পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান

প্রকাশ | ১২ মে ২০২৩, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
নবম অধ্যায় প্রশ্ন : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য ব্যাখ্যা করো। উত্তর : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গভীরভাবে সম্পর্কিত হলেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পার্থক্যগুলো হলো- বিজ্ঞান (১) বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা। (২) বিজ্ঞান হলো আবিষ্কারের তাত্ত্বিকরূপ। (৩) বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে প্রকৃতির নিয়মগুলো জানা যায়। (৪) বিজ্ঞান আমাদের জ্ঞান দেয়। প্রযুক্তি (১) বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করাই হলো প্রযুক্তি। (২) প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের ব্যবহারিক রূপ। (৩) প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করা যায়। (৪) প্রযুক্তি আমাদের বাস্তব সমস্যার সমাধান দেয়। প্রশ্ন : কৃষিপ্রযুক্তি কীভাবে আমাদের জীবনমান উন্নত করে? উত্তর : কৃষিপ্রযুক্তি যেভাবে আমাদের জীবনমান উন্নত করে সেগুলো হলো- র. আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি মানুষকে স্বল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপাদনে সাহায্য করেছে। রর. রাসায়নিক সার উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে এবং অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে, যেটি মানুষকে স্বল্প সময়ে ফসল উঠিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান করছে। ররর. রাসায়নিক পদার্থ ফসলের ক্ষতিকারক পোকা ও আগাছা দমন করে অধিক খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে, যা মানুষের খাদ্য ঘাটতি দূর করছে। রা. জৈবপ্রযুক্তি মানুষকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ, পোকামাকড় প্রতিরোধী এবং অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদনে সহায়তা করছে। প্রশ্ন : প্রযুক্তি কীভাবে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে ব্যবহার করে? উত্তর : প্রযুক্তি হলো আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ। যেমন- বিজ্ঞানীরা বিদু্যৎ নিয়ে গবেষণা করে এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। আর এ বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন এবং বৈদু্যতিক বাতির মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেছে, যা কলকারখানা, রেলগাড়ি ও জাহাজ চালাতে ব্যবহৃত হয়। এভাবে প্রযুক্তি বিভিন্ন পণ্য এবং যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে। প্রশ্ন : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও তারা কীভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ব্যাখ্যা করো। উত্তর : প্রাচীনকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয় ভিন্ন দুইটি লক্ষ্যে। বিজ্ঞানের ভিত্তি অনুসন্ধিৎসা, সরাসরি বাস্তব সমস্যার সমাধান ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে ছিল না। বিজ্ঞানের কাজ প্রকৃতির নিয়ম আবিষ্কার করা আর প্রযুক্তি কাজ করে প্রকৃতির বিভিন্ন নিয়ম অনুসারে। তাই সচেতনভাবে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে প্রকৃতির নিয়ম মানতে হয়। বিজ্ঞানী প্রকৃতির নিয়ম আবিষ্কার করেন। আর প্রযুক্তিবিদ ওই নিয়ম প্রয়োগ করে যন্ত্র উদ্ভাবন করেন ও বাস্তব সমস্যার সমাধান করেন। বিজ্ঞানীরা বিদু্যৎ ও আলোর মতো বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবিষ্কার করেন। অন্যদিকে প্রযুক্তিবিদরা ওই জ্ঞানকে কৃষি, শিল্প-কারখানা, পরিবহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। আবার বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সময়ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। যেমন- খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র বস্তু অনুসন্ধানে তারা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করেন। তাই বলা যায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। প্রশ্ন : প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা পাঁচটি বাক্যে লেখো। উত্তর : প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। নিচে তা পাঁচটি বাক্যে লেখা হলো : ১. যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট, ই-মেইল, রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফ্যাক্স ইত্যাদি প্রযুক্তি বিপস্নব সাধন করেছে। ২. প্রযুক্তির ফলে আমরা সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, পানিশক্তি ব্যবহার করতে পারি। ৩. যন্ত্র ও কলকারখানা মানুষের দৈহিক শ্রম লাঘব করেছে। ৪. চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন হৃদপিন্ড ও কিডনি স্থানান্তর সম্ভব। ৫. আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি) পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন : প্রযুক্তির বিকাশ কেন ঘটে? বিজ্ঞানের অপব্যবহারের ৪টি উদাহরণ লেখো। উত্তর : প্রযুক্তির বিকাশ সাধারণত সভ্যতার অগ্রগতির সাথে ঘটে এবং প্রয়োজনবোধে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবিত হয়। সুতরাং প্রয়োজনবোধে প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মূল কারণ। বিজ্ঞানের অপব্যবহারের ৪টি উদাহরণ : ১. গাড়ি হতে নির্গত গ্যাস ও ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করছে। ২. জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক পানিতে মিশে জলজ পরিবেশ ধ্বংস করছে। ৩. রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তৈরি করতে গিয়ে বনভূমি নষ্ট করা হচ্ছে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। ৪. বিভিন্ন যুদ্ধে অস্ত্রের ভয়াবহ প্রয়োগের ফলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হচ্ছে। প্রশ্ন : বর্তমান সময়ে খেলার মাঠে আর ছেলেমেয়েদের দেখা যায় না। এর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি কতটা দায়ী বলে তুমি মনে করো ব্যাখ্যা করো। উত্তর : আধুনিক প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে বর্তমান সময়ে খেলার মাঠে আর ছেলেমেয়েদের দেখা যায় না। আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান হলো- কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি। অনেক সময় এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার নেশায় পরিণত হয়। ভালো কাজে যদি এগুলোর ব্যবহার করা না হয় তাহলে তা সময়ের অপচয় ঘটায়, নিয়মিত খেলাধুলা, ব্যায়াম ও মুক্তচিন্তার পথে বাধা সৃষ্টি করে। বর্তমানে উঠতি বয়সের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা খেলার মাঠের চেয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনে গেম খেলতে আগ্রহী। বিরতিহীনভাবে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে বিরক্তবোধ করে না। ফলে তারা হয়ে ওঠে অলস, পরিশ্রম ও কায়িকশ্রম সংশ্লিষ্ট খেলাধুলা বিমুখ। তাই বর্তমান সময়ে খেলার মাঠে যে ছেলেমেয়েদের দেখা যায় না এর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি অনেকাংশে দায়ী বলে আমি মনে করি। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়