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। তারা তিনদিন ধরে বিজু উৎসব পালন করে। বাংলা নববষর্ উপলক্ষে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালিত হয়। কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান হচ্ছে তাদের বড় ধমীর্য় অনুষ্ঠান। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, হ্যাপি বিয়ের পর তার বরের বাড়িতে বরের তৈরি নতুন ঘরে বসবাস করছে। তারা বিজু উৎসব উদ্যাপন করে। তাই সে চাকমা নৃগোষ্ঠীর সদস্য। উত্তর-ঘ: সুপ্রিয়া বাংলাদেশের গারো নৃগোষ্ঠীর সদস্য। তারা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করে। গারো পরিবার মাতৃপ্রধান। মাতা পরিবারের প্রধান। একইভাবে মাতৃসূত্রীয় রীতি অনুযায়ী পরিবার পরিচালিত হয়। বংশমযার্দা ও উত্তরাধিকার রীতি মাতা থেকে মেয়েতে বতার্য়। পরিবারের কনিষ্ঠ মেয়ে মায়ের সব সম্পত্তি পেয়ে থাকে। যে সম্পত্তি পায় তাকে ‘নোকনা’ বলা হয়। নোকনা তার স্বামীকে নিয়ে স্থায়ীভাবে মায়ের বাড়িতে থাকে। যেহেতু সে পরিবারের সম্পত্তি পাবে, তাই সে বৃদ্ধকালে মা-বাবার সেবাযতœ করতে বাধ্য। গারো সমাজে মনোগামী তথা যুগল বিবাহ রীতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাদের সমাজে ক্রস কাজিন বিবাহ বা মামাতো ও ফুফাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহ অনুমোদিত হলেও প্যারালাল কাজিন বিবাহ বা খালাতো ও চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে চাকমা সমাজে পিতৃপ্রধান পরিবার বিদ্যমান। পিতৃসূত্রীয় রীতি অনুযায়ী বাবা থেকে সম্পত্তি ও বংশমযার্দা ছেলেতে বতার্য়। মেয়েরা বাবার সম্পত্তির মালিক হয় না। বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে পরিচিতি পায়। চাকমা সমাজে চাচাতো, খালাতো ও মামাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিয়ে হয়। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে গারো ও চাকমা সমাজে পরিবারব্যবস্থার মধ্যে ভিন্নতা বিদ্যমান। অধ্যায়-৫ মুনিরের দাদা স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ছাত্রনেতা ছিলেন এবং একজন মহান নেতার ঐতিহাসিক ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অবসর সময়ে তিনি তাকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের গল্প শোনাতেন। একদিন ছাত্র-জনতার দুবার্র এক আন্দোলনের বিষয়ে বললেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সে আন্দোলনে তাদের সহপাঠী আসাদুজ্জামান আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অবশেষে জেনারেল আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। একই সঙ্গে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে মামলার প্রধান আসামি বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অগ্রদূতসহ জাতীয় নেতাদের মুক্তি দেয়া হয়। প্রশ্ন: ক. জাতীয়তাবাদ কী? প্রশ্ন: খ. ছয় দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন? প্রশ্ন: গ. মুনিরের দাদার বণর্নাকৃত আন্দোলনের সঙ্গে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আন্দোলনের মিল রয়েছে? প্রশ্ন: ঘ. বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে উদ্দীপকে নিদেির্শত মহান নেতার অবদান মূল্যায়ন কর। উত্তর-ক: জাতীয়তাবাদ বলতে এক ধরনের মানসিক ঐক্য বা চেতনাকে বোঝায়, যার দ্বারা কোনো জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে সংহতি অনুভব করে। এর ভিত্তিতে তারা একত্রে বসবাস করার অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে। ভাষা, ধমর্, সংস্কৃতি, আঞ্চলিকতা, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠে।